সরকার উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে : ফখরুল

ডেস্ক রিপোর্ট: সরকার উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুর্বণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে দলের জাতীয় কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) ইউএনডিপি প্রকাশিত মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘আজকে বলা হচ্ছে যে, এই সরকার যথেষ্ঠ উন্নয়ন করেছে, তারা নিজেরাই নিজেদের কথা বলছে এবং তারা নিজেদেরকে একটা উন্নয়নের রোল মডেল বলছে। আজকের (মঙ্গলবার) পত্রিকায় আছে যে, ইউএনডিপি সোমবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গোটা এশিয়াতে কী অবস্থান, কোন কোন দেশের কী অবস্থায় আছে। তাতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াতে পঞ্চম। ভুটানেরও নিচে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখানেই বোঝা যায় যে, আসলে আমাদের উন্নয়নে কথা যেটা বলা হচ্ছে, এটা আসলেই একটা পুরোপুরিভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা ক্ষমতায় জোর করে টিকে থাকতে চায়।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আজকে সমস্ত ক্ষেত্রেই সরকার স্বাধীনতার সমস্ত চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে দলীয়করণ করে নষ্ট করেছে, তারা অর্থনীতিকে একটা লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা পার্লামেন্টকে পুরোপুরি একটা অকেজো পার্লামেন্ট তৈরি করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছে। যার ফলে আপনারা দেখেছেন যে, বিশিষ্ট নাগরিকরা তাদের বক্তব্যে বলেছেন যে, এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।’
দলের পক্ষ থেকে নেয়া স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী পালনের গুরুত্ব তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য যে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা যে মূল চেতনাটিতে সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি, প্রাণ দিয়েছি। আমাদের লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন মা-বোনেরা তারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন। অনেক মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের। সেই গণতান্ত্রিক চেতনাকে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং গণতন্ত্রের জন্য যারা সেদিন লড়াই করেছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন তাদের সেই মর্যাদাটাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন দেখি যে, মুক্তিযুদ্ধের যারা প্রধান ছিলেন বা যারা সামনের সারিতে ছিলেন, যারা অগ্রণী ছিলেন তাদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। আসুন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে পালন করি এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তার সম্মান প্রতিষ্ঠা করি এবং মূল যে লক্ষ্যটি গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করি।’
তিনি বলেন, ‘করোনার প্রতিকূলতা ও বর্তমানে রাজনৈতিক যে পরিবেশ আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি এবং স্বাধীনতার মূল চেতনাকে যারা আমরা ধারণ করি, লালন করি তাদের জন্য কোন পরিবেশে কিভাবে আমরা পালন করতে সক্ষম হবো সেটাও আমরা জানি না। কারণ ইতোমধ্যে দেখছেন যে, গত কয়েক বছর ধরে স্বাধীনতার চেতনাকে বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেটা আমরা মনে করি যে, ১৯৭১ সালে আমাদের যুদ্ধের মূল যে চেতনা ছিল, সেই চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আজকে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে, আমাদের সীমান্তে নাগরিকরা নিহত হচ্ছেন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে। আমাদের দেশে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়ে প্রবেশ করেছে তাদেরকে প্রত্যাবাসনের জন্য যারা সরকার দখল করে আছেন তারা সেরকম কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না।’
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী-২০২১ উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৫টি বিষয়ভিত্তিক কমিটি ও ১০টি বিভাগীয় কমিটির নাম ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সালামও উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *