ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগীর সংখ্যা ও লাশের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির যে সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে সেটি প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম। অনেক প্রাইভেট হাসপাতাল এবং হাসপাতালে ভর্তি না হতে পেরে যারা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয় না। বাস্তব ঘটনা হচ্ছে সরকার ডেঙ্গু মহামারীতে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করছেন।
প্রতিদিন দেশের কোন না কোন অঞ্চলে বা হাসপাতালে অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে মানুষ। ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়ালেও ব্যর্থ সরকার এ নিয়ে এখনও গুজব আবিষ্কারে ব্যস্ত। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বলেছেন-এডিস মশা মারার জন্য কার্যকর ঔষধ আনা হয়েছে। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে এই ছিটানো ঔষধে এডিস মশা আরো উৎসাহিত হয়ে সন্তান-সন্তুতি ব্যাপকভাবে উৎপাদন করে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে তা রীতিমত বাকওয়াস। ডেঙ্গু মহামারীতে সারাদেশ আক্রান্ত হওয়ার পরও সরকারের উচ্ছাস ও তামাশারও কোন কমতি নেই। তাই আওয়ামী নেতা-মন্ত্রীদের ফটোসেশনে কাজ হবে না, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় বিএনপির নয়া পল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী দ্রুত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বলেছেন, সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষের অব্যাহত দাবির পরও সম্পূর্ণ নিরপরাধ গুরুতর অসুস্থ নেত্রীকে শুধুমাত্র প্রতিহিংসাপরায়ণতা চরিতার্থে ক্ষমতার মত্ততায় ৫৬০ দিন কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার আতঙ্কে মিডনাইট সরকার প্রহর পার করছে। চোর যেমন গৃহস্থের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকে এই অবৈধ সরকারের অবস্থা হয়েছে ঠিক তেমন। প্রকাশ্যে স্বগর্বে ঘোষণা দিয়ে তার জামিনে বাধা দিচ্ছেন স্বয়ং সরকার প্রধান নিজেই। তার অসুস্থতা নিয়ে উপহাস করে নিজেরাই চিকিৎসার জন্য বিদেশে দৌড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী চোখের চিকিৎসার কথা বলে দুই দফায় দীর্ঘদিন লন্ডনে থেকে এসেছেন। শুধুমাত্র চোখের অপারেশনে এতো দিন সময় লাগে কি না তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার কিছু নেই। রোগ-ব্যাধি-জরা বলে কয়ে আসে না। ৭৫ বছর বয়স্কা বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে অবজ্ঞা-উপহাস না করে দ্রুত তাকে মুক্তি দিন। তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে দুখিনী বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, দেশব্যাপী হত্যা, গুম, গলাকাটাকে পরম যতেœ লালন করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় বেআইনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করার জন্যই মানুষ এখন পণ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই শিশু, কিশোর, যুবক, ব্যবসায়ী, ছাত্র, মানবাধিকার কর্মী হয় গুম হচ্ছে, না হয় তাদের গলাকাটা লাশ পাওয়া যাচ্ছে। ফেনীতে নিখোঁজের ৭দিন পর স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার, লক্ষীপুরে আলমগীর হোসেন নামে ব্যবসায়ীকে গলাকেটে হত্যা, হবিগঞ্জে কিশোর সুমন মিয়ার এক মাস দশদিন পার হয়ে গেলেও কোন সন্ধান মেলেনি। এগুলিই এখন সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম। গুম, ক্রসফায়ারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। দেশজুড়ে যেন এক অন্ধকার শ্বাসরোধী পরিবেশ। সামাজিক অস্থিরতা, অসহিঞ্চুতা, হানাহানি, রক্তপাত চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। খুন, ধর্ষণ, পিটিয়ে হত্যা, সারা দেশে ডেঙ্গুর মতোই ছড়িয়ে পড়েছে। ছেলে ধরা সন্দেহে দেশে বেধড়ক গনপিটুনি চলছে। ছেলে ধরা গুজব, হত্যার ঘটনা পরিস্থিতি এমনই ঘোলাটে করে তুলেছে যে, অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। ধর্ষণ ও ধর্ষণ প্রচেষ্টার কারণে শিশু হত্যার ঘটনা যেন প্রতিদিনের ভয়াবহ সংবাদ পড়তে হচ্ছে মানুষকে। একেই বলে নৈরাজ্য। বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে গিয়েই সরকার সন্ত্রাসকে আশকারা দিয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ক্ষমতাসীনদের পদলেহন করায় সামাজিক অরাজকতায় ছেয়ে গেছে সারাদেশ। বর্তমানে আমরা অরাজকতার চরম লগ্নে এসে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশে এখন ঘাতক ও মৃত্যুরই সহাবস্থান। উর্দ্ধতন আদালতও বলেছেন বিচার না হওয়ার কারণে অধরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ন্যায় বিচারও এদেশ থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী