নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লেকহেড গ্রামার স্কুলের গুলশান ও ধানমন্ডি শাখা খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। লেকহেড স্কুল বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে আদালত এ নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ও ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, ‘আদালত স্কুল মালিক ও অভিভাবকদের করা দুটি রিটের ওপর জারি করা রুলগুলো যথাযথ ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে স্কুলটি বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্কুল খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনুমোদন ছাড়া ও জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার যে দু’টি অভিযোগ স্কুলের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে যদি কখনও তদন্ত করা হয় সেক্ষেত্রে স্কুলের পক্ষ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে বলে আমরা আন্ডারটেকিং দিয়েছি।’
এর আগে গত ৬ নভেম্বর গুলশান ও ধানমন্ডির দুটি শাখাসহ লেকহেড স্কুলের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যুগ্ম-সচিব সালমা জাহান স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে ঢাকা জেলা প্রশাসককে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে,সরকারের অনুমোদন না নেওয়া প্রতিষ্ঠানটি ধর্মীয় উগ্রবাদ, উগ্রবাদী সংগঠন সৃষ্টি,জঙ্গি কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষকতাসহ স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কর্মকাÐে যুক্ত আছে।
পরে ৯ নভেম্বর ওই স্কুল বন্ধের নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিন ও ১২ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পক্ষে দুটি রিট দায়ের করা হয়। রিট দুটির আংশিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন।
শুনানি শেষে বন্ধ স্কুলটি খুলে দিতে এবং স্কুলের মালিককে তার প্রতিষ্ঠান খোলা ও পরিচালনা করতে দেওয়ার জন্য কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চায়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কোনও প্রতিবন্ধকতা ছাড়া শিক্ষার্থীদের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়।
শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ওই ৩ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিটকারী অভিভাবকদের পক্ষে আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ শুনানিতে বলেন, ‘জঙ্গি তৎপরতা বা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে হঠাৎ স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের কেউ জঙ্গি কর্মকাÐের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনার সুযোগ আছে। তাছাড়া স্কুলটির মালিকানাও বদলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিনা নোটিশে এভাবে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীরা এখন কোন স্কুলে যাবে?’
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেন,‘স্কুলটির বিরুদ্ধে জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উঠেছে। এখানে শিক্ষা কার্যক্রমের আড়ালে উগ্র ধর্মীয় মতবাদ প্রচার হয় বলেও অভিযোগ আছে। এসবের ভিত্তিতে তদন্তও অব্যাহত রয়েছে। সেই সূত্রেই স্কুলটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।’
এসময় আদালত বলেন,‘স্কুলের সব শিক্ষার্থী জঙ্গি হলে সবাইকে আটক করেন। দুই-একজনের জন্য তো সব শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। তারা এখন কোথায় যাবে? কোথায় ভর্তি হবে? তাছাড়া শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ব্যবস্থাও করতে হবে।’
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের আর্জি রেখে মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়। পরে সোমবার (১৩ নভেম্বর) পুনরায় ওই রুলের উপর শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে মামলাটি আজ রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।