স্তম্ভের গায়ে যা দেখেছি: চিনামাটির পাহাড়ে স্তম্ভটি দেখে বিস্মিত হলেও পর্যবেক্ষণে বিস্মিত হইনি। পর্যবেক্ষণ করে শুধু ধূ ধূ প্রাচীনের অন্ধকারের দিকে মন ছুটে গেছে। স্তম্ভটি শুয়ে জানান দিচ্ছে কতো প্রাচীন তার বয়স। ওতে যে সব আঁকাজোকা দেখেছি তাই তুলে ধরছি।
স্তম্ভের গায়ে অনেক চিহ্ন দেখেছি। ওগুলো পরিক্ষা ছাড়া কিছু বলা কঠিন। চিহ্নগুলো লেখা না-কি অন্য কিছু তা-ও নির্ণয় করা দুরূহ। স্তম্ভটি প্রাচীনত্বের চেহারা নিয়ে এখনো টিকে আছে। ওটার গায়ে যা আছে তা তুলে দিচ্ছি।
প্রথম অংশঃ উপর দিকের বাম দিক থেকে- প্রলেপ রয়েছে লেখাটি অস্পষ্ট এবং কিছু অংশ খসে গেছে।
দ্বিতীয় অংশঃ মাঝখান থেকে প্রলেপ খসে পড়ার দাগ রয়েছে। লেখা নেই।
তৃতীয় অংশের ছবি সংযোজিত হলো।
চতুর্থ অংশঃ প্রলেপে লেখা খসে পড়ার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে।
আমি যদি ওই স্তম্ভের আকৃতি সহ আঁকতে পারতাম তাহলে বিষয়টা আরো স্পষ্ট হতো।
যখন বলেছি মানুষ বাস থেকে ভাষার উৎপত্তি তখন মানুষ বাসের এলাকা গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। আমাদের অঞ্চল যখন উন্নত জীবনের নগরায়নে সমৃদ্ধ তখন পৃথিবী গ্রহের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে মানুষ বা প্রাণি বসবাসের অনুকূল পরিবেশের ছোঁয়া লাগেনি। সে জন্য আমাদের প্রাচীন সভ্যতাগুলো কতোটা প্রাচীন তা উন্মেচিত হচ্ছে কালে ভাদ্রে। যুগের পালে যে হাওয়া লেগেছিলো সে পালতোলা সভ্যতার নৌকো ধীরে ধীরে দুনিয়ার অন্যান্য স্থানে বিচরিত হয়েছে। পুরাতনকে ত্যাগ করে ওই সময়ে নতুন সভ্যতার সুত্রপাত করেছে। ভুলে গেছে তার পূর্ববর্তী সভ্যতার উৎপত্তিস্থলকে। পরবর্তী সভ্যতাগুলো এতোদিন ধরে সভ্যতার পুর্বপুরুষকে বিস্মৃত ভেবে অনেক পরের সভ্যতাকেই প্রাচীনত্বের আবরণে রঙ্গিন করে তুলেছে। মানুষের প্রাচীনত্বের সময় রেখার ধারণা এক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করে চলেছে। এর যাত্রা পথে ক্রিস্টিয়ান ভায়োলেটির (Christian Violatti) সময় রেখা হতে আমরা সাহায্য নিতে পারি।
সময় রেখায় জীবনের ধারণা: ২.৬ মিলিয়ন বছর পূর্বের যুগ হলো পুরোপলীয় (Paleolithic or old stone age)। অর্থাৎ পুরাতন পাথর যুগ। এটা ২.৬ মিলিয়ন বছর হতে শুরু ও শেষ হলো ১২০০০ বছর পূর্বে। এসময়কে বরফ যুগের চক্র ও আন্ত:বরফ যুগীয় চক্র বলে ধারণা করা হয়। এসময়কে প্লাইসিস কাল বা অধিযুগও (Pleiscen epoch ) বলা হয়।
আবার শুক্র গ্রহের মতো সুন্দর অবয়ব একটি কালচক্র ধারণা করা হয়। এটার শুরু চল্লিশ হাজার থেকে দশ হাজার প্রাক-অব্দের মাঝে আবর্তিত। সতের হাজার থেকে পনের হাজার প্রাক-অব্দে লাসকাউ (Lascaux) গুহায় অন্তবর্তীকালের একটি যুগের খোঁজ পাওয়া যায়। এটা ইউরোপের ফ্রান্সে অবস্থিত।
বার হাজার থেকে নয় হাজার প্রাক-অব্দকে মধ্যপাথর যুগ বলা হয়। এ মধ্যযুগীয় পাথর যুগের (Mesolithic) দীর্ঘায়ু পাঁচ হাজার বছর। মাঝারী ধরণের কৃষিকাজ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত নয় হাজার থেকে চার হাজার প্রাক-অব্দ পর্যন্ত এ কালকে ধারণা করা হয়।
এগার হাজার সাতশো প্রাক-অব্দ শেষ বরফ যুগ। এ যুগের অনেক গল্প বা কাহিনী বর্তমানে উর্বর অর্ধচন্দ্রের মতো ঘূর্নয়মান। এ যুগটি সাধারণত সাত হাজার প্রাক-অব্দের এশিয়া সুমেরীয় ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতাকে বুঝিয়ে থাকে।
আবার নয় হাজার থেকে তিনহাজার তিনশো প্রাক-অব্দকে নতুন পাথর যুগ বলা হয়। এ সময়ে মানুষ ব্রোঞ্জের ব্যবহার শিখে ফেলে। এ সময় মানুষ কৃষি পণ্য উৎপাদনে সক্ষম হয়। আট হাজার প্রাক-অব্দে মানুষ আগুনের সন্ধান পায়। তখন থেকেই পোড়া মাটির পাত্র তৈরি শুরু হয়েছে বলে ধরা হয়।
ধারণা হতেই গবেষণা। তারপর পরিক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন। আমরা সেই ২.৬ মিলিয়ন বছর পূর্বের ধারণা থেকে বলতে পারি মানুষ সেই পুরোনো পাথর যুগেই কথা কইতো। তাদের সে সব কথা কেউ জানে না। আরাপাড়া চিনা মাটির পাহাড়ে পুরোনো পাথর যুগের লক্ষণ বিদ্যমান। যান্ত্রিক পরিক্ষায় জানা যাবে ওটা কতো পুরোনো মানুষের আস্তানা। এর সুরাহা হলেই জানার দুয়ারে একটি বড়ো প্রশ্নের সমাধান পাওয়া সম্ভব হবে। এমন গবেষণায় ধারণা দেবে মানুষের কথা বলা বা ভাষা সৃষ্টির চটুল উত্তর। মানুষের সভ্যতার ইতিহাস ও ভাষা উৎপত্তির অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবে মানুষ।
লেখকঃ প্রধান শিক্ষক, শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, টঙ্গি, গাজীপুর।
মোবাইলঃ ০১৮৫৬-৪৭০০৫০
ইমেইল-sshs.tongi@yahoo.com
