নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ খাতকে উন্মুক্ত করায় আজ দেশের মানুষ সুফল পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরাই প্রথম বিদ্যুৎ খাতকে বেসরকারি পর্যায়ে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। নতুন কিছু করতে গেলে অনেকে বলে গেলো গেলো সব গেলো। কিন্তু আমি আশাবাদী। আইন করে বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন উন্মুক্ত করেছিলাম বলে মানুষ আজ সুফল পাচ্ছে।’
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমেই আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। কারণ বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজ করতে এসে গুলশানের হালি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় কয়েকজন জাপানি মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনার পরও আমাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমাদের তরফ থেকে যতটুকু সম্ভব তাদের নিরাপত্তা দেবো।’
এ সময় তিনি মহেশখালীতে স্থানীয় প্রতিনিধি ও জনগণকে বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের মেহমান, তারা উন্নয়নে আমাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তাই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের দেখতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণে যারা অর্থ পাননি তাদের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেখানে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠছে না, সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনও কাজে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রত্যন্ত এলাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহেশখালী এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রকৃতির খেয়াল খুশিতে সেখানের মানুষের জীবন জীবিকা চলে। সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে। এছাড়া আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। ফলে ওই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাÐ গতিশীল হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়তে চাই। আজ ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। যার মধ্যে ৪৬ লাখ সোলার সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমরা কয়লা, পরমাণু, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নেপাল-ভুটান-ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যবস্থা করছি। কারণ আমরা দেখেছি বিদ্যুৎ দিলেই মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসছে। আজ দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি। আমরা শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনই করছি না সেজন্য সঞ্চালন লাইনও নির্মাণ করছি। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালানো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
প্রসঙ্গত, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে বাংলাদেশ কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে এই প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় মাতারবাড়ীতে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিসহ কোল পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে। প্রকল্প এলাকায় সড়ক নির্মাণ, টাউনশিপ গড়ে তোলাসহ আনুষঙ্গিক কাজের প্রায় ১৭ শতাংশ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে বর্তমানে চারশ শ্রমিক কাজ করছেন। পর্যায়ক্রমে আরও দুই হাজার শ্রমিক এ প্রকল্পে যোগ দেবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য সাত কিলোমিটার নৌ চ্যানেল এবং কয়লা খালাসের জন্য জেটিও নির্মাণ করা হবে।
এর আগে, ২০১৫ সালের আগস্টে মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। এই প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে জাইকা, বাকি টাকা সরকার দেবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা