বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ২ মাঘ, ১৪৩১

ডিসি নিয়োগ পাওয়া নিয়ে বিতর্ক-সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না

Omar Faruk
অক্টোবর ১, ২০২৪ ১১:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সরিয়ে দেয়। কিছুটা তড়িঘড়ি করে ফিটলিস্ট তৈরি করে ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই নিয়োগের পর বিতর্ক ও সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না।

নিয়োগের পর প্রথমেই অভিযোগ ওঠে- নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের বেশিরভাগই গত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী। কারও কারও বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও নিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তখন এ নিয়োগ বাতিল চেয়ে নজিরবিহীনভাবে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তারা। পরে ডিসি নিয়োগ দেওয়া নয়জন কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ডিসি নিয়োগ দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভও হয়। সর্বশেষ অভিযোগ উঠেছে, অর্থের বিনিময়ে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে জনপ্রশাসনকে।

এ অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ডিসি নিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ডিসি পদে ফের পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত ২০ আগস্ট ২৫ জেলার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু ডিসি নিয়োগের ফিটলিস্ট না করেই মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে কর্মকর্তাদের সরানোর সিদ্ধান্ত হয়। তাই, ডিসিদের প্রত্যাহার করার পর ফিটলিস্ট করতে দ্রুত বিপুল সংখ্যক উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।
নতুন ৮ ডিসির নিয়োগ বাতিল
৫টার মধ্যে ডিসি নিয়োগের সব প্রজ্ঞাপন বাতিল চান বঞ্চিতরা
৩ কোটি টাকার চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন, তদন্ত কমিটি গঠন
ফিটলিস্ট তৈরির পর গত ৯ সেপ্টেম্বর ২৫ জেলায় এবং ১০ সেপ্টেম্বর ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়।

ডিসি নিয়োগ নিয়ে সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগটি ওঠে দুদিন আগে। বলা হয়, এবার ডিসি নিয়োগে ব্যাপক অর্থের লেনদেন হয়েছে। গত মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি বিতর্কিত ডিসি নিয়োগকাণ্ডের অন্যতম হোতা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদের কক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকার একটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। নওগাঁর ডিসি হিসেবে পদায়ন হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক মো. আব্দুল আউয়ালের পক্ষে ওই যুগ্মসচিবকে চেকটি দেন মো. মীর্জা সবেদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী। কাঙ্ক্ষিত জেলায় পদায়ন না হওয়ায় চেকের বিপরীতে টাকা জমা দেওয়া হয়নি।

সংবাদ প্রকাশের পর অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পরিকল্পনা-১ শাখা) মো. লিয়াকত আলী সেখ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন।

তদন্ত কমিটিকে চেকের সত্যতা যাচাই করে তিনদিনের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অভিযোগটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। তাই ডিসি নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর শাস্তির উদাহরণ তারা রাখতে চান।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।

ডিসি নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদনের পরামর্শ
ডিসি পদে নিয়োগ প্রত্যাশী উপসচিব পদমর্যাদার ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা ১০ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে প্রায় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এমন ক্ষোভ প্রকাশ, হট্টগোল এর আগে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তারা।

‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তারা দাবি করেন, যাদের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। গত সরকারের অনুগত থাকায় তারা ভালো জায়গায় চাকরি করেছেন। অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। তারা ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল চান।

পরে ওইদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন- মন্ত্রিপরিষদ সচিবের এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ফিরে যান তারা। তবে পরদিনও সচিবালয়ে হট্টগোল করেন কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।

একই সঙ্গে ১১ সেপ্টেম্বর ডিসি হিসেবে ৯ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করা হয়। ওইদিন লক্ষীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পি কে এম এনামুল করিমকে সিলেটের ডিসি হিসেবে নিয়োগও বাতিল করা হয়। যদিও পরে তাকে ওএসডিও করা হয়।

দৈনিক আজকের প্রভাত

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।