নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে স্বর্ণ খাতের ওপর সরকারের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারের মান ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন ব্যবসায়ীরা। স্বর্ণ খাত জবাবদিহিহীন, হিসাব-বহির্ভূত, কালো বাজার নির্ভর। এই অবস্থায় স্বর্ণ খাতকে একটি পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামোর আওতায় আনা জরুরি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। রোববার সংস্থাটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে দৈনিক ২৫ কোটি টাকার স্বর্ণ লেনদেন হয়। চাহিদার সিংহভাগ স্বর্ণ আসে চোরাচালানের মাধ্যমে। চোরাচালানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে চোরাকারবারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির খুবই কম।
তিনি বলেন, স্বর্ণ খাতের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রয়োজন। টিআইবি তাদের গবেষণায় ১৫টি ক্ষেত্রে ৯০টি সুপারিশ করেছে। এই গবেষণার ভিত্তিতে একটি খসড়া নীতিমালা তারা সরকারকে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে, এই খাত সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরি করা হবে।
টিআইবির গবেষণায় বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থলবন্দর ও বিমান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একাংশের যোগসাজশ ও সম্পৃক্ততার স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। দেশে একটি সুষ্ঠু স্বর্ণ আমদানি নীতি না হওয়া এবং চোরাচালান বন্ধ না হওয়ার পেছনে চোরাচালান চক্র, স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একাংশের প্রভাব রয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়, দেশে স্বর্ণের চাহিদা ও জোগান নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বছরে স্বর্ণের চাহিদা সর্বনিম্ন ২০ টন থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টন। চাহিদার ১০ শতাংশ তেজাবি স্বর্ণ থেকে সংগ্রহ করা হয়। সে ভিত্তিতে প্রতিবছর নতুন স্বর্ণের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ১৮ থেকে ৩৬ টন।
গবেষণায় আরও বলা হয়, অভ্যন্তরীণ বাজারে বিভিন্ন ক্যারেটের যে গয়না বিক্রি করা হয় বাস্তবে তাতে কী পরিমাণ বিশুদ্ধ স্বর্ণ থাকে তা পরিবীক্ষণ ও তদারকির জন্য সরকার অনুমোদিত ব্যবস্থা নেই। ফলে অতিরিক্ত খাদ মিশিয়ে ও অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করে ক্রেতাদের প্রতারিত করার সুযোগ রয়েছে।
মো. রফিকুল হাসান, মো. রেযাউল করিম ও অমিত সরকার গবেষণাটি পরিচালনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল ইসলাম গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।