খেলাধুলা ডেস্ক: চ্যাম্পিয়ন ও তারকায় ঠাসা ঢাকা ডায়নামাইটসের শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম ম্যাচে নাসিরের স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্সের কাছে ধরাশায়ী সাকিবের দল। কি করবে মাশরাফির রংপুর রাইডার্স? ড্যারেন স্যামির উজ্জীবিত নেতৃত্বে আর নিষ্ঠা ও একাগ্রতার প্রতীক মুশফিকুর রহীমের রাজশাহীও নাসিরের সিলেট সিক্সার্সের মত চমক দেখাবে?
রংপুর সমর্থকরা একটু সংশয় আর চিন্তা মাথায় নিয়েই শনিবার রাতে খেলা দেখতে টিভির সামনে বসেছিলেন। পাশাপাশি দেশজুড়ে অগণিত মাশরাফি ভক্তর মনেও একটা সংশয় কাটার মত বিধছিল। আগেরবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে সময় ভালো কাটেনি ‘গুরুর’(ভক্তদের বড় অংশ তাকে এই নামেই ডাকে এখন)। শেষ আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে একটা মনোমালিন্য ছিল। মত, পার্থক্য, মত দ্বন্দ্ব এমনকি মানসিক দূরত্বও তৈরি হয়েছিল।
এবার শুরুতে রংপুর সাপোর্টার আর মাশরাফি ভক্ত, দুপক্ষই স্বস্তিতে। মাশরাফির ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি। চ্যাম্পিয়নদের মত হার দিয়ে শুরু হয়নি যাত্রা। মাশরাফির রংপুর শুভ সূচনাই করেছে। কেমন লাগছে নতুন আসরে নতুন দলে খেলতে?
খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন উঠতেই মাশরাফির পেশাদার জবাব, ‘আসলে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহর রহমতে যেখানেই খেলেছি কমফোর্টেবল ছিলাম। আছিও। পেশাদার প্লেয়ার হিসেবে সব সময় যতটুকু দরকার চেষ্টা কররেছি, এখনো করছি। আমাদের সব হাউজেই মানিয়ে নিতে হয়। এখানে (রংপুরে) শুরু থেকেই পরিবেশ বেশ ভালো। এটা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে ভালো হবে। যেটা হয় তাহলো, টিমের পরিবেশ ভালো থাকলে রেজাল্টও পজেটিভ হয়। ভালো করার ইচ্ছেটা প্রবল হয়। ভেতর থেকে ভালো করার একটা সংকল্প তৈরি হয়। অনেক অ্যাভারেজ প্লেয়ারের পারফরমেন্সও তখন টপে চলে আসে।’
টাগেট খুব ছোট ও সহজ ছিল না। তারওপর ১৫৫ করতে গিয়ে ১৫ রানেই দুই ওপেনার সাজঘরে। সেখান থেকে ৯.২ ওভারে ৭৫ রান। ১৫ রানে ২ উইকেট পতনের পর। সেখান থেকে মোহাম্মদ মিঠুন আর শাহরিয়ার নাফীসের ৭৫ রানের জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠা। খালি চোখে যদিও ঐ দুজনার অ্যাপ্রোচ একটু মন্থর মনে হয়েছে। কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফির ধারণা, ঐ জুটিটাই আসলে তার দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছে।
খেলা শেষে খানিক প্রশান্তি নিয়ে মাশরাফির ব্যাখ্যা, ‘আসলে শুরুতে অল্প সময় ও সংগ্রহে দুটি উইকেট পরে যাবার পর একটা জুটির কিছু সময় উইকেটে থাকা দরকার ছিল। টি-টোয়েন্টিতে হাতে উইকেট থাকলে শেষ ১০ ওভারে ৮০-৯০ করা যায় খুব সহজজেই। মিঠুন আর শাহরিয়ার নাফীস যেটা বিশ্বাস করতে চেয়েছিল আমরা তাতে বাধা দেইনি। ঐ সময় ওদের পার্টনারশিপটা আমাদের খেলায় ফিরিয়ে এনেছে। অবশ্যই শেষ দিকে রবি বোপারার ইনিংসটা স্পেশাল ছিল।’
দ. আফ্রিকা সফরে বোলিং ভাল হয়নি। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২৭.৫ ওভার বল করে ২০১ রান দিয়ে একটি উইকেটও পাননি। তারপর ঘরের মাঠে বিপিএল খেলতে নেমে ৪ ওভারের স্পেলে ১৮ রানে এক উইকেট একটি মেডেনও পাওয়া। কি অন্য রকম স্বস্তির? এ অনুভূতি কেমন ?
মাশরাফির চোয়াল শক্ত করা জবাব, ‘আসলে পেশাদার প্লেয়ার হিসেবে আমাদের কাজ সামনে আগানোর চিন্তা করা। পেছনের কথা ভেবে বসে থাকলে চলবে না। সামনে দিন খারাপ হচ্ছে। আবার পরের দিন ভালো করতে হবে। এই মানসিকতা নিয়েই চলতে হবে। মানুষের জীবন খারাপ-ভালোর মধ্যে দিয়ে চলে। এটা বড় কিছু নয়। আসল কথা হলো আমার ফোকাসটা কেমন আছে ? যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি কি করতে চাই? তা করতে পারি কি না? সেটাই মূল।’
প্রথম ম্যাচে একটি উইকেট, পাশাপাশি একটি মেডেন ওভারও পেয়েছেন। রাজশাহী ইনিংসের তৃতীয় আর নিজের দ্বিতীয় ওভারে ছয় বলে কোন রান দেননি রংপুর অধিনায়ক। তার ঐ ওভারের চার বলে স্ট্রাইকে ছিলেন রাজশাহী টপ স্কোরার এবং লাসিথ মালিঙ্গা ও থিসারা পেরেরার মত বোলকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে অবলীলায় উড়িয়ে ছক্কা হাকানো রনি তালুকদার। ব্যাট থেকে একটি রানও করতে পারেননি রনি। মাশরাফির চার নম্বর ডেলিভারিতে রনির প্যাডে লেগে একটি সিঙ্গেলস আসে। আর শেষ দুই বল ফেস করেন লুক রাইটের মত হার্ডহিটার। তিনিও রান নিতে পারেননি। এভাবেই এবারে বিপিএলে প্রথম মেডেন ওভার পান মাশরাফি।
যদিও পরের স্পেলে মাশরাফির স্লো কাটারে বোল্ড হয়েছেন রনি। খেলার চালচিত্র অনুযায়ী রনিকে থামানোটাও ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই খেলঅ শেষে প্রশ্ন উঠলো, রনি তালুকদারের উইকেট, না মেডেন ওভার? কোনটা বেশি উপভোগ করেছেন। কোনটা বেশি আনন্দের?
মাশরাফি কালবিলম্ব না করে জানিয়ে দিলেন, ‘আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মেডেন ওভারটা অনেক বেশি আনন্দের। অনেক উপভোগের।’