খেলাধুলা ডেস্ক: ওয়ানডে সিরিজে ইতিহাস হয়েছে, রেকর্ড হয়েছে বেশ কয়েকটা। এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজেও নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পাওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু কুর্তিস ক্যাম্ফার শেষদিকে ঝোড়ো এক ফিফটিতে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের।
তবে ব্যবধানটাই যা কমিয়েছেন, বড় হার এড়াতে পারেনি আইরিশরা। ৭৭ রানের বড় জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ বাকি থাকতেই নিজেদের করে নিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টি ৮৪ রানের। ২০২১ সালের অক্টোবরে আল আমেরাতে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে এই ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা। আজকের জয়টি বড় হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে।
চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বৃষ্টির কারণে ওভার কমে আসে। ১৭ ওভারের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য ছিল ২০৩ রানের। টাইগারদের বোলিং তোপে শুরু থেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে সফরকারীরা। একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে, লড়াইটাও করতে পারেনি।
রান তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারের প্রথম বলেই উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। তাসকিন আহমেদ সাজঘরের পথ দেখান আইরিশ অধিনায়ক পল স্টারলিংকে। শরীরের বাইরের বলে চালাতে গিয়ে স্টারলিং (০) হন উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ক্যাচ।
পরের ওভারে সাকিব আল হাসানেরও প্রথম বলে উইকেট। এবার স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন লরকান টাকার (৬)। ৭ রানে ২ উইকেট হারায় আইরিশরা।
মাঝে নাসুম আহমেদের ওভার থেকে ১৪ রান তুলেছিল আয়ারল্যান্ড। কিন্তু পরের ওভারে এসে সাকিব হানেন জোড়া আঘাত। ওভারের প্রথম বলে বোল্ড করেন রস অ্যাডায়ারকে (৬), শেষ বলে লিটনকে ক্যাচ দেন গ্যারেথ ডেলানি (৬)।
নিজের পরের ওভারে এসে ফের জোড়া শিকার সাকিবের। ওভারের তৃতীয় বলে এলবিডব্লিউ করেন জর্জ ডকরেলকে (২), ষষ্ঠ বলে সেট ব্যাটার হ্যারি টেক্টরকে করেন বোল্ড (১৬ বলে ২২)। এতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফাইফারও হয়ে যায় সাকিবের।
৮৬ রানে ৮ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। তবে এরপর কুর্তিস ক্যাম্ফার ঝোড়ো এক ফিফটি করে (২৯ বলে) পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমান। ৩০ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৫০ করা ক্যাম্ফারকে বোল্ড করেন তাসকিন। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১২৫ রানে থামে আইরিশরা।
সাকিব আল হাসান ২২ রানে নেন ৫টি উইকেট। ২৭ রানে ৩ উইকেট শিকার তাসকেনের।
এর আগে লিটন দাসের বিধ্বংসী এক ইনিংসে ভর করে ১৭ ওভারেই ৩ উইকেটে ২০২ রানের পাহাড় গড়েছিল টাইগাররা।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় আয়ারল্যান্ড। এরপরই ঝমঝমিয়ে নামে বৃষ্টি। মাঝে একবার বৃষ্টি বন্ধ হলে ১৯ ওভারের ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঠ প্রস্তুত করার সময় ফের নামে বৃষ্টি।
পরে দ্বিতীয়বার ঘোষণা করা হয় ১৭ ওভার করে হবে ম্যাচে। সেইমতোই ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তিন ওভার কম, শুরু থেকেই আইরিশদের বোলারদের ওপর চড়াও হয় স্বাগতিকরা।
সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪২ বলে ৯১ রানের বিধ্বংসী জুটি গড়েছিলেন লিটন দাস আর রনি তালুকদার। বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ম্যাচেও উড়ন্ত সূচনা করেন তারা।
৩.৩ ওভারেই দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করেন লিটন-রনি। এটিই বাংলাদেশের দ্রুততম দলীয় পঞ্চাশ। এর আগে ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৫০ করেছিল বাংলাদেশ।
উইকেটের চারদিকে বাহারি সব খেলতে থাকেন লিটন-রনি। আইরিশ বোলাররা চোখেমুখে সর্ষেফুল দেখছিলেন। ৭.১ ওভারেই ১০০ ছোঁয় বাংলাদেশ।
এটা টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের দ্রুততম দলীয় সেঞ্চুরি পূরণের রেকর্ড (৪৩ বৈধ ডেলিভারিতে)। এর আগে রেকর্ডটি ছিল আগেই ম্যাচেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৮.৫ ওভারে।
লিটন দেশের ইতিহাসের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন ১৮ বলে। রনি তালুকদারেরও সুযোগ ছিল ২৩ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার। সেই চেষ্টা করেছিলেনও তিনি।
কিন্তু বেন হোয়াইটকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅন বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন রনি। ২৩ বলে ৪৪ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ছিল ৩টি চার আর ২টি ছক্কার মার। দশম ওভারে দলীয় ১২৪ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
লিটন ৪০ বলেই পৌঁছে গিয়েছিলেন ৮৩ রানে। সুযোগ ছিল বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরির। কিন্তু ১৭ রানের জন্য তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারটা ছুঁতে পারলেন না ডানহাতি এই ওপেনার। নিজের ভুলেই ফেরেন সাজঘরে।
বেন হোয়াইটের ওয়াইড বল ব্যাটে লাগাতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন লিটন। ৪১ বলে ৮৩ রানের ঝোড়ো ইনিংসে হাঁকান ১০টি বাউন্ডারি আর ৩টি ছক্কা।
এরপর সাকিব আল হাসান আর তরুণ তাওহিদ হৃদয়ের ২৯ বলে ৬১ রানের জুুটি। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে ১৩ বলে ২৪ করে আউট হন হৃদয়। ২৪ বলে ৩ চার আর ২ ছক্কায় ৩৮ রানে অপরাজিত ছিলেন সাকিব।