নিজস্ব প্রতিবেদক: বুধবার কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে দেয়া বক্তব্যকে ‘ঐক্য রক্ষার সতর্কবাণী’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়ার মিরপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ফুটবল মাঠে জাসদের এক জনসভায় হাসানুল হক ইনু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ৮০ পয়সার মালিক, এক টাকার মালিক না। যতক্ষণ এক টাকা হবে না ততক্ষণ ক্ষমতা পাবেন না। আপনারা ৮০ পয়সা। এরশাদ, দিলীপ বড়ুয়া, মেনন এবং ইনু মিললে তবেই এক টাকা হবে। আমরা যদি না থাকি তাহলে আপনারা ৮০ পয়সা নিয়ে রাস্তায় ঘুরবেন। এক হাজার বছরেও ক্ষমতার মুখ দেখবেন না।’
এ বক্তব্যের বিষয়ে কথা বলতে সচিবালয়ে দুপুরে প্রেস ব্রিফিং ডাকেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, রাজাকার ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে সেই লড়াইয়ে ১৪ দল ও মহাজোটের ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে গতকাল কিছু মন্তব্য করেছি। শেখ হাসিনা শরিক দলগুলোর অতীত ইতিহাস জেনে-শুনে, বুঝে-শুনে ঐক্য গড়ে তুলেছেন। শেখ হাসিনা ৯৯ পয়সা অথবা ৮০ পয়সার মালিক হয়েও ২০ পয়সা অথবা এক পয়সার মালিক সমতুল্য শরিকদের কদর করেছেন, দাম দিয়েছেন এবং ঐক্যে শামিল করেছেন। মহাজোট গঠন করে রাষ্ট্রনায়কচিত প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় শেখ হাসিনার এ দূরদৃষ্টি ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের পরেও কতিপয় নেতানেত্রী ঐক্যকে খাটো করে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে থাকেন। আমি মনে করি এটা ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং জঙ্গিবাদবিরোধী সংগ্রামকে দুর্বল করে।’
‘ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয়। শরিক সব দলেরই পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা দরকার। আমি ঐক্যের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েই গতকাল বক্তব্য দিয়েছি। ঐক্য যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই চিন্তা থেকেই আমি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছি।’
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ঐক্যটা রক্ষা করা দরকার জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি চক্র এখনও চক্রান্ত করে চলছে। এখনও বাংলাদেশের বিপদ কাটেনি, এখনও বাংলাদেশ বিপদমুক্ত না।’
‘আমি মনে করি জঙ্গি দমন করার জন্য যেরকম ঐক্য দরকার, জঙ্গি দমনমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশকে স্থায়ী করতে, উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিতে প্রয়োজনে এ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির হাজার বছরের ঐক্য যদি করতে হয় তবে হাজার বছরের ঐক্য করা দরকার’- বলেন ইনু।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলনে শরিক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাদের সবাইকে প্রধানমন্ত্রী বুকে টেনে নিয়েছেন, আগলে রেখেছেন এবং ঐক্যে শামিল করেছেন। সুতরাং আমাদের ঐক্যটাকে রক্ষা করতে হবে। সেখানে আমরা মাঝে মধ্যে খেয়াল করেছি ঐক্যের শরিকদের মাঝে-মধ্যে কেউ কেউ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, কটাক্ষ ও অবহেলা করে থাকেন, উদাসিনতা প্রদর্শন করেন। এটা ঠিক কাজ না। এটা ঐক্যের জন্য মঙ্গলজনক নয়।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি, জঙ্গি দমনের যুদ্ধটা এখনও শেষ হয়নি, আগামী নির্বাচনটা সামনে পরে রয়েছে, বিএনপি, জঙ্গি ও রাজাকার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এখনও খালেদা জিয়া চক্রান্ত ছাড়েনি, এখনও খালেদা জিয়া জামায়াত জঙ্গিদের ত্যাগ করেনি। সেহেতু এ কঠিন পরিস্থিতিতে আমি ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ সতর্কবাণীটা উচ্চারণ করেছি।’
ঐক্যে কোনো ফাটল ধরেছে কি না- জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঐক্যে ফাটল ধরার প্রশ্ন উঠছে না। কারণ ঐক্যের মূল কাণ্ডারি হচ্ছেন শেখ হাসিনা, উনি আন্তরিক এবং উনার নেতৃত্বেই এ ঐক্যটা হয়েছে। মাঝে মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়, আমি মনে করি এ ভুল বোঝাবুঝি যত কমানো যায় ততই মঙ্গলজনক।’
আগামীতে জাসদ এককভাবে নির্বাচন করবে কি না- এ প্রশ্নে ইনু বলেন, ‘শরিকদের ভেতরে জাসদই একমাত্র দল, আমরা মনে করি জঙ্গি দমনের যুদ্ধটা শেষ করতে হলে প্রয়োজনে হাজার বছরের ঐক্য রক্ষা করা উচিত। যেহেতু বিএনপি-জামায়াত চক্র এখনও একাট্টা হয়ে আছে এবং খালেদা জিয়া জামায়াত চক্রকে ত্যাগ করেননি, জঙ্গিরা এখনও হামলা চালাচ্ছে, সেখানে আমরা মনে করি আগামী নির্বাচনটা দেশ রক্ষার জন্য মহাজোটের নেতৃত্বেই হওয়া বাঞ্ছনীয়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মহাজোটের ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ রক্তাক্ত আফগানিস্তান হয়ে যাবে। বাংলাদেশকে রক্তাক্ত আফগানিস্তান হতে দিতে পারি না বলেই চোখের মণির মতো প্রয়োজনে হাজার বছরের ঐক্য বজায় রাখা দরকার।’