স্বাস্থ্যকথা : পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে, ক্যানসারে মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে ফুসফুস ক্যানসার। যত তাড়াতাড়ি ফুসফুস ক্যানসার ধরা পড়বে, এর চিকিৎসা তত বেশি কার্যকরী হবে। তাই এখানে উপস্থাপিত উপসর্গসমূহ দেখা দিলে কালবিলম্ব না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
১. রক্তকাশি: নিউ ইয়র্ক সিটির মাউন্ট সিনাইয়ে অবস্থিত আইকান স্কুল অব মেডিসিনের থোরাসিক সার্জারির প্রফেসর এবং চেয়ারম্যান রাজা ফ্লোরেস বলেন, রক্তকাশি কখনো ভালো লক্ষণ নয়। এরকম উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান। তিনি বলেন, ক্যানসার যে অবধারিতভাবে রক্তকাশির কারণ হবে তা নয়, তবুও আপনার সন্দেহাতীতভাবে মেডিক্যাল পরীক্ষা করা উচিত।
২. বুকব্যথা: নতুন ও দূর না হওয়া বুকব্যথা, পিঠব্যথা বা কাঁধব্যথার প্রতি মনোযোগ দিন। আপনি টাইটনেস বা টানটান অনুভব করতে পারেন, অথবা তীব্র ব্যথায় ভুগতে পারেন যা ডিপ ব্রিদিং গভীর শ্বাস, কাশি এবং হাসির সঙ্গে আরো বেড়ে যেতে পারে। ডা. ফ্লোরেস বলেন, ‘আপনি সেখানে ব্যথা অনুভব করেন, যেখানে টিউমার অবস্থিত। যদি টিউমার পাশে হয়- আপনি পাশে ব্যথা অনুভব করবেন, যদি টিউমার বুকের পেছনে হয়- আপনি পিঠে ব্যথা অনুভব করবেন।’ তিনি বলেন, যেকোনো বুকব্যথা হুকুম দেয় যে আপনি ডাক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন।
৩. দীর্ঘস্থায়ী কাশি: অ্যালার্জি, কোল্ড এবং অন্যান্য কারণে কাশি হতে পারে। যদি আপনার কাশি চলে না যায়, তাহলে এটি ফুসফুস ক্যানসারের মতো কোনো মারাত্মক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। ডা. ফ্লোরেস বলেন, ‘এয়ারওয়েজের (যে পথে বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে) ক্যানসার আপনার গলাকে জ্বালাতন করতে পারে এবং কাশির উদ্রেক করতে পারে। সেখানে এমন কিছু থাকে যা সেখানে থাকার কথা নয়, তাই আপনার শরীর এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে চেষ্টা করছে।’ ক্যানসার মিউকাস বা শ্লেষ্মাও উৎপাদন করতে পারে, যা কাশিকে উত্তেজিত করে অবস্থাকে অধিকতর খারাপ করে।
৪. শ্বাসকষ্ট: সিঁড়ি আরোহণের সময় যদি আপনি হঠাৎ হাঁপিয়ে ওঠেন অথবা আপনার দৈনিক কাজকর্ম যদি শ্বাসগ্রহণের জন্য থামাতে হয়, তাহলে এটি ফুসফুস ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে। ডা. ফ্লোরেস বলেন, ‘টিউমার উইন্ডপাইপ বা শ্বাসনালীকে ব্লক করার কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বুকের পুঞ্জীভূত তরল ফুসফুসে চাপ প্রদান করে আপনাকে বায়ুর অভাবে ফেলে, এর ফলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।’ তিনি বলেন, ফুসফুসের স্তরে ক্যানসার আপনার বুকে তরল জমাবে, যখন আপনার বুক সম্পূর্ণরূপে তরলে ভর্তি হবে তখন পুঞ্জীভূত তরলের পরিমাণ হতে পারে তিন থেকে চার লিটার এবং পুঞ্জীভূত তরলের কারণে ফুসফুস পর্যাপ্ত বায়ু পায় না।’ বসা বা শায়িত অবস্থায় শ্বাসকষ্টও ফুসফুস ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
৫. ক্লান্তি: ফুসফুস ক্যানসারের অন্যতম একটি উপসর্গ হচ্ছে, ক্লান্তি অনুভব করা। প্রতিদিনকার কাজকর্মে কোনো পরিবর্তন না এনেও যদি আপনি ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে তা ফুসফুস ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। ডা. ফ্লোরেস বলেন, “ক্লান্তি বিশেষভাবে ফুসফুস ক্যানসারের সংকেত নাও দিতে পারে, তবে এটি নিশ্চিতভাবে সতর্কবার্তা দেয় যে, ‘কিছু একটা ঠিক নেই’।” আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, ওজন হ্রাস এবং ক্ষুধাও ফুসফুস ক্যানসারের উপসর্গ। ধূমপান, ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস এবং অ্যাসবেসটস এক্সপোজারও ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
৬. অ্যাজমা: অ্যাজমাতে ভোগা নিশ্চিতভাবে গ্যারান্টি দেয় না যে আপনি ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন। ডা. ফ্লোরেস বলেন, ‘আপনার শৈশবে যদি অ্যাজমা নির্ণীত হয়, তবে ফুসফুস ক্যানসারের জন্য স্ক্রিনিং করানোটা ভালো আইডিয়া।’ অ্যাজমা হচ্ছে, ফুসফুস ক্যানসারের বিরল উপসর্গ, তাই অ্যাজমা হলে স্ক্যান করানো ভালো। ডা. ফ্লোরেস বলেন, “পালমোনোলজিস্ট প্রায়ক্ষেত্রে আপনার ফুসফুস শুনবে, বুকের শব্দ শুনবে এবং অ্যাজমা হিসেবে এর চিকিৎসা করবে। তাই ‘কোনো টিউমার নেই’ এটি নিশ্চিত হতে স্ক্যান করানো প্রয়োজন।”
৭. শরীর ব্যথা: যেহেতু ফুসফুস ক্যানসার প্রায়শ উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত উপসর্গ নিয়ে হাজির হয় না, তাই শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত এটি অনির্ণীত থেকে যেতে পারে। মাথাব্যথা, মাথাঘোরা ও ভারসাম্য সমস্যা অথবা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ব্যথা বোঝাতে পারে যে, ক্যানসার মস্তিষ্ক কিংবা স্পাইনাল কর্ডে ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, ত্বক ও চোখ হলদে হওয়া হতে পারে ক্যানসার যকৃতে ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ এবং শরীরের ওপর লাম্প নির্দেশ করতে পারে যে ক্যানসার ত্বক ও লসিকাগ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট