শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬ পৌষ, ১৪৩১

ক্রিকেট: নারী খেলোয়াড়রা এগিয়ে নিচ্ছেন দেশকে

editor
আগস্ট ১৮, ২০২৪ ১২:০২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ফাহিম মাশরুর: ক্রিকেটের ২০০ বছরের ইতিহাসের প্রথম ৫০ বছরে রাজত্ব ছিল শুধু পুরুষদের। ১৯৩৪ সালে প্রথমবারের মতো ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও শুরু করে ক্রিকেট অঙ্গনে যাত্রা। গত ৫০ বছরে তরতর করে এগিয়েছে নারী ক্রিকেট। বিশ্বজুড়ে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ক্রিকেট অঙ্গনে রেখে চলেছেন সাফল্যের ছোঁয়া। সেই ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেও। গত এক যুগে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের চোখ ধাঁধানো সাফল্য গর্বিত করেছে পুরো দেশকেই।
অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের। সেই বছর থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পথচলা শুরু করে জাতীয় নারী ক্রিকেট দল। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই জয়লাভ করে বাঘিনীরা।
সেই শুরু। এরপর একের পর এক সাফল্য ধরা দিয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের কাছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব, এসিসির টুর্নামেন্ট, এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো বড়ো আসরে নিয়মিত ক্রিকেট খেলে আসছে বাংলাদেশের মেয়েরা। একই সঙ্গে বড়ো টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর সাথেও নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলছেন তারা।
২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যুক্তরাষ্ট্রকে হারানোর মাধ্যমে টুর্নামেন্টের সেরা ছয় দলের মধ্যে অবস্থান করে নেয় নারী ক্রিকেট দল। সেই সময় বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে সেরা দশে প্রবেশ করায় নারী দল পায় ওয়ানডে স্ট্যাটাসও।
নারী দল তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচটি খেলে ২০১১ সালের ২৬শে নভেম্বর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। সাভারে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা ৮২ রানে জিতেছিল। ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রাপ্তির প্রায় ১০ বছর পর ২০২১ সালের ১লা এপ্রিল ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল।
বাংলাদেশ নারী দলের সেরা সাফল্য এশিয়া কাপ জয়। বাংলাদেশের মেয়েরা ২০০৮ সাল থেকে নিয়মিতভাবেই এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করে আসছে। শুরুতে ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলা হলেও ২০১২ সাল থেকে টি-২০ ফরম্যাটে মেয়েদের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ছেলেরা তিনবার ফাইনাল খেলেও যে কাজটি করতে পারেনি মেয়েরা তা করে দেখিয়েছে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে।
ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে তিন উইকেটে হারিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব দখল করে নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে রোমাঞ্চকর এক ফাইনালে ২০ ওভারে ভারতের দেওয়া ১১৩ রানের টার্গেট ছুঁতে বাংলাদেশকে শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। খাদিজা ও রুমানার দুইটি করে উইকেট এবং নিগার সুলতানার ২৭ ও রুমানা আহমেদের ২৩ রানেই ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১০ম আসরে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় বাংলাদেশের মেয়েরা। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা ৮টি দল নিয়ে রাউন্ড-রবিন লীগ পদ্ধতিতে টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারানোর মাধ্যমে বিশ্বকাপে তাদের প্রথম জয়ের দেখা পায়। বাংলাদেশ সেই ম্যাচ ৯ রানে ম্যাচ জিতে নেয়। বাংলাদেশের পক্ষে ফাহিমা খাতুন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট দখল করে। টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলো অবশ্য বাংলাদেশ হেরে যায়।
মেয়েদের টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ২০১৪ সালে প্রথমবার অংশগ্রহণ করে। অথচ সেই বাংলাদেশই ২০২৪ সালের মেয়েদের টি-২০ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ। এই বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হবে। ঘরের মাঠে দারুণ কিছু করার স্বপ্নই দেখছেন নিগাররা।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মেয়েরা দারুণ পারফর্ম করছে। ২০২৩ সালের জুলাইতে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে শক্তিশালী ভারতের সাথে ১-১ ম্যাচে সিরিজ ড্র করেছেন তারা। এই সিরিজেই বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরি করেন ফারজানা হক। ১০৭ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে পাকিস্তানের সাথে ঘরের মাঠে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজ জেতে বাংলাদেশ নারী দল।
এখন পর্যন্ত নারী ক্রিকেট দল ৬৪টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৭ ম্যাচে জয় পেয়েছে। আর ১১৮ টি টি-২০ ম্যাচ খেলে জিতেছে ৪৩ ম্যাচে। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল এখনো তাদের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি খেলার অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের সাফল্য এসেছে বহু বাধা পেরিয়ে। পুরুষ ক্রিকেটারদের তুলনায় কম বেতন, সুযোগ-সুবিধার অভাব, ঘরে ও বিদেশের মাটিতে ম্যাচ স্বল্পতা ইত্যাদি বিভিন্ন কিছু মিলিয়েই এখনো বেশ পিছিয়ে আছে মেয়েরা। বরাবরই দাবি উঠেছে ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেটের সমান অধিকার নিয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকেও বহুবার দেওয়া হয়েছে আশ্বাস। তবে এখনো ছেলেদের তুলনায় খুবই নগণ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন জোতি-নিগার-ফারজানারা।
ছেলেদের সমান সুযোগ-সুবিধা পেলে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট এগিয়ে যাবে অনেকদূর, এমন আশাতেই বুক বেঁধে আছেন দেশের কোটি ক্রিকেট ভক্ত। এশিয়া কাপের মতো বাংলাদেশকে একদিন বিশ্বকাপও এনে দেবেন মেয়েরা, সেই স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ।
লেখক: স্পোর্টস রিপোর্টার, সারাবাংলা

 

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial