আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পৃথক দুটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আবারও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের আলামত মিলেছে। মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হলোকাস্ট মিউজিয়াম এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা ফোরটিফাই গ্রুপের এক যৌথ অনুসন্ধানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ‘জোরালো প্রমাণ’ পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এদিকে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার যৌন নিপীড়নের আলামত হাজির করেছে। গণহত্যা ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দুইটি প্রতিবেদনেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আবারও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগের আলামত মিলেছিল।
রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত নৃশংসতা নিয়ে এক বছর ধরে সঙ্গে অনুসন্ধান চালিয়েছে ফোরটিফাই রাইটস আর হলোকাস্ট মিউজিয়াম। রাখাইনের তিনটি গ্রামে গণহত্যার নজির পেয়েছে তারা। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে বুধবার (১৫ নভেম্বর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে রোহিঙ্গা গণহত্যার ‘জোরালো প্রমাণ’ পাওয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, দেশটির সেনাবাহিনী জাতিগত নিধনের জন্য এই নৃশংসতা চালিয়েছে।
প্রতিবেদনে ত্রাণকর্মী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিলে দুইশ’র বেশি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ‘ধারাবাহিক, ব্যাপক ও নজিরবিহীন’ সহিংসতা চালিয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। চলতি বছরের আগস্ট মাসে তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়। রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার জেরে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে।
প্রতিবেদনে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে। হলোকাস্ট মিউজিয়ামের কর্মকর্তা আনদ্রেয়া জিটলম্যান বলেন, যে নৃশংসতা চলছে তা বন্ধ করতে হবে, ভবিষ্যতে যাতে আর না হয় তা ঠেকাতে হবে। তিনি বলেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে জোরালো প্রতিবাদ হওয়া উচিত। আনদ্রেয়া জিটলম্যান বলেন, এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সুচি সরকারের এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে হলোকাস্ট মিউজিয়াম।
মিয়ানমান সরকার দেশটিতে চলা নৃশংসতার জন্য বরাবরই উগ্রপন্থী রোহিঙ্গাদের দায়ী করে এসেছে। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্বের, বিশেষত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক ব্যর্থতার প্রসঙ্গটি টানা হয়েছে। বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার। এই জনগোষ্ঠী তাদের ওপর চালানো নিপীড়ন সম্পর্কে বারবার বলে এসেছে। তবু জাতিগত নিধন হয়েছে, যা ঠেকানো সম্ভব ছিল।
এদিকে মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডাব্লিউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযানের সময় রোহিঙ্গা নারী ও মেয়ে শিশুরা অসংখ্যবার মিয়ানমারের সেনাদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওই মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী যে ধরনের যৌন সহিংসতা ও অন্যান্য নৃশংসতা চালিয়েছে, তার পরিমাণ মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান।
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারীরা এইচআরডাব্লিউ-কে বলেছেন, ধর্ষণের আগে সেনারা তাদের ছোট ছোট শিশু, স্বামী বা মা-বাবাকে হত্যা করেছে। জানিয়েছে, পর পর ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ক্ষত-বিক্ষত জননাঙ্গে রক্তপাত ও তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করেই দীর্ঘ পথ হেঁটে বাংলাদেশে এসেছে তারা।