নিজস্ব প্রতিবেদক: ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যশোরে নির্মিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্কের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার দুপুরে গণভবন থেকে তিনি এই উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, বিএনপি সাবমেরিন ক্যাবল, ব্রডব্যান্ড সংযোগ ও প্রযুক্তির বিকাশে ঘোর বিরোধী ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সৃষ্টি করে তারা ধ্বংস করতে পারে না। তাই আওয়ামী লীগ সবসময় উন্নয়ন করে ও অগ্রগতির কথা ভাবে। আর বিএনপি-জামায়াত ধ্বংসের রাজনীতি করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতা দখল ও ভোগ বিলাসে ব্যস্ত ছিল। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে জনগণকে প্রযুক্তির সেবায় এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি জ্ঞান নির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এবার ২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছি। এখন আর কেউ ডিজিটাল নিয়ে ব্যঙ্গ করতে পারে না। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। শুধু যশোর নয়, ওই অঞ্চলের ১৩ জেলার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। এতে মেধা ও জ্ঞান নির্ভর অর্থনৈতির চাকা সচল হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করার চেষ্টা করছিলেন, তখন তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। আমি পিতা, মাতা ভাই হারিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছে তার সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত। যে আশা আকাঙ্খা স্বাধীনতার ৪৬ বছরের মধ্যে ২৯ বছর হেলায় হারিয়েছি। হত্যা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল। তারা স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতা বসিয়েছিল। তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছিল। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে তারা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতির সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে তাদের কোনো অবদান ছিল না। তারা অবদান রাখতে পারে নাই। রাখতে চায় নাই। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে। কিন্তু জনগণ সেই সুযোগ দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। বিশাল জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তন হয়। বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তারা আর উদ্যোগ নেয়নি। তারা যে নির্ধারিত জায়গায় দখল করে হাউজিং করেনি, এজন্য শুকরিয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
অপরদিকে যশোর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিরিনা খাতুন, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নাজিফা তাসনিম শেফা, যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্র ধীমান আল হামিদ, আইটি প্রফেশনাল অনএয়ার ইন্টারন্যাশনাল সিইও শাহীন আজাদ, আমরা নেটওয়ার্কের এমডি সৈয়দ ফরহাদ আহমেদ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন যশোর-২ আসনের এমপি মনিরুল ইসলাম, যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৪ আসনের এমপি রণজিৎ কুমার রায়, যশোর-৫ আসনের এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরে একটি বিশ্বমানের আইটি পার্ক স্থাপনের ঘোষণা দেন। সেই অনুযায়ী ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যশোরের বেজপাড়া শংকরপুর এলাকায় এ আইটি পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মোট জায়গার পরিমাণ দুই লাখ ৩২ হাজার বর্গফুট। ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই হাইটেক পার্কে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধাসহ রয়েছে ১৫ তলাবিশিষ্ট এমটিবি ভবন, ১২ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার মানের ডরমেটরি ভবন, অত্যাধুনিক কনভেনশন সেন্টারের সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং।
জাপানি উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ডরমেটরি ভবনের ১১ তলার পুরোটাতে আন্তর্জাতিকমানের জিম স্থাপন করা হয়েছে। আর সব বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে ভূমিকম্প প্রতিরোধক কম্পোজিট (স্টিল ও কংক্রিট) কাঠামোতে।
এছাড়া প্রতিটি ফ্লোরে ১৪ হাজার বর্গফুটের জায়গা রয়েছে। এতে থাকছে ৩৩ কেভিএ পাওয়ার সাব-স্টেশন, ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট লাইন এবং অন্যান্য ইউটিলিটি সার্ভিসের সুবিধা।