নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকিং খাতে শুধু বড় নয়, ছোট ঋণেও খেলাপি বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। গত সাত বছরের ব্যবধানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) দেওয়া ঋণে খেলাপি বেড়েছে ৮৫০ শতাংশ বা সাড়ে ৮ গুণ। অর্থাৎ ২০১০ সালে এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালে তা ২২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রোববার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএমে এক সেমিনারে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ও ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম, এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমান চৌধুরী, আইডিএলসি ফাইন্যান্সে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে দুটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ‘ইমপেক্ট অব সোস্যাল সেফটি নেট প্রোগ্রামস অন দ্য পারফরমেন্স অব স্টেট ওন ব্যাংকস’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক ও অধ্যাপক মহীউদ্দিন ছিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি গবেষক দল এবং ‘ইমপেক্ট অব এসএমই ফাইন্যান্সিং অন ব্যাংকস প্রফিটেবিলিটি: এন এ্যানকয়্যারি অ্যাক্রোস ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগি অধ্যাপক মো. সোহাইল মুস্তাফার নেতৃত্বে অপর একটি গবেষক দল।
সেমিনারে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় কাজ করে। রাষ্ট্রের অনেক সেক্টরে তারা কমিশন না নিয়ে সেবা দিচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে আরও বদলাতে হবে। শুধু মাত্র ফ্রিতে কাজ করার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে না। তিনি বলেন, আমি সোনালী ব্যাংকে যখন ছিলাম তখন দেখা গেছে ৬ থেকে ৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি অফিসে আসতেন না। এদের অনেকেই সিবিএ নেতা ছিলেন। এছাড়া যারা অফিসে আসতেন তারাও কাজে ফাঁকি দিতেন। এ ধরনের অবস্থা বদলাতে হবে। তা না হলে সরকারি ব্যাংকের পরিবেশ ঠিক হবে না।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সালে এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬১ কোটি টাকায়। এর পরের বছর তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪২ কোটি টাকায়। ২০১৬ সালে আরও চার হাজার খেলাপি ঋণ যুক্ত হয়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, এসএমই খাতে অর্থায়ন ব্যাংকের মুনাফায় তেমন প্রভাব পড়ছে না। কিন্ত আজকের এসএমই আগামী দিনে বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে এসএমই খাতে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে।