আজকের প্রভাত ডেস্ক
অনেকেই আছেন যারা দিনের শেষে রাতে কাজ করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। সেটা পড়াশুনা কিংবা অন্য যে কোন কাজও হতে পারে। এভাবে দিনের পর দিন রাত জেগে কাজ করলে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। আমাদের শরীরের ভিতরে যে ঘড়ি আছে সেটাকে বায়োলজিকাল ক্লক বলা হয়। এই ঘড়িতেই ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে শুতে যাওয়া পর্যন্ত সময় নথিভুক্ত থাকে। অর্থাৎ শরীরকে কখন কোন কাজটা করতে হবে, তা মূলত এই বায়োলজিকাল ক্লকই নির্দেশ করে থাকে। এক্ষেত্রে যদি কেউ রাতে ঘুমনোর জয়গায় জেগে কাজ করা শুরু করে। তাহলে বায়োলিজকাল ক্লক বুঝে উঠতেই পারে না এমন পরিস্থিতিতে কী করবে? ফলে বিরূপ প্রভাব পরে শরীরের ওপর। এর ফলশ্রুতিতে প্রথমেই অনিদ্রা রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সেইসঙ্গে ধীরে ধীরে জটিল সব রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হঠাৎ মৃত্যুর আশঙ্কাও বাড়ে।
সম্প্রতি বায়োলিজকাল ক্লকের উপর গবেষণা চালিয়ে তিন মার্কিন গবেষক বলেছেন, বায়োলজিকাল ক্লককে মন মতো চালালে মারাত্মক বিপদ হয়! এক্ষেত্রে যে যে ঘটনাগুলি ঘটার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়, সেগুলি হল…
ক্যান্সারের প্রকাপ বৃদ্ধি পায়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্টে একথা প্রমাণিত হয়েছে, দিনের পর দিন রাত জাগলে শরীরের অন্দরে ক্ষয় এতটাই বেড়ে যায় যে সেই ফাঁক গলে ক্যান্সার সেল দেহের ভেতরে বাসা বাঁধার সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে
গবেষণায় দেখা গেছে, রাত জেগে কাজ করলে কর্টিজল হরমোনের মতো স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ মারাত্মক বেড়ে যায়। ফলে সারা রাত কাজ করার ক্ষমতা জন্মালেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে কমে যায়। এতে নানা রোগ ঘাড়ে চেপে বসতে সময়ই লাগে না। প্রসঙ্গত, স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পেলে মানসিক চাপও বাড়তে শুরু করে, যা শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।
ওজন বাড়তে থাকে
দিনের পর দিন রাতে জেগে থাকলে খাবার ঠিকমতো হজম হতে পারে না। ফলে একদিকে যেমন গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তেমনি ওজনও বাড়তে শুরু করে। আর একবার ওজন বাড়লে ধীরে ধীরে সুগার, প্রেসার এবং কোলেস্টেরলের সমস্যা প্রভৃতি রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। ফলে আয়ু চোখে পরার মতো কমে যায়।
গর্ভধারণে সমস্যা
শরীরের নিজস্ব ছন্দ বিগড়ে গেলে দেহের অন্দরে এমন কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন হতে থাকে যে তার সরাসরি প্রভাব পরে মা হওয়ার ক্ষেত্রে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মেয়েরা নিয়মিত নাইট শিফট করেন তাদের মিসক্যারেজ এবং প্রিটার্ম ডেলিভারি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কম ওজনের বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই মা হওয়ার পরিকল্পনা করলে ভুলেও রাত জেগে কাজ করবেন না।
চোট-আঘাত লাগার প্রবণতা বাড়ে
সারাদিন যতই ঘুমোন না কেন, রাতে ঘুম আসতে বাধ্য। এমন পরিস্থিতিতে মনোযোগ যেমন হ্রাস পায়, তেমনি শরীরের সচলতাও কমতে শুরু করে। ফলে অফিসে চোট-আঘাত লাগার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
স্মৃতিশক্তি কমে যায়
রাতের বেলা মস্তিষ্কের আরাম নেওয়ার সময়। তাই তো এই সময় দিনের পর দিন কাজ করলে ধীরে ধীরে ব্রেন পাওয়ার কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ডিপ্রেশন, হাইপোলার ডিজঅর্ডার, স্লো কগনিটিভ ফাংশন, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া সহ আরও নানা সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। কাজেই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রাত জেগে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।