নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের ৬৩তম সম্মেলনের (সিপিসি) সাধারণ অধিবেশনে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণের দাবি উঠেছে।
এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সিপিএ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলোর আইনসভায় মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিয়ে আলোচনা এবং দেশটির উপর চাপ প্রয়োগে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিসিতে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিএ চেয়ারপার্সন শিরীন শারমিন চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি জেনারেল আকবর খান।
এই পর্বে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ভারত ও চীনের অবস্থান সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে আসেন সিপিসির মিডিয়া তত্ত্বাবধান কমিটি। ওই কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগ সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদ সাংবাদিকদের তা জানান।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কটের অতীত, বর্তমান অবস্থা, বাংলাদেশের অবস্থান এবং গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সিপিএ’র অনেক সদস্য দেশ আগ্রহী ছিল, এজন্য সিপিএর অনুরোধে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ের পর ১৮টি দেশ আলোচনায় অংশ নেয়।
মাল্টা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, উগান্ডা, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ সিপিএ সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে একটি রেজুলেশন নেওয়ার দাবি করে।
নাবিল বলেন, দাবি ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএ চেয়ারপার্সন শিরীন শারমিন চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে সিপিএ নির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
একই সাথে মিয়ানমারকে চাপ দিতে সিপিএ সদস্য দেশগুলোর পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতনের মুখে গত ২৫ অগাস্ট থেকে ৬ লাখ ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারকে অনুরোধ জানিয়ে এলেও নিজ দেশের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশটির গড়িমসি রয়েছে।
সিপিসি সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে ভারত ও চীনের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় মাহমুদ আলীর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ভারত এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফরে এসে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। চীন রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য পাঠিয়েছে, তবে তাদের ভাষা ভিন্ন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দফা প্রস্তাব দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন।
আলোচনায় মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে সিপিএ’র একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়।
এ বিষয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, কোনো দেশ কক্সবাজার যেতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থা করব।
সংবাদ সম্মেলনে কাজী নাবিল বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিফিংয়ের সময় বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনকে গণহত্যা, জাতিগত নিধন বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের ‘থার্ড কমিটি’তে একটি আবেদন জমা দেওয়া আছে। বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সমর্থন জানানোর জন্য সিপিএ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী।