ড. হাফেজ এবিএম হিজবুল্লাহ: উঁকি মারছে রমজান মাস। রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির মাস। তাকওয়া অর্জন ও কোরআনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের মাস। আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহামাস।
প্রশ্ন হল, এর জন্য আমাদের কী প্রস্তুতি আছে? আছে কি কোনো পরিকল্পনা? জাগতিক প্রতিটি উপলক্ষকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা করা হয়। প্রস্তুতি নেয়া হয় উপলক্ষকে সফল ও সার্থক করার জন্য। উপলক্ষ অনুযায়ী পরিকল্পনা করা হয়, প্রস্তুতির সময় হয় কম-বেশি। ব্যক্তিগত হোক বা পারিবারিক, সামাজিক হোক বা রাষ্ট্রীয় যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে পূর্ব পরিকল্পনা নিতে হয়। এ জন্য রমজানে সিয়াম সাধনায় আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকা জরুরি।
কোরআন কারিমের বক্তব্য অনুযায়ী প্রতিটি আসমানি ধর্মে সিয়ামকে ফরজ করার কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য ধর্মেও সিয়াম সাধনার বিধান রয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, মানব জীবনে সিয়াম সাধনার গুরুত্ব অপরিসিম।
তাই আমাদের এ মাস আসার আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। নিতে হবে পূর্ব পরিকল্পনা। বিভিন্ন বর্ণনানুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও রজব মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। তিনি অন্যান্য মাসের তুলনায় রজবে বেশি রোজা রাখতেন। আর শাবানে তো কয়েকদিন বাদে পুরো মাসই রোজা রাখতেন। আর তাঁর অনুসরণে সাহাবিরা এবং পরে অন্যরাও সেই ধারা অব্যাহত রাখেন।
নবীজীর সুন্নাতের অনুসরণে আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে। শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সব প্রস্তুতি নিয়ে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ দয়া ও অণুগ্রহের মাসকে বরণ করতে হবে। তাকওয়ার মাসে তাকওয়া অর্জনে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
নিজের জীবনটাকে আল্লাহর রঙ্গে রাঙিয়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় তা হতে পারে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ইখলাসের সঙ্গে সাওম পালন। রোজার প্রকৃতি, তাৎপর্য, মানব জীবনে সাওমের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা। পরিবারের সবাইকে সাওম পালনে উদ্বুদ্ধ করা।
নিয়মিত সালাত আদায় ও কোরআন তিলাওয়াতসহ তাওবা-ইস্তিগফার করা। চোখ, কান, জিহ্বা ও অন্তরকে সাওমের শিক্ষা অনুযায়ী সংযত করা। এ মাস দান-সদকার মাস। বর্ণনানুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে সবচেয়ে বেশি দান-সদকা করতেন। তাই নিকট আত্মীয়, গরিব প্রতিবেশী ও আর্ত-মানবতার সেবায় সামর্থ্য অনুযায়ী দান-সদকা করে অন্যকেও এ মাস পালনে সহযোগিতা করতে হবে।
মুনাফার লোভে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ও সময়ের অপচয় থেকে বিরত থাকতে হবে। সব রকম হারাম বর্জন করতে হবে। মিথ্যা, রাগ, পরনিন্দা, চোগলখুরী, গীবত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অহঙ্কার, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, খিয়ানত, অপচয় ও অপব্যয় এবং সব ধরনের বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। শরীরের কলুষিত অংশকে ধুয়েমুছে জান্নাতি শুভ্রতায় রূপান্তরিত করার মহা সুযোগ মাহে রমজান।
লেখক : অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া