ডেস্ক রিপোর্ট: আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি মনে করেন, গত নির্বাচন বর্জন করলেও এবার দলের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে তাদের নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কম্বোডিয়া সফর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিকাল সাড়ে চারটার দিকে শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কম্বোডিয়া সফরের কর্মসূচি তুলে ধরার পর সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ পান। তবে প্রশ্নোত্তরে সফরের বিষয়বস্তুর চেয়ে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক অবস্থা, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এসবই গুরুত্ব পায় বেশি।এসময় ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, এটিএন বাংলার জ ই মামুন প্রমুখ তার কাছে জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কোনও উদ্যোগ নেবেন কিনা তা জানতে চান।
এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘তাদের নির্বাচনে আনতে কি বরণডালা পাঠাতে হবে? মনে হয়,বরণডালা পাঠাতে হবে।’ পরে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রত্যেক দলের কর্তব্য। যে দল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, দলে গণতন্ত্রের চর্চাও করে না, তারা নির্বাচনে আসবে কিনা সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের কিছু করার নাই। আমার এক কথা, আমি অপাত্রে ঘি ঢালি না।’ বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘কার সঙ্গে আলোচনা সেটা বলতে হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ওনাকে (খালেদা জিয়া) ফোন করে যে ঝাড়ি খেলাম, আর অপমানিত হওয়ার ইচ্ছা নাই। তারা নির্বাচন করবে কিনা সেটা তাদের বিষয়। তবে তারা এবার নাকে ক্ষত দিয়ে নির্বাচনে আসবে বলে মনে করি।’
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা যাওয়ার পরে সেখানে যাওয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি সমবেদনা জানাতে গেলাম। অথচ তারা তাও বুঝল না। যারা এতটুকু ভদ্রতা জানে না, তাদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা নাই আমার। আর যাই হোক, আমি তো একজন সরকার প্রধান। তারপরও দেশের স্বার্থে আমি সহ্য করেছি।’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় যে কোনও সময় নির্বাচন হয়। তবে আমরা কোনও দৈন্যদশায় পড়িনি যে আগাম নির্বাচন দিতে হবে। আমি চাই যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আমরা হাতে নিয়েছি, সেগুলো শেষ হোক। আমরা না থাকলে যে উন্নয়ন থমকে যায়, এ প্রমাণ তো পেয়েছেন। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা যে উন্নয়ন করেছি তা এর আগে কখনও হয়নি। আমরা বিশ্ব ব্যাংকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার মতো সৎ সাহসও দেখিয়েছি।’
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে তাকে মাফ করে দিয়েছেন এমন মন্তব্যের ব্যাপারে একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘কিসের ক্ষমা করবেন উনি আমাকে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বেঁচে গেছি, সেটা। তাছাড়া আমি এমন কী অপরাধ করেছি যে ক্ষমা চাইব। আমাদের সরকার তো তাদের নামে মামলা দেয়নি। বরং তারা ক্ষমতায় থাকার সময় আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দিয়েছে। আমাদের দলের সবার নামে মামলা দিয়েছে তারা।’ খালেদা জিয়ার নামে মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এসব তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে করা মামলা। আমাদের সময় করা হয় নি।’
বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিতে খালেদা জিয়ার কোর্টে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন ‘যখনই বাসা থেকে বের হোন, একটা অঘটন উনি ঘটান। ক্ষমা আমাকে নয়, জাতির কাছে উনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
তবে মামলার হাত থেকে বাঁচার জন্য এবার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলে জনগণ আর সহ্য করবে না, অবশ্যই মোকাবিলা করবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার শপিংমল ও সম্পদের ব্যাপারে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে কোনও সংবাদ প্রকাশিত না হওয়ায় সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘আপনাদের কোনও আগ্রহ দেখলাম না এ সংবাদ প্রকাশের জন্য। তাদের কি সাত খুন মাফ? হতে পারে তাদের হাজার কোটি টাকা আছে। কিভাবে মুখ বন্ধ রাখতে হয় তারা ভালো করে জানে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করা হলে সে টাকা আবার জনগণের কাছেই আসবে। ইতোমধ্যে মানি লন্ডারিংয় করে বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত এনেছি। ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। জনগণের টাকা বাইরে নিয়ে বিলাস করবে, নিশ্চই বিচার হবে। টাকাও ফেরত আসবে।’
তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। সে তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাকে অবশ্যই দেশে আসতে হবে। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এ ঘোষণা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। জাতিসংঘের একটি রেজ্যুলেশন আছে, এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সে রেজ্যুলেশনকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে, এটা কেউ মেনে নেবে না।’ এজন্য সারা পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আগামী নির্বাচনের মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘শত ফুল ফুটতে দিন। সব থেকে সুন্দর ফুলটি বেছে নেব। প্রার্থী হতে দিন। যারা দল করে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা সবার অধিকার। তবে আমাদের এমপিদের মধ্যে কেউ ডেঞ্জার জোনে নেই। যেখানে যেখানে পরিবর্তন করা দরকার অবশ্যই করব। দুর্বলতা থাকলে পরিবর্তন করব। ’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যথেষ্ট আন্তর্জঅতিক সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আশিয়ান সদস্যভুক্ত দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে। কেউ প্রকাশ্যে না বললেও রোহিঙ্গা ইস্যুটি কেউ ভালো চোখে দেখেননি। তারা চান, রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফেরত যাক। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিক।’ রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে এদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মিয়ানমার প্রসেঙ্গে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র। প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাব থাকুক সেটাই চাই।’
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আদালতের। আমার কিছু বলার নেই।’
বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার পরে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। দশ মিনিট লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পরে প্রায় একঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সংবাদকর্মী, মন্ত্রিসভার সদস্য দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।