সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ ১৯৫৮ (ই.পি. অধ্যাদেশ, ১৯৫৮) দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সময়ে এ অঞ্চলের নৌ পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সংস্থাটি গঠিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এর নাম হয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
এটি বাংলাদেশ সরকারের একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এটি নৌ পরিবহন নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন সহ নৌযান সমূহের জন্য বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন, অনুমোদন, লঞ্চ চলাচল নদীর কোলগেসে জমি সংরক্ষণ বাংলাদেশের নদী বন্ধর ও নদীর ড্রেজিংয়ের কাজসহ বিভিন্ন কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।
দেশের যেসব নৌ রুট বর্তমানে বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকিতে সেই রুটগুলো সচল করতে নিরলস ভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ১৯৬২-৬৭ সালের দিকে এক জরিপে বাংলাদেশে নৌপথ ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই নদীপথের সংখ্যা কমে আসলেও দেশের বর্তমান নৌপথ সচল রাখতে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের। নৌ-পরিবহন খাতে বড় অবদান রাখছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কতৃপক্ষ। একই সাথে নদী তীর রক্ষায় অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে সংস্থাটি।
এছাড়াও অবৈধ নৌযান আটক ও জরিমানা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। নদীমাতৃক কৃষিপ্রধান ও প্রাকৃতিক মৎস্য নির্ভর প্রিয় মাতৃভূমিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে আত্মনির্ভশীল করতে অমূল্য জলসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার অনস্বীকার্য। সে জন্য নদ-নদী সচল রাখা, নৌ-পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও উন্মুক্ত জলসম্পদ রক্ষা করা আবশ্যক।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনসহ নানা ঝুঁকি মোকাবেলায় শত ব্যস্ততা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও নদী খননে মনোযোগী ছিলেন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কাজ করছে একটি স্বার্থনেশি মহল। যার ফলশ্রুতিতে বিআইডব্লিউটিএ’র অসৎ কর্মকর্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু মিথ্যে সংবাদ প্রচার করে তাঁদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
সততা ও নিষ্ঠার সাথে বিআইডব্লিউটিএ’র ধারাবাহিক কাজে যারা নিরলস ভাবে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উল্টো তাদেরকেই বিভিন্ন ভাবে সামাজিক হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। ড্রেজিং বিভাগের বেশ কিছু কর্মকর্তা তাঁরা নিরালস ভাবে বিআইডব্লিউটিএ-তে কাজ করে যাচ্ছেন ফলে দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারের সেবামূলক কাজে নদী খনন প্রকল্পে ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছাইদুর রহমান একজন সৎ কর্মকর্তা অত্যন্ত সততা বিচক্ষণতার সাথে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই সৎ, পরিচ্ছন্ন ও নিষ্ঠাবান প্রকৌশলী বিআইডব্লিউটিএতে নিরলস কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দিনের পর দিন কাজ করে গেছেন। করোনা কালীন সময়েও তিনি নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে দেশের জন্য কাজ করে গেছেন।
নৌ-মন্ত্রনালয় যানাজায়, নদী খনন প্রকল্পের অর্থ লোপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালের এপ্রিল প্রকাশিত “১৩৮ কোটি টাকা লোপাট: নদী খননে সাগর চুরি: পেট ভরল বিআইডব্লিউটএ প্রকৌশলীদের” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বিস্তারিত বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে যে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দাবি, “৫৩টি নৌপথ ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায়ঃ ২৪টি নৌপথ)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কংস ও ভোগাই-কংস নদীর খননকাজ ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। এই কাজ বাস্তবায়নে ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ৯টি ড্রেজার দিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করেছে। কাজ শুরুর আগে, কাজ চলাকালীন এবং কাজ শেষে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের মাধ্যমে খননের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করে। এই জরিপে আধুনিক ইকোসাউন্ডার এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মতে, এভাবে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বিল পাস করে ঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, কংস ও ভোগাই-কংস নদীর খননের ফলে ১৩৫ কিলোমিটার নৌপথ সচল হয়েছে এবং এর মাধ্যমে ৫৫টি হাট-বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। খননের ফলে উত্তোলিত বর্জ্য দিয়ে ২০২ বিঘা অকৃষি জমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে। এর প্রভাব বিশেষভাবে নেত্রকোনার বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ এবং সদর উপজেলায় উন্নয়ন নিয়ে এসেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ছিল। টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয় এবং সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদাররা কাজ পেয়েছেন। ফলে কাজ না করে বিল পরিশোধের অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থেকে ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন। তাঁর পেশাগত সুনাম ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর আয়কর নথিতে মিথ্যা তথ্য এবং তাঁর পিতার মৃত্যুসংক্রান্ত তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন। মন্ত্রণালয় এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রকল্পের সাফল্যের উদাহরণ দিয়ে এর কার্যকারিতা তুলে ধরেছে। পরিবেশ ও উন্নয়নের স্বার্থে নদী খননের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে ব্যাহত করার শামিল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার বলেছেন, ‘নদীমাতৃক আমাদের এই দেশ, সেই নদীর গতি পথ ঠিক রাখতে ও নদীকে চলাচলের উপযুক্ত করে রাখতে কাজ করছি। সেই কাজটি করতে বাঁধা সৃষ্টি করে কুচক্রী মহল। অনেক সময় ভিত্তিহীন সংবাদই সেবা প্রদানে অন্তরায় হয়ে পড়ে ও আমরা বির্ব্রত বোধ করি।