নিজস্ব প্রতিবেদক: জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘দণ্ডিত কোনো অপরাধীর মুক্তির শর্তে যদি কেউ বাজি ধরে, সেই বাজিতে আমরা সায় দেব না। সেই শর্ত একটা অরাজনৈতিক শর্ত। এই শর্ত মেনে নেয়া মানে হচ্ছে বাংলাদেশে অপরাধতন্ত্রকে মেনে নেয়া।’ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যদি কেউ দণ্ডিত অপরাধীদের মুক্তির শর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন তা হবে গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উপর কুঠারাঘাত।’
জাসদ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি সেই আঘাতটাই হানতে উদ্যত হচ্ছে। তারা নির্বাচন বর্জন করার একটা পায়তারা করছেন। এরই অংশ হিসেবে দণ্ডিত অপরাধীর মুক্তির প্রশ্নটা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন। একটা রূপরেখাহীন সহায়ক সরকারের নামে একটা অস্বাভাবিক সরকার চালুর পায়তারা করছেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বানচাল হয়ে গেলে বাংলাদেশে অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। অস্বাভাবিক সরকার বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশ আর পেছন দিকে যেতে পারে না।’
জাসদ সভাপতি বলেন, ‘২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর দেশ কোন পথে যাবে এই প্রশ্ন মীমাংসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ টিকবে কি টিকবে না সেটা নির্ধারিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে বেগম খালেদা জিয়া সেনা মোতায়েনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। অথচ তিনিই ৯৬ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ফল না মেনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। ২০০৮ সালে সেনা মোতায়েন ছিল, একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে ভোট হয়েছে। সেই ভোটের ফলাফল তারা (বিএনপি) মানেনি। সুতরাং বিএনপির কাছে ভোট বড় কথা নয়। তাদের এজেন্ডা নির্বাচন বা গণতন্ত্র নয়। তাদের এজেন্ডা হচ্ছে দেশকে আবারও পাকিস্তান পন্থার পথে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।’
জাসদ সভাপতি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা মানেন না। সেই জন্য ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা ও ২৫ মার্চের গণহত্যা দিবস মানেন না। তারা সংবিধানের ৪ নীতিও মানেন না। এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না মানার মধ্য দিয়ে বিএনপি এবং খালেদা জিয়া এটাই প্রমাণ করছেন, তারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না।’
তিনি বলেন, ‘তারা এখন মীমাংসিত মৌলিক বিষয়গুলোকে অমীমাংসিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় বিতর্ক সূচনা করার চেষ্টা করে তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিকতা, প্রগতিবাদীতা আড়ালে পড়ে যায়। এই রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা রাজনৈতিক কর্তব্য রয়েছে। যে কোনো মূল্যে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, অস্বাভাবিক-অসাংবিধানিক সরকারের চাইতে সাংবিধানিক সরকার মঙ্গলজনক। আইন অনুযায়ী যথা সময়, ডিসেম্বরে নির্বাচনটা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের যে চমৎকার ধারা চলছে, তাকে অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশের জন্যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে। যে কোনো মূল্যে রাজাকার-জঙ্গীবাদী-আগুনসন্ত্রাসী ও তার সঙ্গী বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়াকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য সামনে নিয়ে আমরা আগামী ৬টি মাস অতিক্রম করব।’
ইনু বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো, নির্বাচন বানচালের সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত যেটা চালু আছে সেটা মোকাবেলা করতে হবে, নসাৎ করতে হবে। যথা সময়ে নির্বাচনটা অনুষ্ঠান করতে হবে। এখন পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জাতির সামনে উত্থাপন করতে পারেনি। আসলে তারা উত্থাপন করার চেষ্টাও করেনি।’
মহার্ঘ্যভাতার প্রজ্ঞাপন চলতি মাসেই: অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মহার্ঘ্যভাতার প্রজ্ঞাপন জারির জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। এপ্রিলে মধ্যেই সেটি জারি করা সম্ভব হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাকি ওয়েজবোর্ড নিষ্পত্তি করবেন চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যরা। যখন তারা নিষ্পত্তি করবেন, তথ্য মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। মনে রাখতে হবে ওয়েজবোর্ড গঠন পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা। সাংবাদিকরা কীভাবে সম্মানি, সুযোগ সুবিধা পাবেন সেটা বোর্ড ঠিক করবে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন ওয়েজবোর্ডের প্রজ্ঞাপনে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিষয়টাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেটা নিষ্পত্তি করতে পারেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, মালিকপক্ষ এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা। সেটা হলে এই চেয়ারম্যানই আরেকটা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ওয়েজবোর্ড গঠনের কাজে হাত দেবেন।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিট দ্য প্রেস সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ।