আজকের প্রভাত প্রতিবেদক : ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের বিশেষ উদ্যোগ ঢাকা হাব অব গ্লোবাল শেপারস কমিউনিটির আয়োজনে বুধবার, থেকে শুরু হয়েছে ‘শেপ সাউথ এশিয়া ২০১৮’ শীর্ষক চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এমপি।
সম্মেলনে ৬টি মহাদেশের ৩০টি দেশের ৫০টি শহরের ১০০ জন তরুণ নেতৃবৃন্দ আঞ্চলিক সম্পর্কের সমন্বয়কে তরাণ্বিত করার অঙ্গীকারের প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবে এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ কাঠামোর পুনর্বিন্যাস’ (শেপিং ইনক্লুসিভ সোসাইটিজ) প্রতিপাদ্য নিয়ে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ওপর আলোকপাত করে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নানা সুযোগ ও প্রতিকূলতার নানা বিষয় এ সম্মেলনে আলোচিত হয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মুহূর্তে বাংলাদেশের নানা প্রেক্ষিত ও প্রতিকূলতার ওপর সম্মেলনে জোর দেয়া হয়। রোহিঙ্গা সংকট, উৎপাদন, আর্থিক বিষয়, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই অবস্থা এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতে উদ্ভাবন সম্মেলন আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এমপি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গঠনে বিশ্বজুড়ে তরুণরা শেপার হিসেবে কিভাবে কাজ করছে, এটা জানা অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। গ্লোবাল শেপাররা দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত। তবে, এক্ষেত্রে, তাদের অনেক প্রতিকূলতা ও নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে; যেসব সমস্যা ও প্রতিকূলতা বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে। এশীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে টেকসই প্রবৃদ্ধিতে রূপান্তর একটি বড় ধরনের প্রতিকূলতা। এক্ষেত্রে, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি হতে হবে এবং প্রবৃদ্ধিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে এবং এর পাশাপাশি, বিস্তৃত পরিসরে অসাম্য ও বৈষম্যের বিষয়গুলোকে শনাক্ত করতে হবে।
এ নিয়ে ঢাকা হাব অব গ্লোবাল শেপারস কমিউনিটির কিউরেটর সোহারা মেহরোজ শচী বলেন, এ সম্মেলন আয়োজনে আমাদের লক্ষ্য ছিল বিশ্বের মেধাবী ও সম্ভাবনাময় সব তরুণদের সামনে বাংলাদেশের অপার সুযোগ ও সম্ভাবনা তুলে ধরা।
সম্মেলনে নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়িক ও উন্নয়ন খাতের নেতৃবৃন্দ এবং সামাজিক উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ২৫ জনের বেশি বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উৎপাদন নিয়ে আলোচনা করবেন। এর মধ্যে ‘মিট দ্য লিডারস’ ও ‘র্যাপিড টকস’ সেশনে শেপাররা বিশেষজ্ঞদের সাথে নিজেদের ধারণার আদান-প্রদান করবেন। চার দিনব্যাপী এ সম্মেলন আগামী ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের দিন শেষ হবে। পহেলা বৈশাখের মাধ্যমে বিশ্বের নানাদেশের শেপাররা বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ নিয়ে জানতে পারবেন।
২০ থেকে ৩০ বছর বয়সি বিশ্বের তরুণ নেতৃবৃন্দ ও উদ্ভাবকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিউনিটিই হচ্ছে ‘গ্লোবাল শেপারস’। বিশ্বজুড়ে শহরভিত্তিক হাবের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এ কমিউনিটির কিউরেটর হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঢাকা হাবটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। বর্তমানে ঢাকা হাবের অধীনে ২৪ জন শেপার রয়েছে। ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এ হাবের মাধ্যমে রাজধানীতে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্প হচ্ছে ‘তালগোল’। এ প্রকল্পটি খেলার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক শিশুদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরাণ্বিত করতে কাজ করছে। আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে ‘ইনভিসিবেলাস’। এ প্রকল্পটি সমাজে লৈঙ্গিক বৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে মাধ্যম হিসেবে চিত্রকলা ব্যবহার করছে। আরেকটি প্রকল্প ‘ট্রিলিওনিয়ার’ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন শহরে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। ঢাকা হাবের ‘ট্রিলিওনিয়ার’ প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রকল্প হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে এবং ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশগুলোর শহরে বনায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
‘শেপ সাউথ এশিয়া ২০১৮’- সম্মেলনটি আয়োজনে সহায়তা দিচ্ছে ইউনাইটেড গ্রুপ, সামিট পাওয়ার, হা-মীম গ্রুপ, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, বিকাশ, মোহাম্মদী গ্রুপ, বিটপি গ্রুপ, মাস্কো গ্রুপ, ডিমানি, মাইক্রোসফট, উই এবং পাঠাও।