ক্রীড়া প্রতিবেদক : বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পরপরই বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে ছুটি থেকে ডেকে এনে কোচ হাথুরুসিংকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ আগে থেকেই হালকা গুঞ্জন ছিল, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব রয়েছে হাথুরুর কাছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের গত শ্রীলঙ্কা সফরেই এই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল।
শেষ পর্যন্ত সেই গুঞ্জনই হয়তো সত্যি হতে যাচ্ছে। বিসিবি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয় হোক কিংবা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের কোচ হওয়ার বিষয় হোক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইতোমধ্যেই নাকি বিসিবিতে পতদ্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন হাথুরুসিং। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
টাইগারদের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই হাথুরুসিংহের পদত্যাগের গুঞ্জন ছিল। পুরো সফরে ব্যার্থতার কারণে সেটা আরো জোড়ালো হয়। দল দেশে ফিরে আসলেও হাথুরু ঢাকায় আসেননি। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চলে যান সোজা অস্ট্রেলিয়ায় নিজের বাড়িতে। এদিকে বিসিবি থেকেও হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার পারফরম্যান্সের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়ে থাকতে পারে হাথুরুর কাছে।
আবার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে আগামী জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা দলের কোচের দায়িত্ব নিচ্ছেন হাথুরু। ৩১ জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন বলে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেই দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্যও হয়তো বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার জন্য পদত্যাগ করে থাকতে পারেন।
যদিও এ বিষয়ে বিসিবি থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। পদত্যাগ পত্র পেয়েছে কি পায়নি, সে বিষয়েও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দায়িত্বশীল সূত্র কিছু আনুষ্ঠানিকভাবে বলছেন না। বিসিবির কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গুঞ্জন আমরাও শুনছি। তবে বিষয়টা নিশ্চিতই নয়।
বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস অবশ্য পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা অস্বীকারই করেছেন, ‘আমরা এখনো হাথুরুসিংহের কাছ থেকে পদত্যাগপত্র বা এ জাতীয় কিছু পাইনি। সে জন্য আমি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে প্রয়োজন হলে আমরা তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করব।’
গত বছর অক্টোবরেও একবার বাংলাদেশ দলের কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করার চেষ্টা করেছিলেন হাথুরুসিংহে। যদিও তখন বিসিবি তাকে ছাড়তে চায়নি। তখন তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে, তাকে যে কোনোভাবেই হোক বুঝিয়ে-সুজিয়ে আবার স্বপদে রেখে দিয়েছে। প্রসঙ্গতঃ আগামী ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তি রয়েছে। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে দায়িত্ব ছাড়াছাড়ির বিষয় আসলে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে এক মাস আগে নোটিশ দিতে হবে।
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের প্রধান কোচ হিসেবে হাথুরু দায়িত্ব নিতে পারেন, এই গুঞ্জন আগে থেকেই ছিল। গত জুনে যখন লঙ্কান ক্রিকেটের প্রধান কোচ থেকে গ্রাহাম ফোর্ড দায়িত্ব ছেড়ে দেন, এরপর থেকেই নতুন একজন কোচের সন্ধানে ছিল শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড। স্বদেশি হাথুরুসিংহকেই প্রধান কোচ হিসেবে চাচ্ছিল তারা। বিশেষ করে বাংলাদেশ দলকে ঈর্ষণীয় সাফল্য এনে দেয়ার কারণে শ্রীলঙ্কার কাছে হাথুরুর চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছে। লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড যদি হাথুরুকে রাজি করাতে সক্ষম হয়, তাহলে এবার হয়তো বা আর বিসিবি তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করলেও পারবে না। তারওপর, হাথুরুর কোচিংমেট, বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা থিলান সামারাবিরাকেও ইতিমধ্যে ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
২০১৪ সালের মে মাসে চন্ডিকা হাথুরুসিংহকে প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তার সঙ্গে চুক্তি ছিল ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। এরই মধ্যে হাথুরুর অধীনে ঈর্ষণীয় সাফল্য পায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে ২০১৪ সালের শেষ ভাগে এসে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করা থেকে শুরু। এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মত দলকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা, ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে টেস্ট জয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল- এসবই ছিল কোচ হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়া হাথুরুর সাফল্য। এছাড়া ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে হাথুরুর অধীনেই বাংলাদেশ সাত নম্বরে উঠে আসে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে তো ৬ নম্বরেও উঠেছিল। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর নতুন করে হাথুরুর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করে বিসিবি। যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপের পর।