নিজস্ব প্রতিবেদক: তালাকনামা প্রত্যাহারের মাধ্যমে নতুন করে সংসার করার আশায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রী উম্মে শাহী আম্মানা শোভাকে অপহরণ করা হয়। তালাকনামা প্রত্যাহারের জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার শেখেরটেক রায়েরবাজার এলাকার একটি কাজী অফিসেও শোভাকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকেই পুলিশ শনিবার দুপুরে শোভাকে উদ্ধার করে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মাহবুবর রহমান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, কাজী অফিস থেকে শোভার সাবেক স্বামী সোহেল রানা ও জাহিদুল ইসলাম নামের মাইক্রোবাসের এক চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে রোববার দুপুরে শোভার প্রাক্তন স্বামী সোহেল রানাসহ গ্রেফতারকৃত তিনজনকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে হাজির করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) ইসমাইল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান জানান, এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় সোহেল রানার বাবাকেও গ্রেফতার করা হয়। তার নাম জয়নাল আবেদীন। তাকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ঢাকা থেকে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাজশাহী পুলিশের এই অভিযানে সহায়তা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সোহেল রানা পেশায় একজন আইনজীবী। নওগাঁর পতœীতলা উপজেলার নজিপুর গ্রামে তার বাড়ি।
পুলিশ কমিশনার জানান, রাবির বাংলা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) শেষবর্ষের শিক্ষার্থী শোভা নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি এলাকার আমজাদ হোসেনের মেয়ে। গত ডিসেম্বরে সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মাস-দুয়েক আগে শোভা তার স্বামীর কাছে তালাকনামা পাঠান। তালাকের বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ অবস্থায় তালাকনামা প্রত্যাহারের মাধ্যমে নতুন করে সংসার শুরুর আশায় শোভাকে অপহরণ করা হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন সোহেল রানা।
আরএমপি কমিশনার জানান, উদ্ধারকৃত শোভাসহ তার স্বামী ও মাইক্রোবাসচালককে শনিবার দিবাগত রাত ১টায় রাজশাহী নিয়ে আসা হয়। এরপর দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। তবে রিমান্ডের শুনানি হয়নি। আদালত তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার জানান, মেয়েটিকে নির্যাতন করা হয়েছে, এমন কথা তিনি জানাননি। তবে পুলিশের নিয়মানুযায়ী তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া আদালতে ওই ছাত্রীর জবানবন্দিও রেকর্ড করানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য তাপসী রাবেয়া হল থেকে বের হন শোভা। এ সময় হল গেট থেকে শোভাকে তার সাবেক স্বামী সোহেল রানাসহ সহযোগীরা একটি মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীর সন্ধান চেয়ে শুক্রবার বিকাল থেকে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ওই দিন সন্ধ্যায় মতিহার থানায় শোভার বাবা আমজাদ হোসেন ছয়জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। পরে শনিবার দুপুরে শোভাকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।