আজকের প্রভাত ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের সংকট ‘আরও গভীর হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এ সংকট নিরসন না করা হলে সরকারের ভবিষ্যৎ খুব ভালো নয়।
রবিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে দলের মহাসচিব এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “উনাদের (সরকার) একটা ফলস ধারণা তৈরি হয়েছে যে, সংকট থেকে তারা উপরে উঠে গেছেন। আমি বলব, সংকট আরও গভীর করেছে। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংকট আরও গভীর হয়েছে, সরকারের সংকটও গভীর হয়েছে।”
সরকারকে সর্তক করে দিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা যদি এখনও তা উপলব্ধি না করেন, সংকট নিরসনের চেষ্টা না করেন, তাহলে ভবিষ্যত খুব ভালো না।”
মির্জা ফখরুল জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এখন জীবন নিয়ে লড়াই করছেন। তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি প্রায় হাসপাতালে যাচ্ছেন, চেকআপ শেষে আবার বাসায় ফিরে আসছেন। আসার পরও ২৪ ঘণ্টাই মেডিকেল কেয়ারের মধ্যে আছেন।
সরকারি হাসপাতালের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকারি হাসপাতালে কেউ গেছেন? বিশেষ করে ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালের অবস্থা অবিশ্বাস্য। হাসপাতালে ঢোকা যায় না এতো দুর্গন্ধ, এতো নোংরা, দালালদের অত্যাচার চিন্তা করা যায় না।
“হাসপাতালের চারপাশে নতুন নতুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এটা বড় ব্যবসা। এখান থেকে দালালরা এসে সরকারি হাসপাতাল থেকে ধরে নিয়ে যায় রোগী। এই হচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয়করণে উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যে কারণে ব্রেনডেইন হয়ে যাচ্ছে। যারা মেধাবী, যাদের নিজের যোগ্যতা আছে তারা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশই ঘটে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক কিংবা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে। অথচ এসব রোগ মোকাবেলায় সরকারের অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
“গত মার্চে সিপিডির একটি রিপোর্টেও জনস্বাস্থ্যের ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে উঠেছে। রিপোর্টে বলা হয়, দেশের প্রায় ১৩ কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে পারছেন না। মার্চেই বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ -বিএফএসএ বলেছে, দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ১৪ হাজার মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করছে। এই ক্যান্সারের মূল কারণ অনিরাপদ খাদ্য।”
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবৈধ সরকার কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে- প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তায় সরকার কেন এত উদাসীন? জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের নাগরিকদের পুষ্টিকর খাদ্য যোগান দেয়া, অনিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন করা সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কিন্তু সরকার সেটা করছে না।”
নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমদানি পণ্যের বিভিন্ন ক্ষতিকারণ উপাদান শনাক্ত হলেই বিভিন্ন দেশ ও জোট বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ রাষ্ট্রসংঘ কি ধরনের ভূমিকা গ্রহণ করেছে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশেরও উচিত দেশে আমদানি করা প্রতিটি পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পণ্যের মান যাচাই করে নেওয়া। কিন্তু বর্তমান তাবেদার সরকার আমদানি করা খাদ্যপণ্য যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে কিনা এ ব্যাপারে জনগণ যথেষ্ট সন্দিহান।
“আমদানি করা পণ্য যথাযথ পরীক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া গেলে প্রতিটি নাগরিককে নিজের এবং নিজেদের পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজ উদ্যোগেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাবেদার সরকারের ওপর ভরসা না করে নিজেই নিজের সাধ্যমত নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশীয় বিষয়ক সহকারি সচিব ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেখুন এসব আমাদের জিজ্ঞাসা না করে উনাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) জিজ্ঞাসা করুন। এসব নিয়ে আমরা ইন্টারেস্টেড না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগণের ওপরই আমাদের ভরসা, আমাদের পুরো আস্থা, সেই আস্থার উপরে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি।”
বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে সরকার মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দ্রুত সাজা প্রদানে যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা অবিলম্বে বন্ধের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।