ক্রীড়া প্রতিবেদক : দেশের সর্বত্র খেলাধুলা ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যত জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় তৈরীর লক্ষে প্রথমবারের মত আয়োজন করা হয় যুব গেমসের । যুব গেমসের চুড়ান্ত পর্ব কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ঢাকায় বসেছিল ক্রীড়াবিদদের মিলন মেলা। সারা দেশ থেকে দুই হাজার ৬৬০জন অনূর্ধ্ব-১৭ বয়সী ক্রীড়াবিদরা অংশ নিয়েছিলেন প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ গেমসের মূল পর্বে। ২১টি ডিসপ্লিনে বিভিন্ন ইভেন্টে পদকের জন্য লড়েছেন তারা।
এক সপ্তাহের ক্রীড়া আসর শেষ হলো শুক্রবার। ভাঙলো প্রতিভা অন্বেষনের মিলন মেলা। আসর থেকে বিওএ পেয়েছে নতুন কিছু প্রতিভা। অনেকেই প্রথমারের মত ঢাকায় এসেছেন এ আসর উপলক্ষে। কেউ কেউ পদক জয়ের আনন্দে যেমন উচ্ছসিত, আবার অনেকেই হতাশ প্রত্যাশামত পারফরমেন্স করতে না পারায়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমাপনী ঘোষনার মধ্যে দিয়ে গেমসের যবনিকা নামে। এআগে অবশ্য, গেমসের মাসকট ‘তেজস্বী’ (ব্যঘ্র শাবক) বিদায় নেয়। ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত পদক তালিকায় খুলনা এগিয়ে থাকলেও, সমপানী দিনে মেয়েদেও ১০০ মিটার স্পিন্টে স্বর্ণ ও রৌপ্য জিতে আসরের সেরার গৌরব অর্জন করে রাজশাহী বিভাগ।
গত ১০ মার্চ একই ভেন্যুতে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিভা অন্বেশনের এ লড়াইয়ের মূল পর্বের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল লড়াইয়ে দুই হাজার ৬৬০জন ক্রীড়াবিদ অংশ নিলেও প্রাথমিক পর্যায়ে অংশ নিয়েছিল প্রায় অর্ধ লাখ ক্রীড়াবিদ। দেশের ৪৬০টি উপজেলা থেকে প্রাথমিক বাছাই শেষে জেলা দল গঠন করা হয়। সেখান থেকে বাছাই শেষে গঠন করা হয় বিভাগীয় দল। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি শুরু হয় বিভাগীয় পর্যায়ের খেলা। বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগীতা শেষ হয় ১৩ জানুয়ারি। বিভাগীয় পর্যায় থেকে মূলপর্বে সুযোগ পায় দুই হাজার ৬৬০জন ক্রীড়াবিদ। ২১টি ডিসিপ্লিনে ১৫৯টি ইভেন্টে ৩৪০টি স্বর্ণ, সমান সংখ্যক রৌপ্য ও ৪৩০টি ব্রোঞ্জ পদকের জন্য লড়াই করেন তৃনমূল থেকে উঠে আসা ক্ষুদে ক্রীড়াবিদরা।
ঐুব গেমস উপলক্ষে প্রায় সাড়ে তিনমাস আগে শুরু হওয়া এ গেমসকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত ছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গন। কর্মব্যস্ত ছিল সংশ্লিষ্ট ফেডারেশন গুলো। জেগে উঠেছিল দীর্ঘদিন নিরব থাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলো। প্রতিটি জেলার মাঠ মুখরীত ছিল প্রতিভাবান ক্ষুদে ক্রীড়াবিদদের পদচারনায়। গেমসের চূড়ান্ত পর্বকে ঘিরে রঙ্গীন স্বপ্নে মত্ব ছিলেন গ্রাম থেকে উঠে আসা বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের অ্যথলেটরা। অনেকের স্বপ্ন পূরণ হলেও কেউ কেউ ছিলেন হতাশ।
তারপরও এ আসরকে সফল হিসেবেই দেখছেন আয়োজক বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কর্মকর্তারা। দীর্ঘ দিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে এ গেমসের মধ্য দিয়ে উজ্জিবিত করা গেছে বলে মনে করেন বিওএ’র উপ মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু, ‘এ গেমসের মধ্য দিয়ে তৃনমূল পর্যায়ের খেলোয়াড় ও সংগঠকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করা গেছে। এখান থেকে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুঁজে পেয়েছি। যারা দেশের জন্য ভবিষ্যতে অবদান রাখতে পারবে। খুঁজে পাওয়া এ ক্রীড়াবিদদের আমরা হারিয়ে যেতে দেবো না। তাদেরকে ক্যাম্পে রেখে দীর্ঘ মেয়াদে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করবো। খেলোয়াড়দেও পাশপাশি তৃনমূল পর্য়ায়ে সংগঠকদেও প্রকৃত অবস্থাও জানতে পেরেছে বিওএ।
বৃহৎ এই ক্রীড়াযজ্ঞ আয়োজন করতে গিয়ে কিছুটা ক্রটি-বিচ্যুতি যে ছিল, সেটা অকপটেই স্বীকার করে নিলেন বিওএ’র এ কর্তা, প্রথমবারের মতো আয়োজন করতে গিয়ে আমাদের কিছুটা ভুলভ্রান্তি হয়েছিল। যা আমাদের ভবিষ্যতে আরো ভালো করতে শিক্ষা দেবে। প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুঁজে বের করার এ উদ্যেগ নিয়মিত আয়োজন করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আশিকুর রহমান মিকু।
সমাপনী দিনে দর্শকের জন্য বিকেল চারটায় স্টেডিয়ামে গেটখুলে দেয়া হয়। বিকেল ৫টায় শুরু হয় ডিজে শো। ৬টা ৪০ মিনিটে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন যুব গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গেমসে অংশগ্রহনকারী আট বিভাগের খেলোয়াড়দের বেশীর ভাগ চলে যাওয়ায় বিদায়ী মার্চপাস্ট পর্ব সংক্ষিপ্ত আকারে হয়।
নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস বাংলায় নিহত যাত্রীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। বাদ দেয়া হয়েছে আতসবাজি। যুব গেমসের চুড়ান্ত পর্বেও উদ্বোধনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলাধূলার অডিও ভিজুয়াল (এভি) প্রদর্শন করা হয় বিশাল পর্দায়।
