নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও সেই বিষয়ে গেজেট জারি না হওয়ায় আন্দোলন সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রোববার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে রোববার (১৩ মে) ফের সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কোটার বিষয়টি ফায়সালা করে দিয়েছেন। কোটা থাকবে না। এরপর কখন গেজেট হবে, হলো কী হলো না…এটা নিয়ে তো একটা চিন্তা-ভাবনাও আছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আছে, প্রতিবন্ধী আছে, অনুন্নত জেলা আছে, মুক্তিযোদ্ধা আছে, নারী আছে। এখানে সুসমন্বিত কিছু করার একটি চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক দিন বিদেশেও ছিলেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি থেমে নেই। যার জন্য কোটার আন্দোলন, সেখানে তো কোটাটাই বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে বসে যা বলেছেন, তাকে আমাদের বিশ্বাস করা উচিত। কারণ, তিনি কথা দিয়ে কখন কথা ব্রেক করেন না।’ ‘(প্রধানমন্ত্রী) পার্লামেন্টে যা বললেন সেটার আবার গেজেট প্রকাশের জন্য আন্দোলনের হুমকি, এটা বোধহয় সমীচীন হচ্ছে না। আমি ছাত্র সমাজকে বলব, তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির ব্যাপারে সরকার খুবই সহানুভূতিশীল এবং সরকার সক্রিয়। যৌক্তিক সমাধানের সব রকম প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। কাজেই আমি তাদের বলব একটু ধৈর্য্য ধরতে। অনতিবিলম্বে তারা সমাধান পেয়ে যাবেন। এই নিয়ে আন্দোলন পরীক্ষা, ক্লাস বর্জন করা…এমনিতে অনেক ক্ষতি আমাদের হচ্ছে।’
আওয়মী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি আশা কার তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) ক্যাম্পাসে ফিরে যাবেন। পড়াশোনায় ফিরে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর কথা এদিক-সেদিক হওয়া…প্রধানমন্ত্রী এমন মানুষ তিনি একটি কথা বলে সেখান থেকে তা নড়ন-চড়ন হবে সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এখানে যদি কেউ রাজনীতি করতে চান, তাহলে ভিন্ন কথা। যৌক্তিক সমাধান যারা চান…একটা গেজেট কখন হলো কি না হলো; প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথা, সেটাতে তো আস্থা স্থাপন করা উচিত। বিশ্বাস করা উচিত। আমি এই কথাটা বলতে চাই।’
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে।
এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করছিলেন তারা।
৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ মে পর্যন্ত সময় নেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এর পরের দিনও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এত কিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনও কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।’
কিন্তু এরপর প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য অনুযায়ী কোটা নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ফের সোচ্চার হন শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে বৈঠক করেন।
অস্টেলিয়া সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে- এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকে ৭ মে পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু ৭ মে’র মধ্যে কোটার প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে গত ১০ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের জানান, কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে এই কমিটি সবকিছু পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে কোটার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।