আজকের প্রভাত প্রতিবেদক : ব্লকচেইন প্রযুক্তি একটি নতুন ইন্টারনেট সেবা। এটি ব্যবহারের ফলে দেশে কোনো ধরনের হ্যাকিং সম্ভব নয়। কারণ এই সেবা যখন কেউ ব্যবহার করবে, পৃথিবীর সবার কাছেই একই ডাটা থাকবে। কেউ চাইলেও হ্যাক করতে পারবে না।
রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ বেসিস মিলনায়তনে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চলো’র উদ্যোগে ‘ব্লকচেইন ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনায় সব এসব কথা বলেন বিশ্বব্যাপী ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক লিডার মির হক।
তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবীর সব দেশই এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো? আমরা যদি বাংলাদেশের জন্য ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ না করি, এই সম্ভাবনাকে যদি কাজে লাগাতে না পারি তাহলে আমরা বাংলাদেশিরা প্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতে পারবো না।
মীর হক জানান, সম্প্রতি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট ফক্সের সঙ্গে ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে কীভাবে ব্লকচেইন কাজে আসতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
তিনি বলেন, এটি নতুন ধরনের ইন্টারনেট যা পৃথিবী বদলাতে পারে, দারিদ্র্য দূর করতে পারে, বেকারত্ব কমাতে পারে এমনকি মোবাইল ব্যাংকিংও নিরাপদ করতে পারে।
পৃথিবী প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যাফেয়া ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘ডুবাই, ভারতসহ সব দেশই নতুন নতুন যে প্রযুক্তি আসে তা লুফে নেয়। আমরা কেন পিঁছিয়ে থাকবো। আর এই ব্লকচেইন প্রযুক্তি এগিয়ে যেতে সংশ্লিষ্ট গবেষণা সরকারকে সহায়তা করবে বলেও আমি মনে করি।
অনুষ্ঠানে সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পল ব্রাইজেক বলেন, বাংলাদেশে ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ প্রযুক্তি প্রয়োগে এদেশে ডিজিটাল খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এস্তোনিয়া, দুবাই ইতিমধ্যে এ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে। গবেষণা অনুযায়ী, ৩৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে ব্লকচেইনের।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা চলোর পক্ষ থেকে ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করা ও এ সংক্রান্ত সেবা চালুর ঘোষণা দেন চলোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী দেওয়ান শুভ।
তিনি বলেন, দেশে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চলো বেশ কয়েক বছর দরে সার্ভিস দিচ্ছে। এবার আমরা আমাদের চালক ও গ্রাহকরা যাতে আরো ভলো মানের সেবা পায় সেদিকে নজর দিচ্ছি। ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো মূল্য কম কীভাবে নির্ধারণ করা যায় সে বিষয় কাজ করছি। এ পদ্ধতি প্রয়োগে খরচ কমবে। এতে চালক ও যাত্রী লাভবান হবেন। এছাড়া নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে এ ব্লকচেইন ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
সেমিনারে বলা হয়, ব্লকচেইন হলো ডাটা সংরক্ষণ করার একটি নিরাপদ ও উন্মুক্ত পদ্ধতি যে পদ্ধতি অনুযায়ী ডাটাগুলো বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি চেইন আকারে সংরক্ষণ করা হয় এবং এতে ডাটার মালিকানা সংরক্ষিত থাকে। এই পদ্ধতিতে ডাটা সংরক্ষণ করলে কোনও একটি ব্লকের ডাটা পরিবর্তন করতে চাইলে সেই চেইনে থাকা প্রতিটি ব্লকে পরিবর্তন আনতে হবে যা অসম্ভব। তাই এই পদ্ধতিতে ডাটা সংরক্ষণ করাটা বেশ নিরাপদ।
বক্তারা বলেন, ব্লকচেইন প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য অনেক সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। রাইড শেয়ারিং থেকে শুরু করে আর্থিক খাত, চিকিৎসাক্ষেত্র পর্যন্ত এ প্রযুক্তির নানা সুফল পাওয়া সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তির এ ক্ষেত্রটি এখন নানা দেশে গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এ প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হলে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় দেশ এগিয়ে যাবে। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, সিলিকন ভ্যালি বেজড প্রযুক্তি কোম্পানির সিনিয়র কনসালটেন্ট পল বরিজেক, দেশীয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চলোর সিইও দেওয়ান শুভো।
