ডেস্ক রিপোর্ট: রংপুর সিটি কর্পোরেশনে (রসিক) উৎসবের ভোটে বড় জয় পেলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে সদ্যবিদায়ী মেয়র ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে জয় ঘরে তুলেন জাতীয় পার্টির এ প্রার্থী। রাত সোয়া ১২টার দিকে রিটার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার মোস্তফাকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৩টি কেন্দ্রের ফলই ঘোষণা করা হয়েছে। এতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) সাবেক মেয়র সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু পেয়েছেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট। বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এটিএম গোলাম মোস্তফা হাতপাখা মার্কায় ২৪ হাজার ৬ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন। আবদুল কুদ্দুস মই মার্কায় পেয়েছেন ১ হাজার ২৬২ ভোট। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মনে করেন, শুধু রংপুরেই নয়, সারা দেশেই লাঙ্গলের জোয়ার বইছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জয়ের এ ধারা শুরু হল রংপুর দিয়েই। তারা বলছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দেশবাসী এমনিভাবে লাঙ্গলের বিজয় দেখতে পাবে। মোট সাতজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ শেষে শুরু হয় গণনা। ৭৪.৩০ ভাগ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নগরীতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। অর্থাৎ ২ লাখ ৯২ হাজার ৭২৩ ভোটার ভোট দিয়েছেন। সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণ ও বাধাহীনভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিকালে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া মোস্তাফিজার রহমানের জয়ের খবর আসতে থাকে। গভীর রাতে নতুন নির্বাচিত নগরপিতা মোস্তফা এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটা জাতীয় পার্টির রাজনীতির জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট। আমি একটি সুন্দর সিটি কর্পোরেশন গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাব। বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর মোস্তাফিজার রহমানের বাসার সামনে সন্ধ্যার পর থেকেই নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে গভীর রাত পর্যন্ত ঢল নামে নেতাকর্মীদের। শহরজুড়ে শুরু হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিজয় মিছিল। এদিকে সদ্যবিদায়ী মেয়র সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু শিবিরে হতাশা নেমে আসে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কয়েকদিন ধরেই রংপুর নগরীতে তার নিজ বাসভবন ‘পল্লী নিবাস’-এ অবস্থান করছেন। রংপুরকে বলা হয় এরশাদের ঘাঁটি। রংপুরে এরশাদের এ অবস্থানই মোস্তাফিজার রহমানের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে। নির্বাচনী আচরণবিধির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি তার বাসভবন থেকে বের হননি। তবে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘জয় হবে লাঙ্গলেরই।’ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারেও তিনি ছিলেন আস্থাশীল। রাতে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাওছার জামান বাবলা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে ফল প্রত্যাখ্যান করেন। বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, প্রমাণ হয়েছে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেছেন, রসিক নির্বাচনে পরাজয় ঘটলেও রাজনৈতিক বিজয় হয়েছে। এতে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে।
সর্বত্রই মেলার আমেজ : সুষ্ঠু ভোট হওয়ায় খুশি রংপুরের মানুষ। সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশনও। দিনভর ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। সর্বত্রই দেখা যায় মেলার আমেজ। ভোটাররা বাধাহীনভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে লাইন ধরে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। নজিরবিহীন নিরাপত্তায় প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের এই ভোটে সকালের দিকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিল ভোটারদের উপচেপড়া ভিড়। রংপুরের ইতিহাসে এটি ছিল সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। দুপুরে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বিকালে ভোট কেন্দ্রগুলোয় ছিল লম্বা লাইন। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কোথাও কোনো ধরনের কারচুপি বা জালিয়াতির খবর পাওয়া যায়নি। ছিল না কোনো হাঙ্গামা, দৌড়ঝাঁপ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা বলেন, ‘কোনোরকম বিচ্যুতি নেই, কোনো অভিযোগও নেই।’ দুপুর ১২টায় নগরীর তাজহাট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আবদুল ওয়াহেদের মুখেও শোনা গেল ভোট নিয়ে উচ্ছ্বাসের কথা। তিনি বলেন, ‘ম্ইু পছন্দের প্রার্থীক ভোট দিবার পায়া খুউব খুশি হইছং। ভালো করিই ভোট দিছং। মোক কায়ো ভয় দেখায় নাই, মুই একলাই মনের মতো ভোট দিছং।’ ষাটোর্ধ্ব এই ভোটার জানান, তিনি মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সহাবস্থান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেয়া কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ‘ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল’র ডেপুটি চিফ অব পার্টি ব্রায়োন কেটি (যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক) বলেন, ‘চমৎকার ভোট হয়েছে। কোথাও সহিংসতা চোখে পড়েনি। মানুষ উৎসবের আমেজে ভোট দিয়েছেন।’ নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, বিশ্লেষক হিসেবে মনে করি, মোটা দাগে এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল, অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ হয়েছে। এছাড়া প্রকৃতিও সহায়ক ছিল।
নগরবাসীর সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ভোটের প্রচারেও শান্তিপূর্ণ ভোটের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। উল্লেখ করার মতো কোনো সংঘর্ষ বা সহিংসতা হয়নি প্রচারে। সবার মধ্যেই সৌহার্দপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছিল। ভোটের দিনও সেই একই চিত্র। নগরবাসী বলছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি), সরকার ও রাজনৈতিক দল চাইলে যে কোনো নির্বাচন এমন উৎসবমুখর পরিবেশে হতে পারে। বৃহস্পতিবারের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কোনো অভিযোগ ছিল না। বিএনপির প্রার্থী সকালে কোনো অভিযোগ না করলেও দুপুরে ভোট কারচুপির শঙ্কার কথা জানান এবং নির্বাচনী বুথ থেকে এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ আনেন। সরেজমিন দেখা গেছে, ১৯৩টি ভোট কেন্দ্রে সকাল ৮টায় একযোগে ভোট শুরু হয়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলে। প্রায় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের সামনে ছিলেন মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের ব্যাপক গণসংযোগ। ছিল উৎসাহী মানুষের জটলা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ছিল কড়া নজরদারি। তবে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের এমন সহাবস্থানের ফলে পুরো সময়টাই ছিল উৎসবের আমেজ। ভোট কেন্দ্রগুলোয় যাতায়াতের পথগুলোতেও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি এবং ভোট নিয়ে আলোচনা ছিল প্রাণবন্ত।
ভোট গ্রহণ শেষে বিকালে কথা হয় রংপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার জিএম সাহাতাব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। কোনো প্রার্থী লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি।’
নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২১১ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু এবং ধানের শীষ নিয়ে বিএনপির কাওছার জামান বাবলা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে একটি কেন্দ্রে ডিজিটাল ভোটিং মেশিনে (ডিভিএম) ভোট নেয়া হয়েছে। সামনের নির্বাচনগুলোয় ডিভিএম ব্যবহার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ছাইদুল ইসলাম।
এদিন নির্বাচন ঘিরে রংপুরজুড়ে ছিল নি-িদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইসির নিষেধাজ্ঞা ও পুলিশের কড়াকড়িতে নগরীতে যান্ত্রিক যান চলাচল ছিল প্রায় বন্ধ। এতে গাড়ি সংকটে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। এ সুযোগে পরিবহন শ্রমিকদের যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়। তবে নির্বাচন উপলক্ষে নগরীর সব ধরনের বিপণিবিতান, মার্কেট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ।
বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টায় তাজহাট উচ্চবিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ৫টি বুথের মধ্যে ৩টির সামনে ছোট সারি দেখা গেলেও একটিতে দীর্ঘ লাইন ছিল। ভোটারদের মুখে ছিল হাসি এবং তারা সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছিলেন। কথা হয় দায়িত্বরত পুলিশের এএসআই গাউসুল আজমের সঙ্গে। তিনি বলেন, অসংখ্য ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে যান সকাল থেকেই। কেন্দ্রের ৫টি বুথের সব কটিতে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট দেখা যায়। দুটিতে বিএনপির ও একটিতে আওয়ামী লীগের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার মো. শাহজাহান আলী বলেন, সকালে সব দলের এজেন্ট ছিল। হয়তো কেউ কেউ পরে চলে যেতে পারেন বা বুথের বাইরে যেতে পারেন।
কেন্দ্রের বাইরে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান করছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুল বাতেন। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার চলেছে। ভোটের দিন কেন্দ্রের বাইরে সব প্রার্থীর সমর্থকরাই প্রচার চালাচ্ছেন। আমার লোকজনও ভোট চাচ্ছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ বা আতঙ্ক নেই।
৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সর্দারটারী এলাকার ভোটার রেজাউল করিম বলেন, ‘কী কইম বাহে ভোটের কথা। মুই বিয়াঙ্কা (সকালে) নিন (ঘুম) থেকে উঠি ফজলুর দোকানে চা খাইয়া খুব ভালো করি ভোট দিছুং। যারা ভোট নেছে, সেই ছ্যাওয়ালগুলা (ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা) খুব ভালো। এইনকা ভোট আর মুই দেখনাই।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজের মহল্লা নিউ সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টায় ভোট দেন। ওই সময়ে তার সঙ্গে থাকা সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ওই কেন্দ্রে ভোট দেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এরশাদ বলেন, ‘ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হচ্ছে। এটি নির্বাচন কমিশনের জন্য পরীক্ষা। তারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে, তা ইসিকে প্রমাণ করতে হবে।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা তার নিজের মহল্লা সালেমা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে বেলা ১১টায় ভোট দেন। একই কেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু। ভোট দেয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ঝন্টু বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। ভোটাররা ভালো পরিবেশেই ভোট দিচ্ছেন। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত, বিপুল ভোটেই জয়ী হব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জয় উপহার দেব।’
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নগরীর আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সোয়া ৯টার দিকে ভোট দেন। ভোট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জয়ের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ খুবই ভালো আছে। কোনো ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির খবর পাইনি। উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই ভোট দিচ্ছেন।
সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে মাহীগঞ্জের দেওয়ানতুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোট দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা। ভোট দেয়ার পর তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছি। দুপুর সোয়া ১২টায় তাজহাট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে বিএনপির এ প্রার্থী বলেন, ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা যাচ্ছে। ভোটাররা আতঙ্কগ্রস্ত কিনা জানি না। তিনি বলেন, অনেক কেন্দ্রে আমার এজেন্ট ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে। আবার অনেক কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। এমনকি আমার সঙ্গেও বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে প্রশাসন। কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় আমার সঙ্গে দু’জনের বেশি নেতা থাকতে দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো কোনো প্রার্থী ১০-১২ জন নিয়ে কেন্দ্র পরিদর্শন করলেও কিছু বলা হচ্ছে না। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচএম শাহরিয়ার (আসিফ) সকাল ১০টায় নিউ সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগ করেন।
সহিংসতায় আহত ১ : রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচন মোটা দাগে শান্তিপূর্ণ হলেও ভোট গ্রহণ শেষে বিকাল সাড়ে ৪টায় সিটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মডার্ন পাবলিক স্কুল কেন্দ্রে সহিংসতা হয়েছে। দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে শাহীন নামে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তিনি এলাকার আবদুস সাত্তারের ছেলে। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা যায়, বিকাল ৪টার দিকে ভোট গ্রহণ শেষে কাউন্সিলর প্রার্থী শাফিউল আলম শাফির (লাটিম) সমর্থক ভোট কেন্দ্রের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় দুই কাউন্সিলর প্রার্থী শাহ আলম ও জাকারিয়া আলম শিবলুর সমর্থকরা তাকে বাধা দেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শাহীনকে মারধর করেন তারা। পরে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিজের কেন্দ্রেই ঝন্টুর হার : নিজের কেন্দ্রেই ভোটে হেরেছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বিদায়ী মেয়র ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু। ওই কেন্দ্রে তার চেয়ে ১২৫ ভোট বেশি পেয়েছেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
বৃহস্পতিবার দিনভর ভোট গ্রহণের পর সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সালেমা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেন। সেখানে ঝন্টু নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯৪ ভোট। লাঙ্গল প্রতীকে মোস্তফা পেয়েছেন ৫১৯ ভোট।
বিএনপির ফল বর্জন : কারচুপির অভিযোগে রসিক নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। এ সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমার বিজয় নিশ্চিত ছিল; কিন্তু ষড়যন্ত্র করে আমাকে হারানো হয়েছে।
জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ মুদ্রার এপিট-ওপিঠ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নগরীর মহল্লায় মহল্লায় আমার যে জনপ্রিয়তা, তারা একজোট হয়ে ষড়যন্ত্র করে হারিয়েছে। ফল বর্জনের কারণ ব্যাখ্যা করতে বললে তিনি বলেন, সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বকশী কেন্দ্রে দিনের বেলা সিল-স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে। এর মানে কী হতে পারে? আমার কর্মী ও তাদের পরিবারের ৬০ হাজারেরও বেশি ভোট রয়েছে। কিন্তু ফলাফলে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ২০১২ সালের ভোটে দলীয় প্রতীকের বাইরে থেকে নির্বাচন করেও এর চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছি। এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে যেখানে আরও বেশি ভোট পাওয়ার কথা। কিন্তু হল উল্টোটা। এসবই নির্বাচনে কারচুপির বড় প্রমাণ। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রইস আহমেদ, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মনিরুজ্জামান হিজবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রসিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা