ডেস্ক রিপোর্ট: আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ৬ জনের রায় ঘোষণা হবে। আইন অনুযায়ী বিচারক যদি মনে করেন অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে, তাহলে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাণ্ড দেয়া হতে পারে। কম দণ্ড দেয়ারও ক্ষমতা আছে বিচারকের। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হলে খালাস পাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তবে, বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ এই মামলাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য আর মামলার গতিবিধিতে বিএনপি ধরেই নিয়েছে, সরকার- খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠাতে চায়। এ জন্য মামলার কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করে আসছে ক্ষমতাসীন দল। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও সে কথা আদালতে মামলা চলাকালে একাধিকবার বলেছেন। এদিকে, মামলার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করে রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করার পর পরই সরকার ও বিএনপি শিবিরে টেনশন, উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সেই সাথে উভয় পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি পাল্টা হুঁশিয়ারি আসতে শুরু করেছে। এতে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল বাড়ছে। একইসাথে আতঙ্কও বিরাজ করছে চারদিকে।
সূত্র বলছে, পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। রায়ের দিন ঘোষণার পর, পরবর্তী করণীয় নিয়ে শুরু হয়েছে এমপি-মন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ মহলে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাখা হয়েছে কঠোর অবস্থানে। সেই সাথে রায় পরবর্তী করণীয় নিয়ে ছাত্রলীগকেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে, বিএনপিও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। রায় এবং রায় পরবর্তী করণীসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামীকাল শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন দলীয় প্রধান।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলছেন, জিয়া অরফানেজ মামলার কার্যক্রম ও রায় ঘোষণা সরকারের নির্দেশেই হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার সাজা হলে ‘দেশে আগুন জ্বলবে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। আর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নেতিবাচক রায় ঘোষণা হলে তা হবে সরকার পতনের ভিত্তি। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যেন শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে একদিক থেকে ফয়সালার দিন। এই দিনে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গায়ে যদি ফুলের আঁচড়ও পড়ে বাংলাদেশের মানুষ গর্জে উঠবে।
এছাড়া, শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সারাদেশের মানুষ মনে করে রায় সম্পর্কে শুধু বিচারক জানার কথা। কিন্তু তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও মশিউর রহমান রাঙ্গা খালেদা জিয়াকে নিয়ে রায় সম্পর্কে যেসকল কথা বলেছেন- এটা তারা কীভাবে জানেন?
এর আগে, বৃহস্পতিবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চেয়ারপারসনকে সাজা দেয়ার বিষয়টি সরকার ‘আগেই ঠিক করে রেখেছে’। শেখ হাসিনা যে রায় চাইবেন, সে রায়ই হবে বলেও এর আগে মন্তব্য করেছেন তিনি।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ বলছে, খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে দেশে সন্ত্রাসের কার্যকলাপ করা হলে জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘রায় ঘিরে কেউ ‘বিশৃঙ্খলা বা ধংসাত্মক কার্যকলাপের’ চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেবে। কঠোর হস্তে পরিস্থিতি দমন করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আইন সবার জন্য সমান। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। কারণ তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। পেশাদার এবং জনগণের বন্ধু। সুতরাং জনগণের ক্ষতি হলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ শুক্রবার বলেছেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে দেশে আবার কোনো জ্বালাও-পোড়াও হলে তাতে বিএনপিই পুড়ে ‘ছারখার হয়ে যাবে’।
একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন সরকারি দলের আরও অনেকে।
এমন পরিস্থিতিতে, এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ফের রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। রায়ের আগে ও পরে কী ঘটতে যাচ্ছে- সেটা অজনা থাকলেও সরকার ও বিরোধী েিশিবরর হুমকি আর পাল্টা হুমকিতে জনমনে ভীতির সৃষ্টি হচ্ছে।
এর আগে, ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছিলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হবে।
এছাড়া, ২১ জানুয়ারি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে হবে। রায়ে তিনি সাজাও পেতে পারেন আবার বেকসুর খালাসও পেতে পারেন। তবে আমার ধারণা তার সাজা হবে। খালেদা জিয়ার সাজা হলে একদিনের জন্য হলেও তাকে জেলে যেতে হবে।
তাদের এমন বক্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও রাঙ্গার এ বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
২১ জানুয়ারি এক টুইট বার্তায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘শুক্রবার, জানুয়ারি ১৯, পত্রিকায় এসেছে, বিনাভোটের এক প্রতিমন্ত্রী বলেছে, “১৫ দিনের মধ্যে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে।” বিচারাধীন মামলার রায় ঘোষণা আদালত অবমাননা নয়কি? বিচারবিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় মাননীয় প্রধানবিচারপতি কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন, জনগণ সেইদিকে সতর্ক নজর রাখছে।’
তবে এ রায় নিয়ে আদালতের কর্মকাণ্ডে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই বলে দাবি করছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার দাবি, খালেদা জিয়ার সাজা হলেও তাদের কিছুই করার নেই। এক্ষেত্রে রাজনীতির প্রতিহিংসার কোনো যোগসূত্র নেই।
প্রসঙ্গত, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করবে ঢাকার পঞ্চম জজ আদালত। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৬ আসামি হলেন- তার বড় ছেলে তারেক রহামান, মাগুরার সাবেক বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানে ভাগ্নে মমিনুর রহামন।