আজকের প্রভাত প্রতিবেদক : এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামীণফোন অ্যাক্সিলেরেটর (জিপিএ)-এর পঞ্চম ব্যাচকে চার মাসব্যাপী কর্মসূচিতে স্বাগত জানানো হয়েছে। রবিবার রাজধানীর বসুন্ধরা জিপি হাউজে পঞ্চম ব্যাচকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ব্যাচটি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোন সিইও মাইকেল ফোলি্। অতিথিদের জিপিহাউজে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণীরই প্রতিভা আছে যাদের সাফল্য লাভের জন্য সামান্য সহযোগিতা দরকার, জিপি একসেলেরেটর হচ্ছে সেই সহযোগিতা।
তিনি আরো বলেন, গ্রামীণফোন এরকম অসাধারণ একটি কর্মসূচীর সাথে জড়িত থাকায় তিনি আনন্দিত।
৫ম ব্যাচের জন্য জিপি একসেলেরেটর দুই সপ্তাহে ১০০০ এর বেশি আবেদন পেয়েছিল। একটি কঠিন বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ২দিনব্যাপী বুট ক্যাম্পে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং এদের মধ্যে থেকে ১৫টি স্টার্টআপকে নির্বাচন করা হয় আরো যাচাই, মুখোমুখি সাক্ষাতকার এবং পিচ প্রেজেন্টেশনের জন্য। তীব্র প্রতিযোগিতার পর ৫টি প্রতিশ্রুতিশীল স্টার্টআপকে জিপি একসেলেরেটর ৫ম ব্যাচের জন্য নির্বাচন করা হয়।
গ্রামীণফোনের চিফ স্ট্র্যাটেজি এন্ড ট্র্যান্সফরমেশন অফিসার কাজী মাহবুব হাসান একসেলেরেটর কর্মসূচির অগ্রগতিতে উল্লাস প্রকাশ করে বলেন, জিপি একসেলেরেটর দেশের স্টার্টআপ ইকো সিস্টেমে বড় প্রভাব ফেলেছে। এই একসেলেরেটর প্রোগ্রাম খুব কমসময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্টার্টআপ মেন্টরশীপ প্রোগ্রামে পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হওয়ার কারণ হচ্ছে প্রোগ্রামের মেন্টর এবং অংশগ্রহণকারীরা কখনোই তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। এই নতুন ব্যাচ এখন পর্যন্ত দেখা ব্যাচগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সেরা এবং আমি অপেক্ষায় আছি এটা দেখতে যে তারা এই প্রোগ্রাম শেষ করার পর কতটা সাফল্য অর্জন করে।
জিপি একসেলেরেটর একটি উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্ম যেখানে, প্রতিটি ব্যাচের স্টার্টআপদের চার মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বিশেষজ্ঞ দ্বারা কারিকুলামভিত্তিক মেন্টশিপ প্রদান করা হয়। নির্বাচিত প্রতিটি স্টার্টআপ ৮% ইকুইটির বিপরীতে ১৫০০০ ডলার সিড ফান্ড হিসেবে দেয়া হয়। এছাড়াও তারা ১১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার মূল্যের অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস (এডব্লিউএস) ক্রেডিট এবং চার মাসব্যাপি জিপি হাউজে কাজ করার জন্য বিশাল জায়গা দেয়া হয়ে থাকে।
চার মাসের এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীরা স্থানীয় ও বিদেশী মেন্টর, খাত বিশেষজ্ঞ এবং পেশাজীবিদের কাছ থেকে টার্ম শিট, মূল্যায়ন, আর্থিক মডেলিং ও ব্র্যান্ডিং এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিখতে পারে। একই সাথে এই প্ল্যাটফর্ম সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। প্রতিটি কোম্পানিকে যে সহায়তা দেয়া হয় তার বাজামূল্য প্রায় ৬৫ লাখ টাকা।
বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাত থেকে আসা জিপি একসেলেরেটর এর আগের ব্যাচের কোম্পানিগুলো এখন বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। এস কোম্পানিগুলো মাত্র ছয় মাসে গড়ে তাদের কোম্পানির মূল্য ৪গুন বৃদ্ধি কেরেছে। ১২টি চালু কোম্পানির মধ্যে দুটি ইতোমধ্যেই তাদের মূল্যমান ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
জিপি অ্যাক্সিলেরেটরের প্রধান মিনহাজ আনোয়ার বলেন, মাত্র দুই বছরেরই জিপি একসেলেরেটর বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে একটি মানদন্ড হয় উঠেছে।এইবার জিপি একসেলেরেটর এ অনলাইন শিক্ষা, মাইক্রো জব প্ল্যাটফর্ম, ভিএএএস অটোমেশন, পার্কিং সুবিধা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিচ্ছে।
নির্বাচিত স্টার্টআপগুলো নিয়ে একসেলেরেটর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান স্টার্টআপ ঢাকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর আর খান বলেন, আমাদের ব্যাচগুলো তাদের উদ্ভাবনের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন এবং তাদের ব্যবসায়ের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নতুন মানদন্ড তৈরি করেছে। আমাদের বিশ্বাস নতুন ব্যাচটি এই প্রোগ্রামের মান আরো উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান জিপি একসেলেরেটরের ৫ম ব্যাচের জন্য নির্বাচিত হয়েছে –
সার্চ ইংলিশ : এটি একটি ইরেজি ভাষা শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম, যা ১০ লক্ষ সদস্যকে ফেসবুক, ওয়েবসাইট এবং ওয়েবিনার এর মাধ্যমে তাদের ইংরেজি ভীতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করছে।
সিওয়ার্ক মাইক্রোজব লিমিটেড : এটি ক্রাউড সোর্সড মাইক্রো জব প্ল্যাটফর্ম, এখানে নিয়োগকারীগণ, কন্ট্রিবিউটরদের জন্য কাজ দিয়ে থাকে। বর্তমানে সিওয়ার্ক গুগুল প্লে তে বাংলাদেশে সপ্তম স্থানে আছে এবং এর মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫০০০।
অনুসার্ভার : এটি একটি অ্যাপ-ক্লাউড হাইব্রিড যা অ্যানড্রয়েড মোবাইলফোনকে ক্ষুদ্র সার্ভারে পরিণত করে বিভিন্ন এসএমএস ও কলভিত্তিক সেবা প্রদানে সহায়তা করে। এই সেবা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে সামান্য খরচে তাদের গ্রাহকসেবা ও বিপণন সেবা প্রদান করতে দেয়।
ডিজিটাল মানুষ : এটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য লিড জেনারেটর ও মানুষকে সেবা প্রদানকারীর সাথে যুক্ত করে। বর্তমানে তারা বাংলাদেশের বৃহত্তম লিড জেনারেশন সেবা প্রদানকারী। তারা দেশের ৫টি শহরের ১৭০টি এলাকায় এবং ভারতের একটি শহরে কাজ করছে।
পার্কিংকই : এটি গাড়ী চালকদের অব্যবহৃত পার্কিং খুঁজে পেতে সাহায্য করে এবং এর মাধ্যশে বাড়ীর মাধিকরা তাদের অব্যভহৃত পার্কিং ভাড়া দিয়ে অর্থ আয় করতে পারে।
২০১৫ তে চালু হওয়া এই কর্মসূচির মাধ্যমে এই ব্যাচে আগে আরো ২১টি স্টার্টআপকে সহায়তা দেয়া হয়েছে।