আজ মানব সভ্যতার এক কলঙ্কময় দিন

ডেস্ক রিপোর্ট: আজ ৬ আগস্ট বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসের এক কলঙ্কময় দিন। কেননা আজ যে বিশ্ব হিরোশিমা দিবস। বিশ্বে পরমাণু বোমা বিরোধী দিবস হিসাবেও দিনটি স্বীকৃত।
আজ থেকে ৭৫ বছর আগের এই দিনে জাপানের হিরোশিমা শহরে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের ঘটনা। ওই পারমাণবিক বোমা হামলার জের ধরে হিরোশিমায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের ভয়ংকর নির্দেশটা দিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান।
ভয়াবহ এ হামলার সাত দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ভয়াল সেই দিনের কথা স্মরণে রেখেছে জাপানবাসী। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে নিহতদের স্মরণ করা হয়। এসময় পৃথিবীকে পরমাণুমুক্ত করার আহ্বান জানান হিরোশিমার মেয়র।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে হিরোশিমায় আকাশে আবির্ভাব হলো মার্কিন বোমারু বিমান ‘এনোলা গে’। এতে ছিল ৬০ কিলোগ্রাম ওজনের ইউরেনিয়াম-২৩৫ সমৃদ্ধ বোমা-লিটল বয়। সকাল সোয়া ৮টা নাগাদ হিরোসিমার মাটি স্পর্শ করে ছোট্ট বালক। নিমিশেই বিস্ফোরণ-ছাতা আকৃতির ধোঁয়ার কুণ্ডলি। এতে সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে মারা যায় ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
অনুমান করা হয় যে, ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণে হিরোশিমাতে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার লোক মারা গেছেন। পরবর্তীতে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আরও দুই লাখ ১৪ হাজার মানুষ। এই দুই শহরে মৃত্যুদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক ব্যক্তি।
জাপানে দীর্ঘ ৭৫ বছর পরও শেষ হয়নি ভয়াবহ এই বোমার তীব্রতা। এখনও অনেকেই নিজেদের শরীরে সেদিনের তেজস্ক্রিয়তার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। দেশটিতে এখনও জন্ম নিচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৯ সালে হিরোশিমাকে ঘোষণা করা হয় শান্তির শহর। শহরে নির্মিত হয় শান্তি স্মৃতি পার্ক। প্রতিবছর এই দিনে শোক আর বেদনায় দিনটিকে স্মরণ করে গোটা বিশ্ব। একই সঙ্গে চলে যুদ্ধ বিরোধী প্রচার।
কিন্তু ফি বছর এই হিরোসিমা দিবস পালনের মাধ্যমে আসলে কিছুই বদলায়নি। বিশ্বজুড়ে এখনও চলছে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, অন্তত ৯টি দেশের কাছে রয়েছে ৯ হাজার পরমাণু বোমা। কঠোর গোপনীয়তায় পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। চলছে আরো বিধ্বংসী বোমা তৈরির পরিকল্পনা। থেমে নেই যুদ্ধের ঝনঝনানিও। করোনা মহামারির মধ্যেই পরস্পরের বিরুদ্ধে হিংসার তরবারি শানাচ্ছে এশিয়ার দুই বৃহৎ দেশ চীন ও ভারত। বহু আগে থেকেই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত লড়াইয়ে লিপ্ত নয়াদিল্লি। এই লড়াই থামানোর কোনও প্রচেষ্টা কারো মধ্যেই দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু চলতি বছর চীন ও প্রতিবেশী ক্ষুদ্র দেশ নেপালের সঙ্গেও সীমান্ত বিরোধে জড়িয়েছে ভারত। যদিও নয়াদিল্লির অভিযোগ, বেইজিংয়ের উস্কানিতেই ভারত বিরোধী নানা তৎপরতা চালাচ্ছে কাঠমান্ডু সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *