ডেস্ক রিপোর্র্ট: শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘সহনীয় মাত্রায়’ ঘুষ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সহনীয় ঘুষের পরিমাণ কত- তা নিয়ে অনেকেই ছিলেন অন্ধকারে। তবে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসিরুদ্দিন কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য করে গোয়েন্দাদের জালে ধরা পড়েছেন। এতে সহনীয় ঘুষের পরিমাণ নিয়ে একটি ধারণা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন অনেকে। তারা বলছেন, মন্ত্রীর পরামর্শে তারা সহনীয় মাত্রায় ঘুষ নিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। শুধু মন্ত্রীর পিও এবং উচ্চমান সহকারী নাসিরই নন, পুরো মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বিভাগ ডুবেছে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে। তবে লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিকের সঙ্গে একটি ঘুষ বাণিজ্য করতে গিয়ে ওই দু’জন গোয়েন্দাদের জালে ধরা পড়েন। এদিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ -ডিবি, মোতালেব ও নাসিরকে গ্রেফতারের কথা জানানোর পর মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা ভবনের দুর্নীতিবাজ চক্রের অন্যেরাও আছেন আতঙ্কে। এরই মধ্যে আবু আলম নামে অপর এক কর্মচারী দু’দিন ধরে লাপাত্তা। মঙ্গলবার তিনি অফিসে না আসায় তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া যায়। আবু আলমের বাসা থেকে জানানো হয়েছে, দু’দিন আগে তিনি বাসা থেকে বের হন। এর পর তার মোবাইল ফোনও বন্ধ থাকায় কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র বলছে, নাসিরুদ্দিন ও মোতালেব নিখোঁজের পর ডিবি রোববার তাদের আটকের কথা জানায়। সেই সাথে তাদের দু’জনের ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, গাড়ি, জমি ও বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণের তথ্য জানা জানি হয়। ৩০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে মোতালেব ঢাকায় ৪ কোটি টাকার ৭ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করছেন। আর নাসির বেতন পান ১৫ হাজার ঢাকা। কিন্তু তিনিও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দুটি ফ্ল্যাটসহ গাড়ির মালিক। বিষয়টি জানাজানির পর এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, শিক্ষা ভবনসহ পুরো শিক্ষা বিভাগসহ সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। সেই সাথে ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দুর্নীতির দায় শিক্ষামন্ত্রীর ওপরও বর্তায় বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। এর আগে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ঘুষের টাকাসহ ধরা পরায় তৎকালিন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করে ছিলেন। তাহলে শিক্ষামন্ত্রীও কি এবার পদত্যাগ করবেন? সে প্রশ্নও তোলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঘুষ বাণিজ্যের নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতারের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ চক্রের আরো ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন। গোয়েন্দারা তাদেরকে নজরে রাখছেন। যেকোনো মুহূর্তে তাদেরকেও গ্রেফতার করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। তবে এই মুহূর্তেই তাদের নাম জানাতে চাচ্ছেন না গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এদিকে ঘুষ বাণিজ্যের পাশাপাশি ওই চক্রটি ব্যাপক আলোচিত বিভিন্ন সময় পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। গোয়েন্দারা এ বিষয়টিও মাথায় রেখে গ্রেফতাকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তাদের কাছ থেকে তথ্য বের করতে আজ মঙ্গলবার যেকোনো সময় তাদেরকে আদালতে তুলে রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাচ্ছে ডিবি। ডিবি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।
সুরঞ্জিত থেকে নাহিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দৌরাত্ম্য: ২০১২ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত সহকর্মীর ঘুষ কেলেঙ্কারির পর এবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দুর্নীতি। রোববার শিক্ষামন্ত্রীর পিও মো. মোতালেব হোসেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে কর্মরত উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার এপিএসের দুর্নীতির কারণে ঘটনার আট দিনের মাথায় পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বললেও শিক্ষামন্ত্রী বলছেন,তাকে কেউ দুই কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়ে অবহিত করেনি।
সাধারণত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মন্ত্রীর যাবতীয় কাজের হিসেব রাখেন। জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রীর পিএর কাজ বিভিন্ন ফাইল, অভিযোগ, আবেদন রিসিভ করা। সিন (দেখানো) করানো। সিন করানোর পর ফাইল ডাউন করা (মন্ত্রীর কাছ থেকে সচিব দফতরে পাঠানো)। মন্ত্রীকে টেলিফোনে সংযোগ করিয়ে দেয়া। এছাড়া, মিটিং ও অন্যান্য কাজে আপ্যায়ন করা মূল কাজ।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রিসিভ ও ডেসপাচ শাখার উচ্চমান সহকারী মো. নাসিরুদ্দিনকে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকাসহ গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরে মোতালেব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সরাসরি কিছু না বলে সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘(কেউ) কোনও অন্যায়, দুর্নীতি বা ঘুষের মধ্যে জড়াবে না (চাকরিবিধিতে) এরকম তো বলা আছেই। কিন্তু তারা এ ধরনের কাজে জড়িত, এমন রিপোর্ট কেউ আমাদের দেয় নাই।’
এর পর মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী জানান, গ্রেফতারকৃত দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা। তবে তিনি এ নিয়ে পদত্যাগ করবেন কিনা- সে বিষয়ে কিছুই বলেননি।
এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষা ভবনে ‘সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার’ পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য রেখে তোপের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী। টিআইবি বিবৃতি দিয়ে এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরলেও সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশিত সংবাদ ভুল বলে দাবি করেন মন্ত্রী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিআইএর (পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর) এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘দায়িত্ব নেয়ার পর সব সংস্থার সঙ্গে আমি বসেছি। তখন বলেছি, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সব জায়গায় এ কথা বললেও ইইডির (শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর) সভায় বলেছি, আপনারা ভালো কাজ করবেন। আপনারা ঘুষ খাবেন, কিন্তু সহনশীল হয়ে খাবেন। কেননা, আমার সাহসই নাই বলার যে, আপনারা ঘুষ খায়েন না।’ ওই সময় নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজেকে ও সব মন্ত্রীকেও চোর বলে আখ্যায়িত করেন।
মোতালেব-নাসিরদের অজানা কাহিনী: কৃষকের ছেলে। চাকরি পান তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে। পদোন্নতি পেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা। সেই ‘সুবাদে সহনীয় ঘুষ বাণিজ্য’ করে কোটি কোটি টাকার মালিক। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া এই ব্যক্তি হলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেন। যিনি ঘুষ কেলেঙ্কারিতে শেষ পর্যন্ত ধরা খেয়েছেন গোয়েন্দাদের জালে। এর আগে শিক্ষামন্ত্রীর উপদেশে ‘সহনীয় মাত্রায়’ ঘুষ গ্রহণের তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির হাতে ধরা পরেন দফতরের আরেকজন। তিনি হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন। প্রথমে নিখোঁজের অভিযোগ আসলেও রোববার তাদেরকে আটকের কথা জানায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবি। একই সময় নিখোঁজ বিতর্কিত লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক মতিনকেও ডিবি আটকের কথা জানায়। ডিবির হাতে তাদের আটক হওয়ার খবর আসার পরই দেশজুড়ে শুরু হয় নানা গুঞ্জন।
এরই মধ্যে সোমবার রাতে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে বনানী থানায় মামলা করে ডিবি পুলিশ। সেই সাথে তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এখন তারা ডিবির হাতেই আছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ কেলেঙ্কারির কথা স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন। এদিকে, তাদের ঘুষ-বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতি তদন্ত শুরু করার কথা জনিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। মঙ্গলবার সকালে দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
পিও মোতালেবের উত্থান যেভাবে: ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লাহাট ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেনছের আলীর দুই ছেলের মধ্যে বড় মোতালেব। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে টাইপিস্ট হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। পিও পদে পদোন্নতি পান ২০০৮ সালের ৯ এপ্রিল। দুই বছর ধরে তিনি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পিও হিসেবে কাজ করছেন। এর আগেও এক দফায় কয়েক মাস এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. হেলাল উদ্দিন ও যুগ্ম সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) বেলায়েত হোসেনের পিও হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। মাত্র ১৬ হাজার টাকা স্কেলে চাকরি করা একজন ব্যক্তি কীভাবে রাজধানীতে চার কোটি টাকা মূল্যের বাড়ির মালিক হলেন, তা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে শিক্ষা প্রশাসনসহ সব মহলে। রোববার রাতে সরকারি দ্বিতীয় শ্রেণির এই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের পর বের হতে শুরু হয়েছে তার এত টাকার খবর। জানা যাচ্ছে, ঘুষ-বাণিজ্যই তার অবৈধ আয়ের মূল উৎস।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পিও মোতালেব। দ্বিতীয় শ্রেণির এই কর্মকর্তা জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে বেতন পান। তার মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা। মোট বেতন ৩০ হাজার ৬০০ টাকা। অফিস থেকে ছয় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি। বেতন থেকে ঋণের কিস্তি বাবদ প্রতি মাসে কাটা যায় ১২ হাজার টাকা। গ্রিন রোড স্টাফ কোয়ার্টারের সরকারি বাসায় থাকেন তিনি। তাই বাড়িভাড়া বাবদ কেটে নেওয়া হয় ১৪ হাজার টাকা। ঋণের কিস্তি আর বাড়িভাড়া দিয়ে তার হাতে থাকে মাত্র চার হাজার ৬০০ টাকা। এই টাকায় তিন সন্তান, স্ত্রীসহ তিনি সারা মাস কীভাবে কাটান, তা এক অপার রহস্য। এই রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে রাজধানীতে তার বিশাল বাড়ি নির্মাণের ঘটনায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে মোতালেব বছিলার পশ্চিম ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় তিন কাঠা জমি কেনেন। ‘বি’ ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের এই ২৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে ২০১৬ সালের শেষদিকে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১০ তলা ফাউন্ডেশনের বাড়িটি সাততলা অবধি হবে। এর মধ্যে ছয়তলা পর্যন্ত ছাদ হয়েছে। প্রতি তলায় দুটি করে ইউনিট। একেক ইউনিট প্রায় ৮৬০ বর্গফুট। দোতলার দুটি ইউনিট ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে ভাড়াটে ওঠার কথা ফেব্র“য়ারি থেকে। বাড়ির নিচে রড, ইট ও খোয়া পড়ে রয়েছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, দ্রুতগতিতে এ বাড়ি নির্মাণের কাজ চললেও গত শনিবার বিকেলে এখান থেকেই কয়েকজন মোতালেবকে কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। পাশের ২৭ নম্বর বাড়ির মালিক আতাউল্লাহ বলেন, তিনি এবং মোতালেব ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে একই সঙ্গে জমি কিনেছিলেন। তখন প্রতি কাঠার মূল্য ছিল ৯০ হাজার টাকা।
স্থানীয়রা জানান, এ এলাকায় প্রতি কাঠা জমির বর্তমান বাজারমূল্য ৬০ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোতালেবের তিন কাঠা জমির দাম বর্তমানে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রীর দপ্তরে কাজ করার সুবাদে পুরো মন্ত্রণালয়েই তার দাপট ছিল। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় তিনি প্রভাব বিস্তার করতে পারতেন। আরও কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মচারীকে নিয়ে তিনি একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। এই সিন্ডিকেট শিক্ষকদের বদলি থেকে শুরু করে পদোন্নতি, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পুরনো প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি ও শাখা খোলা, মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটা ও সনদ-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত দায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের অনুমতি পর্যন্ত করিয়ে দিত। সর্বশেষ লেকহেড গ্রামার স্কুল থেকে ছয় লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ফেঁসে যায় এ সিন্ডিকেট।
এদিকে, পুলিশের হাতে গ্রেফতার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনও যেন হাতে পেয়েছেন আলাউদ্দিনের চেরাগ। ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে তার সর্বমোট বেতন ১৫ হাজার ২৮০ টাকা। অথচ তার রয়েছে বিলাসবহুল দুটি ফ্ল্যাটসহ একাধিক গাড়ি।
আগেও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে: মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই পিও হিসেবে আছেন মোতালেব। মাঝখানে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর মন্ত্রীর সদয় দৃষ্টিতে দুই মাসের মধ্যে ফের পিও’র দায়িত্বে চলে আসেন। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হওয়ার পর কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। রাজধানীর বছিলায় ছয়তলা আলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন মোতালেব। এছাড়াও মিরপুর ডিওএইচএসে তার ফ্ল্যাট রয়েছে বলে তার সহকর্মীরাই তথ্য দিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রীর কাছের লোক: পশ্চিম ধানমন্ডির বসিলা এলাকার সবাই একনামেই চিনেন মোতালেবকে। এই এলাকাতেই কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন তৈরি করছেন। এলাকার সবাই তাকে চিনেন শিক্ষামন্ত্রীর কাছের লোক হিসেবে। ছুটির দিনে ওই বাড়িতে যখনই আসতেন অল্প সময়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ছুটে যেতেন অনেকে। পাড়ার গলিতে তখন গাড়ির দীর্ঘ সারি। আগতরা তাকে লিডার হিসেবে সম্বোধন করেন।
যেভাবে কোটিপতি হয়েছেন কর্মচারী নাসির: পুলিশের হাতে গ্রেফতার মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মচারী উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনের মূল চাকরি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে। তিনি সংযুক্ত রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের পত্র গ্রহণ ও বিতরণ শাখায়। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। দুদকও কোটিপতি এই কর্মচারীর দুর্নীতি তদন্ত করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, জঙ্গি ও ধর্মীয় উস্কানির দায়ে সম্প্রতি বন্ধ হওয়া লেকহেড গ্রামার স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকায় রফা হয়। অগ্রিম হিসেবে ছয় লাখ টাকা নাসিরের হাতে দেওয়া হয়। কাজ হলে বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত বলে জোর অভিযোগ উঠেছে। নাসির গ্রেফতার হওয়ায় ওই শাখার বেশ কয়েকজন আতঙ্কে আছেন।
সূত্র বলছে, উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন ১৯ জানুয়ারি হয়ে যাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বনভোজন আয়োজন কমিটিতে ছিলেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, বনভোজনের তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পর থেকেই নাসির তৎপরতা শুরু করেন। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বনভোজনের নামে বিরাট অঙ্কের চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ আসতে থাকে। এ ব্যাপারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা তাকে ডেকে নিয়ে সাবধান করার পরও থামেননি তিনি। তাকে মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা ওঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হলেও রাজধানীর এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে নাসির চাঁদা চাননি। বনভোজনের একদিন আগে নিখোঁজ হওয়ার আগপর্যন্ত নাসিরের কাছে প্রায় ২৯ লাখ টাকা ছিল বলে কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন।
মাউশির কর্মচারী সমিতির নেতারা জানান, জাল সনদে চাকরি দেওয়া ও এমপিওভুক্তিতে জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম করে নাসির এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। ২০১৩ সালে এমপিও জালিয়াতির দায়ে নাসিরকে ঢাকার বাইরে সিরাজগঞ্জে বদলি করা হয়েছিল।
শুধু মন্ত্রণালয় নয়, মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কখনো শক্ত ব্যবস্থা নেয় না বলে সমালোচনা রয়েছে। কিছুদিন আগে ডিআইএর এক কর্মকর্তাকে ফাঁদ পেতে ঘুষসহ হাতেনাতে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই দপ্তরে আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
নাসিরের জন্য তথ্যমন্ত্রীর তদবির: সূত্র বলছে, এর পর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সুপারিশ নিয়ে মাউশিতে বদলি হয়ে আসার চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু তৎকালীন মাউশির মহাপরিচালক তার ব্যাপারে সায় দেয়নি। পরে মোতালেব চক্রকে ধরে প্রেষণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসেন নাসির। দায়িত্ব দেয়া হয় পত্র গ্রহণ ও ছাড়পত্র শাখায়। তবে তিনি সব শাখায় দৌড়ঝাঁপ করতেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তাকে আনার পেছনে শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক একজন এপিএস কলকাটি নাড়েন বলে আলোচনা আছে।
নাসির খিলক্ষেতের কনকর্ড লেকসিটি টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে সপরিবারে বসবাস করেন। ওই ভবনে তার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাসিরের এক সহকর্মী। নাসির খিলক্ষেত এলাকায় এফএনএফ (ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি) ক্লাব নামে (সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেন। নাসির এই ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
যেভাবে গ্রেফতার হলেন তারা: গোয়েন্দা সূত্রমতে, দীর্ঘদিন থেকেই শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ জন ও এই মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার প্রতি নজরদারি ছিল গোয়েন্দাদের। জঙ্গি তৎপরতা ও ধর্মীয় উস্কানির অভিযোগে লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধ হওয়ার পর স্কুলকে কেন্দ্র করে তদন্ত শুরু করেন গোয়েন্দারা। তদন্তের এক পর্যায়ে খালেদ হাসান মতিনের সঙ্গে নাসিরুদ্দিনের যোগাযোগের সূত্র পান তারা। ওই সূত্র ধরেই জানা যায় এতে সম্পৃক্ত রয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব। বিপুল অঙ্কের টাকার মাধ্যমে গোপনে দফারফা হয় লেকহেড স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। স্কুল খুলে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ক’জন। কথা ছিল টাকা দেয়া হবে কয়েক ধাপে। বিষয়টি জেনে তৎপরতা বৃদ্ধি করেন গোয়েন্দারা। অবশেষে টাকা নিতে গিয়ে গ্রেফতার হন নাসির উদ্দিন। একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় বাকি দুজনকেও। গ্রেফতারের পর সোমবার দিনভর ডিএমপি ও ডিবি পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। গ্রেফতারকৃতদের মামলা দিয়ে আদালতে হাজির করার প্রস্তুতি থাকলেও শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশ না আসায় তা সম্ভব হয়নি।
ঘুষের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁস: জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া লেকহেড গ্রামার স্কুলটিকে খুলে দিতে আদালতের আদেশ অমান্য করে রাষ্ট্রীয় নথি পাচার করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রেফতারকৃত দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ কাজের জন্য তারা নিয়েছিল মোটা অঙ্কের ঘুষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মচারী ও লেকহেড স্কুলের এক পরিচালকের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে এ কথা বলা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ আছে, আসামি মো. মোতালেব হোসেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থেকে লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক ও মামলার অপর আসামি খালেদ হাসান মতিনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে জঙ্গি কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বন্ধ হওয়া লেকহেড গ্রামার স্কুলটিকে আদালতের আদেশের শর্ত ভঙ্গ করে দ্রুত খুলে দেয়ার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে এবং রাষ্ট্রীয় গোপন নথিপত্রে আসামি লেকহেড গ্রামার স্কুলের এমডি খালেদ হাসান মতিনের কাছে বেআইনিভাবে হস্তাস্তর করে।
লেকহেড স্কুল খুলে দিতে সাড়ে ৪ লাখ টাকার চুক্তি: ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেছেন, ‘লেকহেড স্কুল খুলে দিতে পরিচালক খালিদ হাসান মতিনের সঙ্গে সাড়ে ৪ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিল শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. মোতালেব হোসেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (প্রেষণে) উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনের। এর মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধের সময় তাদেরকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব তথ্য জানান।
যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া তিন জনকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে সরকারি কর্মচারীদের ঘুষ লেনদেনের মামলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শিডিউলভুক্ত হওয়ায় মামলাটির তদন্ত করবে দুদক। আজই মামলার নথিপত্র দুদক কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে।’
আবদুল বাতেন আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া তিনজনই ঘুষ লেনদেনের কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া লেকহেড স্কুলের পরিচালক খালিদ হাসান মতিনের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে মতিনের বিরুদ্ধে আলাদা করে মামলা হবে।’
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে দশটায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বললেন, দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতারকৃত শিক্ষামন্ত্রণালয়ের দুই জনসহ লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিকের বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলা তদন্ত করবে দুদক। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। নথিপত্র পেয়ে তদন্ত কাজ শুরু হবে। মঙ্গলবাল সকালে দুদক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রীর পিওসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা: এদিকে, ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন ও লেকহেড স্কুলের পরিচালক খালেক হাসান মতিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ডিবি। সোমবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন ডিবির এসআই মনিরুল ইসলাম মৃধা। মামলা নম্বর ৩৬। বনানী থানার ডিউটি অফিসার এসআই রফিজ উদ্দিন জানান, রাতে ঘুষের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ১৬১, ১৬২ ও ১৬৩ ধারায় মামলাটি করা হয়। গত রোববার রাতে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত পিও মোতালেব হোসেনসহ তিন দিনে নিখোঁজ তিনজনকে গ্রেফতার করার কথা জানায় ডিবি পুলিশ।
মোতালেব-নাসির সাময়িক বরখাস্ত: ঘুষ লেনদেনের দায়ে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. মোতালেব হোসেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিন সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার কর্মকর্তারা এ কথা জানান।
মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, পিও মোতালেব হোসেনকে মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। আর নাসিরউদ্দিনকে প্রেষণ-প্রত্যাহার করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে সাময়িক বরখাস্তের জন্য বলা হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রীর পিও’র দুর্নীতি এবং তার ভিত্তিতে গ্রেফতারের ঘটনার পর ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু তিনি (পিও) সরকারি কর্মকর্তা, সেহেতু তার সম্পদের বিষয়ে ভালো করে তদন্ত করতে হবে।’ তিনি মনে করেন মন্ত্রণালয়কেই এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। তাছাড়া, একজন দুর্নীতিবাজ কখনওই এককভাবে দুর্নীতি করতে পারে না উল্লেখ করে এই পর্যবেক্ষক বলেন, ‘এই কর্মকর্তার সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত থাকতে পারে।’
এর আগে ২০১২ সালের অক্টোবরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামের দপ্তরের এমএলএসএস (পিয়ন) মোহাম্মদ আলীকে ঘুষের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তিনি ছাড়া পান। এখন তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরেই কর্মরত। শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরের আরেক কর্মকর্তাকে নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক উঠলে এর আগে তাকে ঢাকায় আরেকটি প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়।
