Friday , 24 March 2023
আপডেট
Home » তথ্য ও প্রযুক্তি » মাইক্রোসফটের জরিপে হয়রানি নিয়ে উঠে এসেছে আশ্চর্যজনক তথ্য
মাইক্রোসফটের জরিপে হয়রানি নিয়ে উঠে এসেছে আশ্চর্যজনক তথ্য

মাইক্রোসফটের জরিপে হয়রানি নিয়ে উঠে এসেছে আশ্চর্যজনক তথ্য

আজকের প্রভাত প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ‘সিভিলিটি, সেফটি অ্যান্ড ইন্টার‌্যাকশনস অনলাইন- ২০১৭’ শীর্ষক এক ডিজিটাল সভ্যতা সূচক জরিপ পরিচালনা করেছে মাইক্রোসফট। টিনএজার ও প্রাপ্তবয়স্করা অনলাইনে কি ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয় এবং অনলাইনে তাদের সম্পৃক্ততা ব্যক্তিগত জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলে তার উপলব্ধি জানার উদ্দেশ্যে এ জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপের প্রতিবেদনে অনলাইনে হয়রানি নিয়ে অনেক আশ্চর্যজনক তথ্য উঠে এসেছে।
২০১৬ সালের জরিপকৃত ১৬টি দেশসহ এবার গবেষণা জরিপটি ২৩টি দেশে পরিচালিত হয়। জরিপে টিনএজার (১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী) এবং প্রাপ্তবয়স্কদের (১৮ থেকে ৭৪ বছর বয়সী) বর্তমানে অনলাইনে নাগরিকত্বের অবস্থা নিয়ে তাদের ধারণা ও উপলব্ধির কথা জানতে চাওয়া হয়। জরিপে উত্তরদাতাদের জীবনে মাইক্রোসফট গত বছরের চেয়েও তিনটি বেশি সহ মোট ২০টি পৃথক অনলাইন ঝুঁকি নিয়ে জানার চেষ্টা করে। গত বছরের চেয়ে এ বছর চারটি বিভাগে তিনটি বিষয় বেশি ছিলো। বিভাগগুলো হচ্ছে- আচরণগত, মনস্তত্বগত, যৌনাচারণগত ও ব্যক্তিগত।
সাম্প্রতিক এ জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মানুষের ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পৃক্ততা ও অনলাইন ঝুঁকির আশঙ্কা কমার কথা থাকলেও আশ্চর্যজনকভাবে, অনলাইনে হয়রানির শিকার উত্তরদাতারা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে অনলাইনে হয়রানি ঘটে তাদের পরিবার ও আশেপাশের মানুষদের কাছ থেকেই।
তিনজনের মধ্যে প্রায় দু’জন (৬১ শতাংশ) উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাদের অনলাইনে হয়রানিকারীর ব্যাপারে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। এক তৃতীয়াংশের বেশি (৩৬ শতাংশ) জানিয়েছেন, তারা ব্যক্তিগতভাবে হয়রানিকারীকে চেনেন। ১৭ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, যে হয়রানিকারীরা তাদের বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্য ছিলেন। যেখানে পাঁচজনে একজন (১৯ শতাংশ) উত্তরদাতা জানিয়েছেন, হয়রানিকারী তাদের পূর্ব পরিচিত ছিল। জরিপকৃত এক চতুর্থাংশ জানিয়েছেন, হয়রানিকারীকে তারা অনলাইনের মাধ্যমেই চিনতেন। ৩৭ শতাংশ জানিয়েছেন, অনলাইনে তাদের ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে আগন্তুকের কাছ থেকে এসেছে। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা বেশিরভাগ অনলাইনে হয়রানির ক্ষেত্রেই দায়ী বলে জানিয়েছেন অনলাইনে হয়রানির শিকার (৪১ শতাংশ) উত্তরদাতারা।
এছাড়াও, জরিপের প্রতিবেদনে যেসব বিষয়ে উঠে এসেছে :
গত বছরের মতোই, অর্ধেকের বেশি (৫৩ শতাংশ) মানুষ জানিয়েছেন, ব্যক্তিজীবনে হয়রানিকারীর সাথে তাদের দেখা হয়েছে। জরিপকৃত এ অংশে ৭৬ শতাংশ জানিয়েছেন, অনলাইনে হয়রানি ঘটার আগে থেকেই তারা হয়রানিকারীকে চিনতেন।
দশ জনের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, তারা হয়রানিকারীকে সরাসরি প্রত্যুত্তর করেছেন, যা গত বছরের চেয়ে ১১ শতাংশ কম যেখানে প্রত্যুত্তর দেয়ার সংখ্যা পূর্বের ১৭ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
এর বাইরে ইতিবাচক ব্যাপার হচ্ছে, ৬৬ শতাংশ সম্পূর্ণরূপে অথবা কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে নিরাপদ ও সুরক্ষিত বোধ করেছেন। বিপরীতক্রমে, যাদের হয়রানির বোধ হয়েছে (১২ শতাংশ) তারা অনলাইন ঝুঁকির ক্ষেত্রেই বেশি অনিরাপদ বোধ করেছে।
মাইক্রোসফট ডিজিটাল সিভিলিটি চ্যালেঞ্জে অনলাইন ঝুঁকির ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলোর কথা বলা হয়, জরিপে এমন তিনটি পদক্ষেপ উঠে এসেছে। পদক্ষেপগুলো হচ্ছে- ‘অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, ‘প্রত্যুত্তর দেয়ার আগে চিন্তা করা’ এবং ‘অনলাইন সুরক্ষায় অন্যের পাশে দাঁড়ানো’। এ তিনটি পদক্ষেপ অনলাইন হয়রানি প্রতিরোধে ডিজিটাল সিভিলিটি চ্যালেঞ্জে যে দশটি প্রধান প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে সেখানে উঠে এসেছে।
ধারাবাহিকভাবে, দ্বিতীয় বছরের মতো, অপ্রত্যাশিত কন্ট্যাক্ট অনলাইন ঝুঁকির শীর্ষে রয়েছে। ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন অনলাইনে তাদের সাথে এমন কিছু মানুষ যোগাযোগ করেছে যেটা তারা চাননি। এটা গত বছরের চেয়ে ৪৩ শতাংশের চেয়ে দুই শতাংশ কম। এরপর অনলাইনে সবচেয়ে ঝুঁকি হচ্ছে ঠগ, প্রতারণা ও জালিয়াতি। সামগ্রিকভাবে ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা জরিপে এটা জানিয়েছেন। এ বছরই প্রথম এ ঝুঁকি জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জরিপে ডিজিটাল সভ্যতার ক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সহানুভূতি ও উদারতার সাথে অনলাইনে যোগাযোগ করা এবং অনলাইনে সবাইকে মর্যাদা ও সম্মান দেয়া। পার্থক্যের ক্ষেত্রে, আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রেও আমাদের সম্মান প্রদর্শন করা উচিৎ এবং আলাদা সব বিষয়কেই সম্মান জানানো উচিৎ এমনকি মতবিরোধ থাকলেও। যোগাযোগ কিংবা সম্পৃক্ততার পূর্বে ভেবে নেয়া উচিৎ এবং গালিগালাজ ও ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
এছাড়াও, আমাদের উচিৎ, কোন বিষয় বা মতানৈক্যের ক্ষেত্রে প্রত্যুত্তরের পূর্বে ভালোভাবে ভেবে নেয়া এবং অনলাইনে এমন কিছু পোস্ট করা কিংবা পাঠানো থেকে বিরত থাকা যা কোন ব্যক্তিকে আঘাত করতে পারে, তার সম্মানহানি ঘটাতে পারে কিংবা কেউ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি বোধ করতে পারে। এক্ষেত্রে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, হয়রানির বিরুদ্ধে নিজেদের এবং অন্যদের জন্য রুখে দাঁড়ানো এবং সবাইকে সহায়তা করা অনলাইনে হয়রানির বিরুদ্ধাবস্থানে। পাশাপাশি, হয়রানির ব্যাপারে তাৎক্ষণিক রিপোর্ট করা এবং অনিরাপদ আচরণের প্রমাণ রেখে দেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*