আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তুরস্ককে বিভক্ত করার জন্যে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর এবার সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তার দেশকে ৪ অঞ্চলে বিভক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছেন। এমন দাবি করেছে তুরস্কের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইয়েনি সাফাক। অনলাইনটি দাবি করেছে, ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুসারে সৌদি আরবকে বিভক্ত করার জন্যেই এধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে বাদশাহ সালমান তার দেশে ‘মডারেট ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।
পরিকল্পনা অনুসারে সৌদি আরবকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে মক্কা ও মদিনাকে ভ্যাটিকানের মত একটি অবকাঠামোয় আনা হবে। রিয়াদকে কেন্দ্র করে যে অঞ্চল গড়ে উঠবে তা পরিচালিত হবে ‘মডারেট ইসলাম’ প্রকল্পের অধীনে। আল-কাতিফ ও আল-দাম্মামকে নিয়ে হবে শিয়া মুসলিম প্রদেশ। এবং দেশটির বাকি অঞ্চলে গড়ে তোলা হবে ‘গ্রেট ইসরায়েলের’ অনুকরণে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে আগামী ১০ বছরে। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘নিও-কন’ হিসেবে পরিচিত চিন্তাশীলদের একজন রালফ পিটারস ওয়াশিংটন এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট’ এর জন্যে ‘ ব্লাড বর্ডারস’ নামে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। যা পরে মার্কিন সেনাবাহিনীর জার্নালে প্রকাশ হয়। পিটারস দাবি করেন মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস রোধ ও গণতন্ত্র ছড়িয়ে দিতে এধরনের সীমানা পুনর্বিন্যস্ত জরুরি। ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তুরস্ককে বিভক্ত করে কুর্দিস্তান ও আরমেনিয়ান রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার, বাগদাদ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করা বা না করার ব্যাপারে অবৈধ গণভোটের আয়োজন করে।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হয় নাইন/ ইলেভেনের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা পুনর্বিন্যস্ত করার পরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করেছে। এরই অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইয়েমেন, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত ও জর্ডানকে নিয়ে নতুন এক মানচিত্র তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া অধুষিত অঞ্চলগুলোকে বিভক্ত করে তা আমীরের অধীনে একটি রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে। সৌদি আরবের আল-কাতিফ, আল-আহসা, আল-দাম্মাম, জাহারান, খুবার ও আল-জুবাইল শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত। ৫০ বছর পূর্বে বাদশাহ আব্দুলআজিজ যে সৌদি আরবের গোড়া পত্তন করেছিলেন তার প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তন এবং ইয়েমেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সৌদি আরব যাতে বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে সে জন্যে এধরনের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জরুরি। প্রয়োজনে সৌদি আরবে আরো অধিক প্রদেশ সৃষ্টি করা হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মক্কা ও মদিনার ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে যার ফলশ্রুতিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন বাদশাহ সালমান। ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমানের অধীনে দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ১১ জন প্রিন্স সহ বর্তান ও সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সহ অন্তত ৩৮ জনকে। এখন মক্কা ও মদিনায় একজন ‘সেকুলার খলিফা’ নিয়োগ দিয়ে বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে এতে মুসলিশ বিশ্বকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। মক্কা ও মদিনাকে একজন ‘পুতুল খলিফা’র অধীনে ভ্যাটিকানের মত ‘পবিত্র শহরের’ আদল দেয়া হবে।
পেন্টাগন ও সিআইএর পরিকল্পনা অনুসারে মক্কা ও মদিনার ওপর সৌদিদের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়ার মাধ্যমে এবং সেখানে একটি সকল মুসলিম গ্রুপ থেকে একটি শাসনতান্ত্রিক পরিষদ গঠন করে তা ভ্যাটিকানের আদল দেয়া হবে। যাতে তা কখনো পশ্চিমা দেশগুলোর জন্যে অস্বস্তি বয়ে না আনে। পিটারের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রিয়াদকে ঘিরে এধরনের একটি স্বাধীন অঞ্চল গড়ে তুললে তা হাউজ অব সৌদকে ইসলাম ও ইসলামি দুনিয়া থেকে দূরে রাখাতে সহজ করবে।