ডেস্ক রিপোর্ট: ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস তরুণদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘প্রভুর আজ্ঞা অনুধ্যান করে করে তোমরা দেখবে, যা পড়ো তা যেন বিশ্বাস করো। যা বিশ্বাস করো তা শিক্ষা দাও এবং যা শিক্ষা দাও তা অনুশীলন করো।’ শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশেষ খ্রিস্টযোগে তিনি এসব কথা বলেন।
নতুন প্রজন্মের প্রতি পরামর্শ দিয়ে পোপ ফ্রান্সিস আরও বলেন, ‘তোমাদের সেবাকর্মের মাধ্যমে বিশ্বাসী ভক্তজনের আত্মিক বলিদান পূর্ণতা লাভ করবে। তাই যথার্থভাবে বুঝে নিও, তোমরা কী করো এবং যা উদ্যাপন করো তা অনুকরণ করো। প্রভুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের নিগূঢ়ত্বের উদ্যাপনকারী হিসেবে তোমাদের মধ্যে সমস্ত পাপময়তার মৃত্যু ঘটাতে এবং নবজীবনের পথে চলতে সচেষ্ট থেকো।’
অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিসের মাধ্যমে যাজক বা ফাদার হিসেবে অভিষিক্ত হন ১৬ জন। তাদের উদ্দেশ করে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ‘স্নেহের সন্তানেরা, তোমরা এখন যাজকপদে উন্নীত হতে যাচ্ছো। তোমাদের পক্ষ থেকে তোমরা শিক্ষাগুরু খ্রিস্টের নামে শিক্ষাদানের পুণ্য সেবাকাজ সম্পাদন করবে। যে ঐশ্যবাণী তোমরা আনন্দের সঙ্গে লাভ করেছো, তা সবাইকে প্রদান করবে। এভাবে তোমাদের জীবনের পবিত্রতা খ্রিস্টবিশ্বাসী জনগণের জন্য বয়ে আনুক সুরভিত হৃদআনন্দ।’
যোগ করে পোপ আরও বলেছেন, ‘প্রিয় সন্তানেরা, তোমাদের বিশপের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ও তাঁর অধীন হয়ে মণ্ডলীর মস্তক ও পালক খ্রিস্টের সেবাকর্ম সম্পাদন করতে করতে বিশ্বাসী জনমণ্ডলীকে এক পরিবারে একত্রিত করতে সচেষ্ট থেকো। যেন তাদেরকে খ্রিস্টের মাধ্যমে পবিত্র আত্মাতে পিতা পরমেশ্বরের কাছে পরিচালনা করতে পারো। তোমাদের দৃষ্টিগোচরে রেখো উত্তম মেষপালকের আদর্শ, যিনি সেবা পেতে নন, বরং সেবা করতে, যারা হারিয়ে গেছে তাদের খুঁজে নিতে ও মুক্তি দিতে এসেছেন।’
সারাদেশ থেকে লাখো খ্রিস্টান, তিন শতাধিক যাজক, ১৫ শতাধিক ব্রাদার সিস্টার এই বিশেষ খ্রিস্টযোগে ছিলেন। এছাড়া পোপের সফর উপলক্ষে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে এখানে আসেন ৩০ জন কার্ডিনাল, আর্চবিশপ ও বিশপ। লিখিত ভাষণের বাইরে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভাই ও বোনেরা, আপনারা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে অনেক কষ্ট করে এ অনুষ্ঠানে যোগদান করতে এসেছেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের এ অংশগ্রহণ যীশুর প্রতি ভালোবাসারই প্রকাশ। ঈশ্বরের প্রতি আপনাদের বিশ্বস্তার বহিঃপ্রকাশ। আপনাদের কাছে আমার বিশেষ আহ্বান— আজ যারা যাজক পদে অভিষিক্ত হয়েছেন তাদের জন্য প্রার্থনা করবেন।’
এর আগে খোলা পিকআপে চড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন পোপ ফ্রান্সিস। এখানে শুধু খ্রিস্টানরাই নন, ছিলেন মুসলিম, হিন্দু ও বুদ্ধরা। অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে ছিলেন পোপের সেক্রেটারি অব দ্য স্টেট কার্ডিনাল পিয়াত্রো পারোলিন, ঢাকার আর্চবিশপ প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মিলনী কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, বিশ্বাস বিস্তার সংস্থা প্রিফেক্ট কার্ডিনাল ফার্নান্দো ফিলনি, সেক্রেটারি অব স্টেট সহ-সেক্রেটারি আর্চবিশপ জি. অ্যাঞ্জেলো বিক্কিও, বাংলাদেশস্থ ভ্যাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি,ঢাকার সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস প্রমুখ।
শুক্রবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভ্যাটিকান দূতাবাসে সাক্ষাতের পর আর্চবিশপ হাউসে আন্তঃধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন পোপ ফ্রান্সিস। এছাড়া কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে আসা ১৮ রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ না করলেও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের পক্ষে কথা বলেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের ক্যাথলিক বিশপের আমন্ত্রণে সম্প্রীতি ও শান্তির বাণী নিয়ে তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে এসেছেন পোপ ফ্রান্সিস। এদিন বিকাল ৩টায় মিয়ানমার থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছান তিনি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ তাকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর রাতে তারা অংশ নেন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও একান্ত আলোচনায়।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে মাদার তেরেসা হাউস সফরসহ খ্রিস্টধর্মের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পোপ ফ্রান্সিস। এদিন বিকালে নটরডেম কলেজে যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি। ১৯৮৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পলের পর এই প্রথম আর কোনও পোপ বাংলাদেশ সফরে এলেন।