রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪, ২১ আশ্বিন, ১৪৩১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মোটা চাল সরু করে ‘মিনিকেট’

editor
নভেম্বর ৮, ২০১৭ ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ডেস্ক রিপোর্ট: উত্তরের শষ্যভান্ডার ধানের জেলা দিনাজপুরে “মিনিকেট” চালের নামে প্রতারণা চলছে। এ চাল খেয়ে মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ মানব দেহে অক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগ-বালাই। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় এক অটোরাইস মিল ব্যবসায়ী এই “মিনিকেট” চাল বিক্রি করে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ওই ব্যবসায়ী অটোরাইস মিল বসিয়ে বর্জ ফেলে এলাকার পরিবেশ দূষণ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মজুদ বন্ধ করতে আমদানিকারক, আড়তদার, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে লাইসেন্স করতে নির্দেশ দিয়েছিলো খাদ্য অধিদপ্তর। অথচ সেই সময় পেরিয়ে গেলেও দিনাজপুরের বেশির ভাগ আমদানীকারকরা লাইসেন্স গ্রহণ করেননি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “মিনিকেট” নামে ধানের কোনো জাত নেই। বাংলাদেশ কিংবা ভারত-কোনো দেশেই মিনিকেট নামে ধানের কোনো জাতের অস্তিত্ব মিলেনি এখনো। মূলতঃ একশ্রেণির চালকল মালিক ভোক্তাদেরকে বোকা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মোটা চাল ছেঁটে সরু করে তা মিনিকেট নামে চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মোটা চাল মেশিনে চিকন করা হয়। তার নাম হয় মিনিকেট। এই চালের পুষ্টিগুণ কমে যায়। কাটিং, পলিশ ও কালার ঠিক রাখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন কেমিক্যাল যা মানব দেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি চরম উদ্বেগের। শুধু মুনাফার লোভেই ব্যবসায়ীরা দেশবাসীর প্রধান খাদ্যপণ্যের এই হাল করছে। এবং মানুষ না জেনে সেগুলোকে উৎকর্ষ ভেবে বেশি দামে কিনছে এবং খাচ্ছে।
‘১৯৯৫ সালের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের কৃষকদের মাঝে সে দেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন জাতের চিকন শতাব্দী ধান বীজ বিতরণ করে। মাঠপর্যায়ে চাষের জন্য কৃষকদেরকে এ ধান বীজের সঙ্গে আরো কিছু কৃষি উপকরণসহ একটি মিনিপ্যাকেট প্রদান করে ভারতীয় সরকার’।
যে প্যাকেটটাকে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বলতো ‘মিনি কিটস’ সেখান থেকেই সেই ধানের নাম হয়ে যায় ‘মিনিকেট’।আবার অনেকে বলেন ‘মিনিপ্যাকেটে করে দেয়ায় ভারতীয় কৃষকদের কাছে এ ধান শেষমেষ মিনিকিট বলে পরিচিতি লাভ করে। কৃষকরা মিনিপ্যাকেট শব্দটির মধ্য থেকে ‘প্যা’ অক্ষরটি বাদ দিয়ে মিনিকেট বলে পরিচয় দিতে শুরু করে’। তবে ঘটনা যাই হোক মিনিকেট নামে কোনো চাল বাজারে নেই এটাই সত্য কথা।
মোটা চালকে পলিশ করে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করা হচ্ছে।
অটোরাইস মিলে রয়েছে একটি অতি বেগুনি রশ্মির ডিজিটাল সেন্সর প্ল্যান্ট। এর মধ্য দিয়ে যেকোনো ধান বা চাল পার হলে সেটি থেকে প্রথমে কালো, ময়লা ও পাথর সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর মোটা ধান চলে যায় অটোমিলের বয়লার ইউনিটে। সেখানে পর্যায়ক্রমে ৫টি ধাপ পার হবার পর লাল কিংবা মোটা চাল সাদা রংয়ের আকার ধারণ করে। এরপর আসে পলিশিং মেশিনে। অতি সূক্ষ্ম এই মেশিনে মোটা চালের চারপাশ কেটে চালটিকে চিকন আকার দেয়া হয়। এরপর সেটি আবারও পলিশ ও স্টিম দিয়ে চকচকে শক্ত আকার দেয়া হয়। শেষে সেটি হয়ে যায় সেই কথিত এবং আকর্ষণীয় মিনিকেট চাল। আর চকচকে করার জন্য দেয়া হয় বিভিন্ন ক্যামিকেল যা মানব দেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ‘মিনিকেট’ নামে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত কোনো জাতের ধান নেই। বিআর ২৮, কল্যানী, স্বর্ণা, গুটিস্বর্ণা, লাল স্বর্ণা আইঅর-৫০, জাম্বু ও কাজল লতা জাতের ধান ছেঁটে মিনিকেট বলে বস্তায় ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে এ চালের ব্যাপক চাহিদার জন্য ‘মিনিকেট’ নামে প্রতারণার ব্যবসা চলছে জমজমাট ভাবে। এতে আখের গুছিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণি’র অসৎ ব্যবসায়ী।
তবে দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোছাদ্দেক হুসেন বলেছেন, মিনি কেট চাল রয়েছে। এ ধান কুষ্টিয়া অঞ্চলে চাষ হয়। মোটা চাল ছেঁটে সরু করে তা মিনিকেট নামে চালিয়ে যাচ্ছে এ অভিযোগ সত্য নয়। সাধারণ মোটা চাল মেশিনে চিকন করা হয় না। কাটিং, পলিশ ও কালার মেশানার অভিযোও সত্য নয়।
এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মজুদ বন্ধ করতে আমদানিকারক, আড়তদার, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে লাইসেন্স করতে নির্দেশ দিয়েছিলো খাদ্য অধিদপ্তর। অথচ সেই সময় পেরিয়ে গেলেও দিনাজপুরের বেশির ভাগ আমদানীকারকরা লাইসেন্স গ্রহণ করেননি। জেলায় এ যাবত গুটি কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর লাইসেন্স হলেও বেশির ভাগ আমদানিকারকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর মধ্যে খুচরা ব্যবসায়ী, পাইকারী ব্যবসায়ী ও আমদানীকারক রয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেছেন, এত চেষ্টার পরেও ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ২ অক্টোবর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম চালের আমদানীকারক, মজুতদার, আড়তদারসহ সকল ব্যবসায়ীকে নতুন করে লাইসেন্স নেওয়ার নির্দেশ দেন। এ ছাড়াও ১৫ দিন পরপর গুদাম ও স্টকের চাল, গমের হিসাব স্থানীয় খাদ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য বলা হয়। চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত লাইসেন্স করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
এছাড়া নিয়মানুযায়ী ধান, চাল, সয়াবিন, পামওয়েল, ডাল ও চিনি এই সাতটি পণ্যের সকল ধরণের ব্যসায়ীকে ফুড লাইসেন্স করতে হবে।

Please follow and like us:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial