শুভ দেব চাকমা: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সমতলের ১২টি আদিবাসী ছাত্র সংগঠন আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে, যেখানে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতল আদিবাসী জাতিসমূহের প্রধান সামাজিক উৎসব “চাংক্রান, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংগ্রাইং, থাংগ্রেন, বিঝু” উপলক্ষে সরকারের কাছে চার দফা দাবি উত্থাপন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই উৎসবগুলোর ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরা হয় এবং তা উদযাপনের জন্য সরকারিভাবে ছুটি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।পার্বত্য চট্টগ্রামের পাংখোয়া, চাক, খুমি, লুসাই, ম্রো, বম, খেয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা, অহমিয়া, গুর্খা, সান্তালসহ ১৪টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতি, যা তাদের জাতিগত পরিচয়ের অংশ। তাদের প্রধান সামাজিক উৎসবগুলি দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহ্যগতভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে, “চাংক্রান”, “সাংগ্রাই”, “বৈসু”, “বিষু”, “বিহু”, “থাংগ্রেন” ইত্যাদি উৎসব পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সমতলের আদিবাসী জনগণের জীবনে একটি বড় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ।এছাড়া, সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় যে, বছরের পর বছর ধরে এসব উৎসব উদযাপন করার জন্য সরকারি ছুটির ব্যবস্থা না থাকার কারণে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা, চাকুরিজীবী এবং শ্রমজীবী মানুষরা এ উৎসবগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হতে পারছেন না। বিশেষভাবে, আদিবাসী ছাত্ররা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা জীবনের অংশ হিসেবে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলি পালন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা উল্লেখ করেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে এই উৎসবগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন, ম্রো’রা “চাংক্রান”, চাক’রা “সাংগ্রাইং”, মারমা’রা “সাংগ্রাই”, ত্রিপুরা’রা “বৈসু”, তঞ্চঙ্গ্যা’রা “বিষু”, অহমিয়া’রা “বিহু” ইত্যাদি। কিন্তু, সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উৎসবের জন্য কোন ছুটি না থাকায় এ জাতিসমূহের সদস্যরা তাদের পরিবারের সাথে ঐতিহ্যগতভাবে উৎসব পালন করতে পারেন না, যা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
এছাড়া বক্তারা বলেন যে, “বাংলাদেশ সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো নাগরিকের প্রতি ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদে বৈষম্য করা যাবে না। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই উৎসবের জন্য সরকারি ছুটি না দেওয়া এবং ঐতিহ্য পালন থেকে বঞ্চিত করার ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের উদাহরণ।”
এ বিষয়ে ২০১৫ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রজ্ঞাপনে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ২৯শে চৈত্র ও দোসরা বৈশাখ এই দুই দিন ঐচ্ছিক ছুটি মঞ্জুর করা হলেও, এই প্রজ্ঞাপনের বাস্তবায়ন হয়নি এবং অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা ছুটি পান না।
অতএব এ সময় বক্তারা ন্যায্য দাবি জানান, যাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতল আদিবাসী জনগণ তাদের প্রধান সামাজিক উৎসবগুলো উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করতে পারে। তারা নিম্নলিখিত দাবিসমূহ তুলে ধরেন:
১. দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (১২-১৬ এপ্রিল) পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন সরকারি ছুটি প্রদান করা।
২. উৎসবের সময় এসএসসি ও এইচএসসি সহ কোনো পাবলিক পরীক্ষা না রাখা।
৩. উৎসবের সময় দেশের সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আদিবাসী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি প্রদান করা।
৪. উৎসবের সময় দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত আদিবাসী শ্রমজীবীদের ছুটি প্রদান করা।
বাংলাদেশের আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে যে, এসব জনগণের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব উদযাপনের জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করা উচিত, যাতে তারা তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখে পরিবার ও সমাজের সঙ্গে আনন্দমুখর পরিবেশে উৎসব পালন করতে পারে।