নিজস্ব প্রতিনিধি : সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এক্ষেত্রে কমিটি কোটা পদ্ধতি সহজ করার কথা বলেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বলেছেন ঠিকই। কিন্তু আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। ইতিহাসের (মুক্তিযুদ্ধ) প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। আঞ্চলিকতার প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। পিছিয়ে পড়া নৃগোষ্ঠীর প্রতিও আমাদের দায় আছে।”
“সংবিধানে সমতার কথা বলা আছে। পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে। এসব বিবেচনা করে আমরা কোটা পদ্ধতি সহজীকরণের কথা বলেছি। যুক্তিযুক্ত সংস্কারের কথা বলেছি।”
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে গত দুই মাস ধরে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, কোটা নিয়ে যেহেতু এত কিছু, সেহেতু কোনো কোটাই আর রাখা হবে না। কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওই দিন বলেছিলেন সরকারপ্রধান।
পরদিন কয়েকটি দাবি রেখে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তারা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে সরকারি গেজেট দ্রুত প্রকাশের দাবি জানিয়েছে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকের অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, “বৈঠকে জনপ্রশাসন সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরে যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।”
বৈঠকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান পদ্ধতি বাতিল করে আগের পদ্ধতি বহালের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, “এনসিআরটিএ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে নিয়োগ দিচ্ছে, তাতে বেশ কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এক-একজন ব্যক্তিদের অনেক দূর-দূরান্তে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকৃত মেধার যাচাই হয় না। এজন্য আমরা নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির মাধ্যমে নিয়োগ নিতে বলেছি।”
এই বৈঠক নিয়ে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন পত্র ফাঁস ও নকল বন্ধ,পরীক্ষা পদ্ধতি ও পরীক্ষা কেন্দ্র কমানো এবং শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা যুগোপযোগী করার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
আগামী অর্থ বছরে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ সরকারি করতে এবং এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্যও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে জনপ্রশাসনের এই সংসদীয় কমিটি।
এছাড়া জেলা শহরে অনেক অননুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সে গুলোর বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসককে একটি নীতিমালার আওতায় আনার বিষয়ে কমিটি সুপারিশ করে।
বৈঠকে কমিটির সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, খোরশেদ আরা হক ও জয়া সেন গুপ্তা অংশ নেন।