সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি মানে হাওয়া ভবনের দুর্নীতি, লুটপাট আর অগ্নিসন্ত্রাস। এই দলটি আবারও যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশ আবারও অন্ধকারে পড়বে। বাংলার মানুষ আর বিএনপির অন্ধকারে ফিরে যাবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আলোর পথে রয়েছে। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো আরও উন্নত হবে।’
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে তিনি এসব কথা বলেন। উপজেলার শক্তিপুরে ‘নূরজাহান ভবন’ চত্বরে বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মযহারুল ইসলামের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি।
আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সালের রক্তাক্ত ইতিহাস আর ২০১৩-১৪ সালের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা মানুষ ভুলে যায়নি। ক্ষমতায় থাকতে তারা সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়া, মঞ্জুরুল ইমাম, আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীর রক্ত ঝরিয়েছে। রক্তের নদী আর কান্নার দরিয়ায় ভাসিয়েছে বাংলার মানুষকে। এখন তারা আবার লোক দেখানো মায়াকান্না করছে।’
শেখ হাসিনাকে ‘মানবতার নেত্রী’ অভিহিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মহান আল্লাহপাক বঙ্গবন্ধুকে সৃষ্টি করেছেন বাংলার স্বাধীনতার জন্য, আর শেখ হাসিনাকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। শেখ হাসিনা এখন সারা বিশ্বের বিস্ময়। সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে তিনি উদারতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের তা চোখে পড়ে না।’
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘ফটোসেশনের জন্য তিনি (খালেদা জিয়া) একবার বিশাল গাড়িবহর নিয়ে কক্সবাজার গিয়ে শোডাউন করেছেন। তার দলের মহাসচিবও একবার গিয়েছিলেন। অথচ আমি ২৫ দিন রোহিঙ্গাদের পাশে ছিলাম। কোনটা মন থেকে আর কোনটা লোক দেখানো তা মানুষ এখন বোঝে।’
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি নেত্রী লন্ডনে চলে গেলেন, আন্দোলন থাকলো তার ভ্যানিটি ব্যাগে। এই বছর না সেই বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর। পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা, গাড়ি পোড়ানো, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও গাছ ধ্বংস করার আন্দোলনের সঙ্গে বাংলার মানুষ আর নেই।’
দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলের ভেতর প্রতিযোগিতা থাকবে, সেটা যেন অসুস্থ বা কলুষিত না হয়। যারা উন্নয়ন করবেন আর সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করবেন আগামী নির্বাচনে তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। দুঃসময়ে পাশে থাকা নেতাকর্মীদের কাছে টেনে নিন। দলে অনুপ্রবেশকারী আগাছাদের ঠাঁই দেবেন না। দল ক্ষমতায় না থাকলে পাঁচ হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
প্রয়াত প্রফেসর মযহারুল ইসলাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রক্তভেজা বাংলায় আমরা যখন এতিম, তখন অনেক সিনিয়র নেতার দরজায় কড়া নাড়লেও তারা দরজা খোলেননি। অথচ সেই সময়েও মযহারুল ইসলাম আমাদের সাহস জুগিয়েছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্য তিনি চোখের জল ফেলেছেন। এটা ভোলার নয়।’
প্রফেসর মযহারুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য প্রফেসর আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, মেরিনা ইসলাম কবিতা, সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি, হাসিবুর রহমান স্বপন এমপি প্রমুখ।
সভার আগে ওবায়দুল কাদের প্রয়াত প্রফেসর মযহারুল ইসলামের মাজার জিয়ারত করেন এবং প্রফেসর মযহারুল ইসলাম স্মৃতিস্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।