মেননকে নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট: সম্প্রতি বরিশালে গিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির এক অনুষ্ঠানে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন দলটির সভাপতি ও ওই নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে জয়ী সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। তার এই মন্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলেও তার বক্তব্যের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ১৪ দল। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললে ১৪ দলীয় জোটের ওই নেতাও বিতর্কিত হয়ে পড়েন। তবে তার বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ১৮তম জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে (ন্যাম) যোগদান শেষে সোমবার (২৮ অক্টেবর) ভোরে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানাতে আজ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের বাইরে দেশের সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান একাধিক সাংবাদিক। এমনই একটি প্রশ্নে উঠে আসে রাশেদ খান মেননের প্রসঙ্গ। বিকাল ৪টায় এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
উত্তর দিতে গিয়ে রাশেদ খান মেননের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জোটের নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, তার মনে তো কষ্ট থাকতেই পারে। কিন্তু, এটাও ভাবতে হবে তিনি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললে, তার জয়ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে জোটের মুখপাত্র নাসিম সাহেব আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। জানতে চেয়েছেন, আমার বক্তব্য আছে কিনা। আমি বলেছি, এ বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। এসব বিষয় নিয়েই যদি পড়ে থাকি তাহলে দেশের উন্নয়নে কাজ করবো কখন?
রাশেদ খান মেনন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘তাকে তো আমি বহুদিন থেকেই চিনি। আমরা একসাথেই রাজনীতি করেছি। ‘৭০ সালে যখন নির্বাচন দেওয়া হলো তখন তিনি স্লোগান দিলেন, ভোটের বাক্সে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। কিন্তু, তখন ভোট না হলে তো বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। ’৭২ সালে যখন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি হলো তখন বলেছিলেন, ‘বেরুবাড়ি বেচে দিলো,’ ‘বেরুবাড়ি বেচে দিলো’। কিন্তু, পরবর্তীতে সবাই দেখেছেন বেরুবাড়ি বেচে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কিছু করে না। বেরুবাড়িতে ভারত ভারতের অংশ পেয়েছে, আমরা আমাদের অংশ পেয়েছি। এসবের প্রেক্ষিতে ১৪ দল বসেছে, তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এমন বক্তব্য তিনি হয়তো আরও দেবেন, এতে আমার কোনও মন্তব্য নেই।’’
এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে মজা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘ (উনি) বলে তো ভালো করেছে। সাংবাদিকরা লেখার খোরাক পেয়েছেন। না বললে কী লিখতেন।’
শেখ হাসিনা এসময়ে আরও বলেন, জনগণ যদি ভোট না দিত, আমাদের পক্ষে না থাকতো, তাহলে আমাদের সমর্থন থাকতো না। তাদের (বিএনপি) ভোটবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমরা গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছিলাম। আমাদের জনসমর্থন ছিল। এবারের নির্বাচনের পর জনগণ, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। শুধু আওয়ামী লীগের না, বিএনপির ব্যবসায়ীরাও আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। কারণ আমরা সবার জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বাংলাদেশে যেদিন এসেছি, সেদিন থেকেই ভয় নেই। আমার বিরোধীরা বিদেশের মাটিতে সক্রিয়, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে আমাকে হত্যা করা হতে পারে। তবে আমি এসবকে ভয় পাই না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করে। আমরা ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়। বাংলাদেশের সম্মান ফিরে এসেছে। ন্যাম সম্মেলনে যাওয়ার পর সবাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। সেখানকার প্রবাসীদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা বলেছেন তারা ভালো আছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে তারা খুশি। তাই কারও কথায় কিছু যায়-আসে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *