ডেস্ক রিপোর্ট: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রপিতামহ ছিলেন উসমানীয় শাসনমালের রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত সাংবাদিক আলী কেমাল বে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আদেল ফরিদ পাশার আমলে মাস তিনেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।-খবর হুররিয়াত ডেইলি নিউজের
১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধী হিসেবে আলী কেমাল ইউরোপে বসবাস শুরু করেন। তখন তাকে লন্ডনে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল।
উসমানীয় সাম্রাজ্যে আরমেনীয়দের রক্ষার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ১৯১৮ সালের পরে আরমেনীয় ইস্যুতে তিনি বেশ সরব হয়ে উঠেছিলেন।
১৯২২ সালের ৪ নভেম্বর ইস্তানবুলের একটি নরসুন্দরের দোকান থেকে তিনি অপহৃত হন। পরে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচারের জন্য মোটরবোটযোগে শহরের এশীয় অংশের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
দুদিন পরে জেনারেল নুরুদ্দিন পাশার লোকজন তাতে হস্তক্ষেপ করেন। এরপর নুরুদ্দিনের লোকজন তাকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে লাঠি, পাথর ও ছোরা দিয়ে হামলা চালিয়ে হত্যা করেন। মুগুর দিয়ে তার মাথা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
সাংবাদিকতা করার সময় একাধিক দেশ ঘুরে বেড়িয়েছিলেন তিনি। সুইজারল্যান্ড ঘুরতে গিয়ে অ্যাঙ্গলো-সুইস নারী উইনিফ্রেড ব্রানের প্রেমে পড়েন। ১৯০৩ সালে তাকে বিয়ে করেন আলী কেমাল।
উইনিফ্রেডের মৃত্যুর পর তিনি তুরস্কের এক প্রভাবশালী পাশার মেয়েকে বিয়ে করেন। সেই ঘরে জন্ম নেয়া জেকি কুনেরালপ ছিলেন সুইসজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং স্পেনে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত।
১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করা বরিস জনসন ভর্তি হন ব্রিটেনের অভিজাত প্রাইভেট স্কুল এটন কলেজে, যেখান থেকে দেশটি ডেভিড ক্যামেরনসহ বহু প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। পরবর্তী সময়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তিনি।
বরিস জনসন একসময় বলেছিলেন, ইসলাম চর্চার কারণেই আক্ষরিক অর্থে মুসলমানরা ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে শত শত বছর পিছিয়ে রয়েছে।
ইংল্যান্ডের নতুন এই প্রধানমন্ত্রী একটি প্রবন্ধে এমন দাবি করেছিলেন, যেটি পরবর্তী সময়ে তার দ্য ড্রিম অব রোম বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জনসনের মতে, মুসলিম বিশ্বে কেন বুর্জোয়া শ্রেণি, উদার পুঁজিতন্ত্র ও গণতন্ত্রের বিস্তার ঘটেনি, তা ব্যাখ্যা করতে সহায়ক হয় ইসলাম সম্পর্কে এখানে এমন কিছু বলা দরকার।
‘মুসলিম বিশ্বে প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধিনিষেধ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে,’ জানালেন লন্ডনের সাবেক এই মেয়র।
তিনি লিখেছেন, এমনটি কল্পনা করাও বিস্ময়কর যে রোমান কিংবা বাইজেন্টাইন সম্রাটদের অধীনে কয়েক হাজার বছর ধরে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছে কনস্টান্টিনোপল। কিন্তু ওসমানীয় শাসনামালে উনিশ শতকের মধ্যভাগের আগ পর্যন্ত ইস্তানবুলে ছাপাখানা দেখা যায়নি। এতে বাস্তবিকভাবে তারা কয়েকশ বছর পিছিয়ে যায়।
রোমের ভ্যাটিকানে সিসটাইন চ্যাপলের সিলিংয়ে মাইকেলাঞ্জেলোর ষোড়শ শতকের শিল্পকর্মের সঙ্গে তুলনা করলে মুসলমানরা কিছুই দিতে পারেনি। এগুলো ইসলামি শিল্পকর্মের উৎকর্ষতাকে ছাড়িয়ে গেছে।
ইতালির ফ্লোরেন্সের ভাস্কর, স্থপতি, চিত্রশিল্পী ও কবি মাইকেলাঞ্জেলো। রেনেসাঁর সময় তার অসাধারণ শিল্পকর্মের জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়েছেন।
এমন সব মন্তব্যের জন্য ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছেন তিনি। এটিকে বিব্রতকর ও সমস্যাবহুল বলে বর্ণনা করেছে ব্রিটেনে মুসলিম বিদ্বেষ পর্যবেক্ষণ করা সংস্থা টেল মামা। সংস্থাটি জানায়, এতে ধর্ম নিয়ে জনসনের অজ্ঞতাকেই প্রকাশ করেছে।
গত বছরে টেলিগ্রাফে লেখা একটি কলামে মুসলমান নারীদের পরা বোরকাকে ‘চিঠির বাক্স’ ও ‘ব্যাংক ডাকাতের’ সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।
২০০৭ সালে অ্যান্ড দেন কেইম দ্য মুসলিম শিরোনামের এক প্রবন্ধে উইনস্টন চার্চিলের একটি বিবৃতির কথা উল্লেখ করেন। এতে বলা হয়েছে, ইসলামের চেয়ে বিশ্বে আর কোনো জোরালো পেছনমুখী শক্তি নেই।
লন্ডনের সাবেক এই মেয়র লিখেছেন, পোপ থেকে উইনস্টন চার্চিল পর্যন্ত যেসব অভিযোগ তুলেছেন, তা কারও কারও খারাপ লাগলেও এখন বলা ও যাচাই করে দেখার সময়। তা হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের আসল সমস্যা হচ্ছে ইসলাম।
তিনি বলেন, ধর্মের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে চার্চিলের বিশ্লেষণ সত্যের একটি কণার চেয়েও বেশি হলে তা মেনে নিতে হবে।
ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী সাইয়েদা ওয়ারসি বলেন, এসব পদক্ষেপের জন্য জনসনের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এটি প্রতিদিনের ডালভাত বলে মনে করা হচ্ছে।
একটি চিঠিতে দেশটির বিখ্যাত রাজনীতিবিদ নাজ শাহ বলেন, একটি জাতীয় দৈনিকে এমন নোংরা ও ইসলামবিদ্বেষী লেখা প্রকাশ করায় একজন মুসলমান হিসেবে আমি ব্যথিত।
