ডেস্ক রিপোর্ট : চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের নামে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এ অভিযানে নিহতের সংখ্যা ১৪৪-এ পৌঁছায় গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি। আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এই শঙ্কার কথা প্রকাশ করা হয়। এছাড়া মাদকবিরোধী অভিযানে যে কোনও ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিরুদ্ধে সুদৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে চলমান বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অবসান ঘটিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার চর্চার পথ উন্মুক্ত করতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে আসক।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র এর বিবৃতিতে বলা হয়, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতা (জিরো টলারেন্স) নীতির অংশ হিসেবে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এ অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে প্রতিদিন নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি দেশের প্রথম সারির একটি দৈনিক পত্রিকা তাদের অনলাইন ভার্সনে টেকনাফের ওয়ার্ড কমিশনার একরামুল হত্যার যে অসমর্থিত অডিও ক্লিপ প্রকাশ করেছে তা জনমনে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সমাজ থেকে যে কোনও ধরনের অপরাধ নির্মূলে অবশ্যই রাষ্ট্রকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে, কিন্তু অপরাধ নির্মূলের নামে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড কখনোই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিনা বিচারে যে কোনও মৃত্যু বা নির্যাতনই মানবাধিকার, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চরম লঙ্ঘন। আসক মনে করে, এ বিষয়ে সরকার দলীয় দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের বক্তব্যও একেবারে অগ্রহণযোগ্য। মাদকবিরোধী অভিযানে মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তির ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত্যু, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দেওয়া হবে না বলে টাকা নেওয়া, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দেওয়া—আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগের জবাবে সরকারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বক্তব্য- ‘এমন দু-একটা ভুল হতেই পারে’ খুবই দুঃখজনক। মানুষের মৃত্যু কোনও ছোটাখাটো ঘটনা নয়, এ ধরনের ঘটনার তাৎপর্য ও রাষ্ট্রে এর প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। আমরা জনগণের কল্যাণ ও নিরাপত্তায় দায়িত্বরতদের কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল ও বিবেচনাপ্রসূত আচরণ দাবি করছি।
এর পাশাপাশি আসকের পক্ষ থেকে অনতিবিলম্বে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া কক্সবাজারের আলোচিত একরামুল হত্যার ঘটনাসহ সবকটি কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনায় অবিলম্বে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আসক দাবি করছে। পাশাপাশি, একরামুলের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানাচ্ছে আসক।