ডেস্ক রিপোর্ট: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আর যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের নিয়ে দল গঠন করেছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, মন্ত্রী বানিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের। এদের সন্তানরা দেশের সব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। দেশের উন্নয়নে বিশ্বাসীরা তাদের কখনও ভোট দেবে না, ক্ষমতায় আসবে দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলছে, চলবে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যকে নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না, এটাই আজকের বিজয় দিবসের প্রতিজ্ঞা।
রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ আয়োজিত বুদ্ধিজীবী হত্যা ও বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা যুদ্ধাপরাধী— তাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। ওই সময় অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত ছিল। যারা যুদ্ধাপরাধ করেছিল, তাদের জন্য রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না, তাদের ভোটের অধিকার ছিল না। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর সাজাপ্রাপ্ত সব আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। যারা পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে আনা হয়। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী যারা তৈরি করেছিল, যারা দেশকে ধ্বংস করেছে, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদেরই কেউ কেউ হয় উপদেষ্টা, কেউ কেউ হয় মন্ত্রী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যারা দেশের জন্য রক্ত দিলো, যারা নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করলো, তারা হয়ে গেল অপরাধী। আর যারা দেশকে ধ্বংস করলো, যারা ধর্ষণ করলো, নির্যাতন করলো, লুটপাট করলো, তারাই হয়ে গেল মন্ত্রী।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন ছিল সাধারণ এক মেজর। জাতির পিতা তাকে পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল বানালেন। সেই বেঈমান, মুনাফেক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকেই হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লো। সে ইনডেমনিটি জারি করলো। যারা খুনি, তাদের দূতাবাসের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হলো। জাতির পিতার হত্যাকারীরাই হয়ে গেল বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তা।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, এরশাদ— সবাই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছে। খালেদা এসে আরও একধাপ ওপরে নিয়ে গেল। যুদ্ধাপরাধী, খুনিদের হাতে তুলে দিলো লাখো শহীদের রক্তে রাঙানো পতাকা। তারা হয়ে গেল মন্ত্রী। যাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির হুকুম হয়েছে, যাদের ফাঁসি কার্যকর করেছে, তাদেরই মন্ত্রী করা হলো। তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে দল বানালো। এদের সন্তানরাই দেশের সব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। যারা স্বাধীন দেশে বিশ্বাস করে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তারা কী করে মেনে নিতে পারেন যে ফাঁসির হুকুম পাওয়া যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী হবে? আমার প্রশ্ন, যুদ্ধাপরাধীদের মদত দানকারীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছে, তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দল গঠন করেছে, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করা একজন ব্যক্তি সেই দলকে কিভাবে সমর্থন দেন? তাদের কি জ্ঞান বা বোধশক্তি নেই? তাদের কি বিবেক বলে কিছু নেই?’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, এরশাদ— সবাই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছে। খালেদা এসে আরও একধাপ ওপরে নিয়ে গেল। যুদ্ধাপরাধী, খুনিদের হাতে তুলে দিলো লাখো শহীদের রক্তে রাঙানো পতাকা। তারা হয়ে গেল মন্ত্রী। যাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির হুকুম হয়েছে, যাদের ফাঁসি কার্যকর করেছে, তাদেরই মন্ত্রী করা হলো। তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে দল বানালো। এদের সন্তানরাই দেশের সব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। যারা স্বাধীন দেশে বিশ্বাস করে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তারা কী করে মেনে নিতে পারেন যে ফাঁসির হুকুম পাওয়া যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী হবে? আমার প্রশ্ন, যুদ্ধাপরাধীদের মদত দানকারীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছে, তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দল গঠন করেছে, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করা একজন ব্যক্তি সেই দলকে কিভাবে সমর্থন দেন? তাদের কি জ্ঞান বা বোধশক্তি নেই? তাদের কি বিবেক বলে কিছু নেই?’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘এই দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি যারা চায়, যারা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়, ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চায় হয়, যারা চায় দেশের মানুষ লেখাপড়া শিখবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হবে, বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে তাদের প্রতি বলতে চাই, ‘আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে, দেশের উন্নতি হয়। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার দিয়েছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা দিয়েছে। পরে, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। মাঝখানে ৮ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল, দেশের উন্নয়নও বন্ধ ছিল। এখন আবার উন্নয়ন শুরু হয়েছে। দেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। যারা সৃষ্টি করে, ত্যাগ স্বীকার করে, তাদের যে দরদ-আন্তরিকতা থাকে, উড়ে এসে জুড়ে বসা মানুষের তা থাকে না। তাদের লক্ষ্য থাকে ভোগ বিলাস, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার। তাদের পক্ষে কেউ থাকবে না। যারা দেশের বিরোধী, যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবে না। তারা কখনও ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’
বিজয় দিবসে দেশের তরুণদের উচ্ছ্বাস-উৎসাহের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ স্বাধীন করেছি, এখন আমাদের নেতৃত্বেই দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি খুব খুশি হয়েছিল যে এ বছর বিজয় দিবস ব্যাপকভাবে পালন করা হচ্ছে। আপামর জনগণ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, শিশু, যুবক থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষ যে উৎসাহ নিয়ে এই দিনটিকে পালন করেছে, তারা যেভাবে স্বাধীনতার চেতনাকে তুলে ধরেছে, তারা যেভাবে নতুনভাবে জাগ্রত হয়েছে, আমি তাদের মধ্যে আশার আলো দেখি। তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। উন্নত হবে।’
আগামী দিনের প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। অথচ এই ভাষণ একটা সময় নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে জনগণ এখন মাথা উঁচু করে চলছে, চলবে। সেটাই এই বিজয় দিবসের প্রতিজ্ঞা। আমাদের স্বাধীনতার সুফলকে দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না, এটাই আজকের প্রতিজ্ঞা। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’