ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করতে না পারা নিজেদের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার চেষ্টা করছি, কথা বলছি, আন্দোলন করছি। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে গেছে। তারপরও আমরা দেশনেত্রীকে বাইরে নিয়ে আসতে পারিনি। এটা একদিকে যেমন আমাদের ব্যর্থতা, অন্যদিকে এর মাধ্যমে সরকারের ভয়ঙ্কর চেহারাও প্রকাশিত হয়েছে।’
শুক্রবার (১৮ মে) সকাল ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা গানের সিডি প্রকাশ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেখানে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সরকার গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তিগুলো ভেঙে দিয়েছে। তারা নিজেদের চিরকাল ক্ষমতায় রাখার জন্য এভাবে রাষ্ট্রের ক্ষতি করছে। আদালত থেকে খালেদা জিয়া জামিন নিয়ে এসেছেন। এরপরও তিনি মুক্তি পাননি। তার বড় কারণ হচ্ছে, এ অবৈধ সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়া। তারা মনে করে, তিনি জেলের বাইরে থাকলে জনগণের যে বাঁধভাঙা স্রোত আসবে, তারা তা প্রতিরোধ করতে পারবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া যদি অংশগ্রহণ করেন, তাহলে সেই নির্বাচনে তাদের (আওয়ামী লীগের) ভরাডুবি কেউ ঠেকাতে পারবে না। এ কারণে তারা চক্রান্ত করে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাচনের আগে মামলার কার্যক্রম শেষ করে তাকে কারাগারে নিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা হাইকোর্টে ৫ বছরের সাজায় জামিন দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে তা স্থগিত করা হয়। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এ মামলাকে শেষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা কাজ করছে। যেকোনও অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষের সর্বশেষ যাওয়ার একমাত্র জায়গা ছিল বিচার বিভাগ। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আজ সেই বিচার বিভাগকেও সরকার তাদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।’
সারা বিশ্ব জানে বাংলাদেশে কোনও গণতন্ত্র নেই—উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমরা কথা বলতে পারি না , সংগঠিত হতে পারি না। এ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে এখন তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে সরকারের প্রতিপক্ষ বিরোধী দলকে দমন করা।’
তিনি বিএনপির কারবন্দি সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করে বলেন, ‘আন্দোলন তখনই সফল হবে, যখন গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারবো। এ জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার জন্য ইতোমধ্যে দেশনেত্রী আহ্বান জানিয়ে গিয়েছেন। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা বলছে আগামীতে নির্বাচন হবে। কিন্তু সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না যদি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া না হয়, বিএনপি অংশগ্রহণ না করে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার না হয়, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা না হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাযহারুল আনোয়ার ও জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মনির খান প্রমুখ।