নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার মাদকের বিরুদ্ধে ‘অলআউট (সর্বাত্মক) যুদ্ধে নেমেছে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে। রোববার সচিবালয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।
মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান শুরুর পর গত কিছুদিন ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীরা নিহত হচ্ছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তথ্য অনুযায়ী, রোববার পর্যন্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের সংখ্যা ৯০ জনের মতো।
অভিযান কতদিন চলবে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই অভিযান চলবে। এটা বিশেষ বলে কোনো কিছু না। যে পর্যন্ত আমরা (মাদক) নিয়ন্ত্রণ করতে না পারব, সেই পর্যন্তই অভিযান চলবে। নির্দিষ্ট সময়সীমা এটার মধ্যে নেই।’
মাদক নিয়ন্ত্রণে বর্তমান পদ্ধতিটাকে সঠিক ও স্থায়ী পদ্ধতি মনে করছেন কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো বলেছি অলআউট (সর্বাত্মক) প্রচেষ্টা নিয়েছি। আমরা সামাজিক আন্দোলন করতে চাই। আমরা সবাইকে সম্পৃক্ত করতে চাই।’
‘আপনারা দেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সারা বাংলাদেশে মানুষ একত্রিত হয়েছিল জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনের জন্য। আমরা সমাজের সবাইকে ডাক দিয়েছি। আমি মনে করি (মাদকের বিরুদ্ধে) আমরা অলআউট যুদ্ধে নেমেছি। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা নেব। কোনো প্রচেষ্টাই ফাইনাল নয়। যা করলে আমরা মনে করি ভালো হবে, আমরা সেখানেই যাব।’
মাদকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ব্যর্থতা আছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন, ব্যর্থতা, সাফলতার প্রশ্ন এখানে আসে না। প্রশ্নটা হল আমরা মাদকের ভয়াবহতায় আক্রান্ত হয়েছি। এটা সত্যি, এটা বাস্তবতা। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। সেই অনুযায়ী আমরা সর্বাত্মকভাবে প্রচেষ্টা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সামাজিক প্রচেষ্টা গড়ে তুলছি। আমরা সমাজপতি, জনপ্রতিনিধি, জনগণকে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান করছি। সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে আমরা যে লিস্ট তৈরি করেছি, কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।’
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আসছে সারাদেশে ৪৫ জন মাদক সম্রাট রয়েছে। তারা এখনও ধরা পড়েনি- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আপনার কাছে যদি লিস্ট ওই রকম থাকে, ইনফরমেশন থাকে, আমাদের জানান। আমরা তো বলেছি- আমাদের জানান, আমাদের সমৃদ্ধ করুন। গোয়েন্দারা তো আমাদের (তালিকা) দিয়েছেই। তারপরও আপনাদের কাছে কোন লিস্ট থাকে তবে দিন। আমরা ব্যবস্থা নিই। আমাদের লিস্ট অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’
‘আমরা কাউকে বাদ দিচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রী জিরো টরারেন্সের কথা বলছেন, জিরো টরারেন্স মানেই হল আমরা সব কিছু করব। আমরা কাউকে বাদ দেব না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আপনারা সেই প্রমাণ পেয়েছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক্সম্পল হিসেবে সেই কাজটি দেখিয়ে দিয়েছেন। আমি কারো নাম বলে সেখানে যেতে চাই না। কাজেই কেউ সরকার দলীয় কিংবা বিরাট সমাজের অধিপতি সেইগুলো এখানে বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য সে অপরাধী, অপরাধ করলেই তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) রয়েছে। আইন বাস্তবায়নে অনেকগুলো প্রক্রিয়া থাকে, সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে এটা।’