নিজস্ব প্রতিবেদক: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান বলেছেন, একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছে বাংলাদেশ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে আবারো এক দলের আধিপত্যভিত্তিক ব্যবস্থার দিকে দৃশ্যত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এমন কথা বলেছেন । শনিবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটরিয়ামে ‘পলিটিক্যাল পার্টিজ: মুভমেন্টস, ইলেকশনস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় এ কথা বলেন। জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ডিস্টিঙ্গুইশড লেকচার-৪ এর অধীনে দেয়া ভাষণে তিনি বক্তব্য রাখেন।
এতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনী জোটের আবির্ভাব ঘটে বড় দুটি রাজনৈতিক দলে। এর ফলে তৃতীয় কোনো বিশ্বাসযোগ্য দল বা জোটের উত্থানের সম্ভাবনা সমূলে বিনাশ হয়েছে। জোট গঠনের এই চর্চার ফলে সুবিধা পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক অন্যান্য দল। তারা এটাকে দেশে তাদের ভিত্তি খুঁজে পাওয়ার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে।
ড. রওনক জাহান বলেন, প্রথম নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের প্রথম তিনবছরে (১৯৭২-১৯৭৫) দেশ এক দলের আধিপত্য থেকে একদলীয় ব্যবস্থার দিকে গিয়েছে। এরপর সামরিক শাসনের ১৫ বছরে (১৯৭৫ থেকে ১৯৯০) আমরা প্রত্যক্ষ করেছি রাষ্ট্র মদতপুষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান। ওই সময়ে অনেক দলকে তাদের স্বাধীনতা চর্চার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়। ১৯৯১ সালে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র। প্রথমে তা ছিল দুই দলের আধিপত্যের ব্যবস্থা। পরে তা হয়ে ওঠে দুই দলের নির্বাচনী জোটের লড়াই।
তিনি আরো বলেন, অন্য দেশগুলোর মতো দ্য ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট (এফপিটিপি) ব্যবস্থায় বাংলাদেশে দু’দল আধিপত্য বিস্তার করেছে। এ সময়ে বামপন্থিসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক দল কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। নির্বাচনী রাজনীতিতে তারা নিজেরা টিকে থাকতে পারেনি। বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছোট ভোট দলগুলোর সঙ্গে ভোট আদায় করার জন্য নির্বাচনী জোট গঠনের কৌশল গ্রহণ করতে থাকে। এর ফলে তৃতীয় কোনো বিশ্বাসযোগ্য দল বা নির্বাচনী জোটের উত্থানের সম্ভাবনা কার্যত নস্যাৎ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক দুর্বলতা, দলীয় বিভক্তি, শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীলতা, বংশগত নেতৃত্ব, রাজনীতিতে অপরাধপ্রবণতা, আদর্শের বিচ্যুতি- এসবই বাংলাদেশের রাজনীতিতে মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অর্থনীতির প্রফেসর রেহমান সোবহান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন, নির্বাচন ও গণতন্ত্র হলো একটি জীবন্ত ইস্যু। এটি কোনো একাডেমিক বিষয় নয়।
মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে মানুষের মাঝে গণঅভ্যুত্থান জাগ্রত করেছিলেন সে প্রসঙ্গে আলোকপাত করে প্রফেসর সোবহান বলেন, ওই মাপের গণজাগরণ আর কখনো অর্জন করা যায়নি। কারণ, আমরা আদর্শ থেকে সরে গিয়েছি। মিশনভিত্তিক পলিসি এজেন্ডা, দলীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আল মাসুদ হাসানুজ্জামান।
