ক্রীড়া প্রতিবেদক : বাংলাদেশ যুব গেমসের প্রথমবারের মতো জমকালো আয়োজনে যুব গেমসের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। বিকাল থেকে উৎসব মুখর পরিবেশ ছিল এই স্টেডিয়ামের চারিদিকে। শনিবার সন্ধা ৬টা ৪২মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পর্বে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পর্ব শুরু হয়েছে। যুব জাগরনের গেসমে অভিনব পদ্ধতিতে মশাল প্রজ্বলন হতেই বাতাসে উড়েছে কনফেত্তি, তালে তালে মেতেছেন ক্রীড়াবিদরা। চূড়ান্ত পর্বের আনুষ্ঠানিকতার শুরুতেই ছিল অংশগ্রহনকারী ২৬৬০ জন ক্রীড়াবিদদের মার্চপাস্ট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের তরুন ক্রীড়াবিদরা মার্চপাস্ট করে মুল মাঠে প্রবেশ করেন, অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রীকে। স্বাগত বক্তব্যে বিওএ সভাপতি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এসবিপি,এনডিসি,পিএসসি বলেন, যুব গেমস দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বড় অবদান রাখবে। নতুন ক্রীড়াবিদ তৈরি করার লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায় থেকে যুব গেমস আয়োজন। উপজেলা-জেলা-বিভাগীয় পর্যায় শেষে চুড়ান্ত পর্বে অংশ নিচ্ছে ২ হাজার ৬শ ক্রীড়াবিদ। গেমসে অংশ নেয়া তৃণমুল থেকে আসা ক্রীড়াবিদদের মধ্য থেকে সেরাদের বাছাই করে উন্নত প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিক মানে নেয়া হবে। এই ক্রীড়াবিদরা একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সোনালী সাফল্য এনে দিবে বাংলাদেশকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে বলেন, দেশের ক্রীড়াবিদদের এগিয়ে নিতে উন্নত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করবে সরকার। ছেলে-মেয়েদের সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার মধ্যে রাখতে সরকার সেই চেষ্টা করছে।
যুব গেমস উদ্বোধন ঘোষনা করতে এসে ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকদের ধন্যবাদ দিয়ে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে যুব সমাজকে গড়ে তুলতে হবে। খেলাধুলা ছেলেমেয়েদের সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে বড় ভুমিকা রাখে। যুব গেমসের মাধ্যমে সারা দেশে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে, এর মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের সঠিক পথে ধরে রাখতে হবে। খেলাধুলা যে কোন একজন যুবককে তাকে শৃঙ্খলাবোধ শিখায়, অধ্যবসায় শিখায়, দায়িত্ববোধ তৈরি করে, কর্তব্যপরায়নতা শিখায়। পড়ার সঙ্গে খেলাধুলা, সংস্কৃতিক চর্চা একান্ত প্রয়োজন। যুব গেমসের মাধ্যমে ক্রীড়াবিদরা ঢাকায় আসার সুযোগ পেয়েছে, এরা একদিন বাংলাদেশকে অলিম্পিক থেকে পদক এনে দিবে।
সরকার খেলার প্রসারে চেষ্টা করেছে, আন্তরিক থেকেছি, অবকাঠামোগত উন্নয়ণ করেছি, দেশীয় খেলার চর্চার জন্যও দৃস্টি দিয়েছি। ক্রীড়াবিদদের মানোন্নয়ণে স্টেডিয়াম নির্মাণ ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। বিকেএসপিকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে, শারীরিক শিক্ষা কলেজে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। এরপর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা ভারত,পাকিস্তান,দক্ষিন আফ্রিকাকে হারিয়েছি। আমাদের প্রতিবন্ধীরাও পিছিয়ে নাই, বিশেষ অলিম্পিকে তারা গোল্ড আনছে। ইতোমধ্যে ফুটবল, ক্রিকেটে আমাদের ছেলেরা এগিয়ে গেছে, আমার বিশ্বাস ক্রিকেটে আমরা একদিন বিশ্বকাপ জিতব। মেয়েরাও পিছিয়ে নাই, অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে মেয়েরা তাদের সাফল্যের প্রমান দিয়েছে, ক্রিকেটে একদিন নারীরা বিশ্বকাপ খেলবে। সেজন্য আমরা প্রতি উপজেলায় মিনি স্টৈডিয়াম তৈরি করে দিচ্ছি। বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের খেলাধুলার প্রতি ভালবাসা, পারিবারিক ঐতিহ্যের সাথে খেলাধুলা মিশে থাকার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যুব গেমসে অংশগ্রহনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন- তোমরা প্রত্যেকে হয়ে উঠবে ক্ষুধা,দারিদ্রমুক্ত,সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদমুক্ত উন্নত,সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানের কারিগর। প্রথমবারের মতো যুব গেমস আয়োজনের মাধ্যমে খেলাধুলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুপ্ত প্রতিভা উদ্ভাসিত হবে এবং জন সাধারনের আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিতেই মশাল প্রজ্জ্বলন করেন কমনওয়েলথ গেমস ও সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী আসিফ হোসেন খান, তিনি যখন মাঠ প্রদক্ষিণ করছিলেন, আকাশ রঙিন হয়েছে আতশবাজিতে, লেজার রশ্মির তালে বঙ্গবন্ধু সেটডিয়ামের উত্তর প্রান্তে জ্বলে ওঠে মশাল, এটি জ্বলবে ১৬ মার্চ পর্দা নামা পর্যন্ত।
ঘন্টা দেড়েকের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে ছিল গেমসের মাস্কট তেজস্বীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঠ পরিভ্রমন, গান-নাচ, অংশ নিয়েছেন দেশসেরা গায়ক- নৃত্য শিল্পীরা। মঞ্চ এবং মাঠে ডিসপ্লেতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং বাংলাদেশ যুব গেমসের বিভিন্ন ডিসিপ্লিন,ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে কিছু চিত্র। উদ্বোধনী শেষ হয়েছে লেজার শো, পাইরো ও আতশবাজিতে। স্টেডিয়ামের ২টি স্থায়ী জায়ান্ট স্ক্রীন ছাড়াও মাঠের মধ্যে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত ৬টি এলইডি বোর্ডে ভেসে উঠেছে অনুষ্ঠানের চিত্র। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লেজার শো প্রশংসিত হয়েছে। সারা দেশে ৪৮ হাজার ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়া সংশ্লিস্টদের নিয়ে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর যে যুব জাগরনের সৃস্টি করেছে, সেই জাগরনে পূর্নতা এনেছে বর্নাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। মনোমুগ্ধকর আতশবাজির মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাংলাদেশ যুব গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। চূড়ান্ত পর্বের ডিসিপ্লিনগুলো হলো : এ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, ফুটবল, কাবাডি, বাস্কেটবল, ভলিবল, হ্যান্ডবল, হকি, টেবিল টেনিস, ভারোত্তোলন, কুস্তি, উশু, শূটিং, আরচারি, ব্যাডমিন্টন, বক্সিং, দাবা, জুডো, কারাতে, তায়কোয়ানদো ও স্কোয়াশ।
