নিজস্ব প্রতিবেদক: কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ঢাকার আটটি নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৭ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক চূড়ান্ত সুপারিশ মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে ‘কোচিং বাণিজ্যের’ মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করেছে দুদক।
কমিশনের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান, পরিচালনা পর্ষদ এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ওই সুপারিশ জানিয়ে আলাদা চিঠি পাঠানো হয়েছে।
দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিন সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে এমপিওভুক্ত চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭২ শিক্ষক এবং সরকারি চারটি বিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত বলে দুদক প্রমাণ পেয়েছে। এদের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা, ২০১২ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
শাস্তির সুপারিশ করা শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩৬ জন, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ জন, রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫ জন, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন এবং গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ৮ জন শিক্ষক।
শাস্তির বিষয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কোচিং বাণিজ্য রোধে এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এক বিদ্যালয় হতে অন্য বিদ্যালয়ে, এক শাখা হতে অন্য শাখায়, দিবা শিফট হতে প্রভাতী শিফটে বা প্রভাতী শিফট হতে দিবা শিফটে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বদলির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা যেতে পারে।
যারা একইসঙ্গে দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে বহাল থেকে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। কারণ এ জাতীয় আয়ে কোনো প্রকার ভ্যাট বা কর দেয়া হয় না। ফলে এভাবে উপর্জিত আয় অনুপর্জিত আয়ে পরিণত হয়, যা সংবিধানের ২০ (২) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। যেখানে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থাসৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোন ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না।’ এ ছাড়া কোচিং বন্ধে আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
এর আগে নভেম্বরের শুরুতেও ২৪টি সরকারি বিদ্যালয়ের ৫২২ শিক্ষককে একই কারণে বদলির সুপারিশ করেছিল দুদক। সে সময় কমিশনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই শিক্ষকরা ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত এক বিদ্যালয়েই রয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অর্থ উপার্জন করছেন।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুদক।
দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল তাদের অনুসন্ধান শেষে ওই প্রতিবেদন দেয়।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এক কর্মস্থলে শিক্ষকদের তিন বছর হলেই তাদের বদলি করার নির্দেশনা থাকলেও রাজনৈতিক চাপ, তদবির ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অনেকের বদলি আটকে থাকে বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।
সেখানে বলা হয়, কিছু শিক্ষক কোচিং বা প্রাইভেট বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বছরের পর বছর ঢাকার একই বিদ্যালয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন।