Thursday , 23 March 2023
আপডেট
Home » গরম খবর » রোহিঙ্গা পাচার করে দাস হিসেবে বিক্রি: টেলিগ্রাফ
রোহিঙ্গা পাচার করে দাস হিসেবে বিক্রি: টেলিগ্রাফ

রোহিঙ্গা পাচার করে দাস হিসেবে বিক্রি: টেলিগ্রাফ

ডেস্ক রিপোর্ট: রোহিঙ্গাদের ভাল বেতনে কাজ ও উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাচার করা হচ্ছে। এমনকি তাদেরকে দাস হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে শনিবার ভারতের অনলাইন দ্য টেলিগ্রাফ।
এতে বলা হয়েছে, ভারতের মধুরাতে পরিত্যক্ত বস্তু কুড়ানি হিসেবে অর্থাৎ টোকাই হিসেবে ৮ হাজার ২৩৮ রুপির বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গা আবদুল রহমানকে। তিনি বসবাস করেন কোনোমতে পলিথিন ব্যাগ দিয়ে তৈরি ঘরে। অথচ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তার ছিল সুফলা কৃষিজমি। তাকে রোহিঙ্গাদের একটি বসতি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই বসতিটি এমন একটি স্থানে, যেখান থেকে তিনি তার দেশের বাড়িতে যেতে পারেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরো সাতটি পরিবার। বাংলাদেশের আশ্রয় শিবির থেকে তাদেরকে পাচার করে নিয়ে ভারতে বিক্রি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ তাদেরকে উদ্ধার করেছে।
৪৫ বছর বয়সী আবদুল রহমান বলেছেন, ভারতে আমার থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। মথুরায় আমার মাথার ওপর একটি ছাদ আছে। আমাকে যারা কাজে নিযুক্ত করেছে তারা খাবার দেন। আমাকে যারা ভারতে নিয়ে এসেছে, তাদের এজেন্ট আমাকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। যখন সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করি তখন মোটেও ভয় পাই নি। ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিরাট এলাকায় এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেছেন। আবদুল রহমানকে চার বছরের চুক্তিতে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিরাটে।
২০১৩ সালে ভারতের মধ্যে তৃতীয় বৃহৎ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল এখানে। সেখানে আবদুল রহমান যে বসতিতে ছিলেন তা ওই শহরের সাতটির একটি। এখানে রয়েছে ১২০টি পরিবার।
টেলিগ্রাফ আরো লিখেছে, জাতিসংঘ এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বলেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গারা হতে পারে মানব পাচারকারীদের উর্বর ক্ষেত্রে। তাদেরকে ভারতে দাস হিসেবে ব্যবহারের পূর্বাভাস এখন প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসছে।
টেলিগ্রাফের রিপোর্ট অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। ভারতে তাদের অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে। এখন ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। রোহিঙ্গাদের কাছে হরিয়ানা রাজ্যের মিরাট খুবই জনপ্রিয়। কারণ, এখানকার স্থানীয়রা তাদেরকে দিয়েছেন থাকার জায়গা। ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন কমিটি ফর ইরাডিকেশন অব বন্ডেড লেবার-এর আহ্বায়ক নির্মল গোরানা গত মাসে এমন দাসত্বের শিকার ১৩ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছেন। মিরাটে রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন বিষয়ক প্রধান নূর আলম।
তিনি বলেন, প্রতি দু’মাসে এখানে জনসংখ্যা বাড়ছে। অধিক বসতি স্থাপনের জন্য এখানে রয়েছে জমি। এ ছাড়া প্রয়োজন বাঁশ, প্লাস্টিক, রশি, কার্ডবোর্ড। সব মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার রুপি প্রয়োজন। কিন্তু নতুন আসা রোহিঙ্গাদের কাছে এত অর্থ নেই। উদ্ধার করা হয়েছে আরেক রোহিঙ্গা সাদিক হোসেনকে (২২)। তাকে যারা কাজে নিয়োজিত করেছে তাদের কাছ থেকে তিনি ২৫ হাজার রুপি ধার করেছেন। সেই ঋণ এখনো শোধ হয় নি। তিনি চার বছর আগে থেকে মিরাটে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, এখনও আমার ঋণ আছে ৫০০০ রুপির বেশি। কিন্তু এই অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ক্ষেত্রে ভারতে কাজ পাওয়া খুবই কঠিন একটি বিষয়। কারণ, কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে সবার আগে চায় পরিচয়পত্র। অন্যদিকে তাদেরকে ভারতে নিরাপত্তায় হুমকি মনে করে সরকার ফেরত পাঠানোর কথা বলছে।
ভারতের দাবি, তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সন্ত্রাসীদের যোগসূত্র থাকতে পারে। জম্মুতে গাড়ির একটি কারখানায় নিয়মিত হিসেবে কাজ খুঁজে পেয়েছেন হাতেগোনা কয়েকজন রোহিঙ্গা। তার অন্যতম দিল মোহাম্মদ (২০)। তিনি মাসে ১১ হাজার রুপি উপার্জন করেন। কিন্তু তাকে নিরাপত্তা হুমকির কারণে ভারত ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি দু’হাত তুলে প্রার্থনা করি আর বলি আমি সন্ত্রাসী নই। আমি একজন শ্রমিকমাত্র। একদিন নিজের দেশে ফেরার স্বপ্ন দেখি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*